শেষ সময়ে জমছে না ঈদের বাজার, ছুটিতে আগেই বাড়ি ফিরেছেন ক্রেতারা

ঈদুল ফিতরের আগে শেষ সময়ে অনেকেই প্রিয়জনের জন্য উপহার ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে ভিড় করছেন বাজারে। তবে এবার আগেভাগেই ছুটি পাওয়ায় অনেকেই ইতোমধ্যে বাড়ি চলে গেছেন। ফলে ঈদের ঠিক আগে এসে বিক্রি কমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
গত দুই দিনে রাজধানীর নিউ মার্কেট, গাউছিয়া, ধানমন্ডি, মগবাজার, মৌচাক ও মিরপুর এলাকায় বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
শুক্রবার (২৮ মার্চ) বিকেলে মৌচাক মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতা থাকলেও সংখ্যাটি ঈদের সময়ের তুলনায় অনেক কম। অনেক দোকানদার অলস সময় পার করছিলেন। প্রসাধনীর দোকানগুলোতেও তেমন ভিড় চোখে পড়েনি।
মৌচাকের অনয় ফ্যাশনে ছেলেদের শার্ট-প্যান্ট বিক্রি করেন বিক্রেতা মোহাম্মদ সোহেল। বিকেল ৪টার দিকে সেখানে তিনজন বিক্রেতাকে অলস বসে থাকতে দেখা যায়। তিনি বলেন, "মনে হয় সবাই গ্রামে চলে গেছেন। শুক্রবার, তাও ঈদের দুই দিন আগে—এ সময়টায় সাধারণত এত ব্যস্ত থাকি যে কথা বলার সময়ও পাওয়া যায় না। এখন ক্রেতাই নেই। প্রথম ১০ রমজান ভালো বিক্রি হয়েছিল, কিন্তু শেষ দিকে বিক্রি কমে গেছে। গত বছরের তুলনায় এবার বিক্রি ২৫-৩০ শতাংশ কম।"
২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের ছুটি, এরপর বৃহস্পতিবার একদিন অফিস খোলা ছিল। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি এবং সরকারি ছুটির সঙ্গে মিলিয়ে এবার ঈদে টানা ৯ দিনের ছুটি মিলেছে। অনেক বেশকারি চাকরিজীবী বৃহস্পতিবার ও শনিবার ছুটি নিয়ে আগেই গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন। ঈদের ছুটি শেষে সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত খুলবে আগামী ৬ এপ্রিল, রোববার।
মৌচাক মার্কেটের অন্তত পাঁচটি প্রসাধনী দোকান ঘুরে জানা গেছে, সাধারণত শেষ সময়ে এসব পণ্যের বিক্রি বেশি হয়, তবে এবার সে চিত্র নেই। বিক্রেতা মনির হোসেন বলেন, "স্কুল-কলেজ আগেই ছুটি দিয়েছে, অনেকে পরিবার পাঠিয়ে দিয়েছেন গ্রামে। গ্রামের দোকান থেকেই কেনাকাটা করছেন। ঢাকায় যারা চাকরিরত ছিলেন, তারাও আগেভাগেই বাড়ি গেছেন। আমরা গত বছরের তুলনায় এবার ৫০ শতাংশ কম বিক্রি করেছি।"
মগবাজারের বিশাল সেন্টারের আল মোস্তফা পাঞ্জাবির দোকানের ক্যাশ ইনচার্জ আব্দুল মাজিদ বলেন, "শুক্রবার হলেও ক্রেতা নেই। ঈদ তো বটেই, এমনকি সাধারণ শুক্রবারের তুলনায়ও বিক্রি কম।"
তিনি বলেন, "উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অনেকেরই হয়তো কেনাকাটার সক্ষমতা কমে গেছে। অনেকেই শুধু বাচ্চাদের জন্য পোশাক কিনছেন।"
তবে গাউছিয়া ও নিউ মার্কেটে তুলনামূলকভাবে ভিড় বেশি দেখা গেছে। নূর ম্যানশন শপিং সেন্টারের বিক্রেতা আলমগীর জানান, "আমরা ৬৫০ থেকে ৩,০২৫ টাকার মধ্যে থ্রি-পিস বিক্রি করছি। এবার ক্রেতারা বেশি দামাদামি করছেন। আমরা কম লাভে পণ্য বিক্রি করছি।"
সায়েন্সল্যাব এলাকার পাঞ্জাবির দোকানগুলোতেও ছিল কিছুটা ভিড়। এক দোকানদার মোহাম্মদ রবিন বলেন, "বিক্রি গত ঈদের তুলনায় ২০ শতাংশ কম। মনে হচ্ছে, গ্রামের দোকানগুলোতে এবার বেশি বিক্রি হচ্ছে। আবার সরকারের পতনের পর নেতারা অনেকেই বাইরে চলে গেছেন, তারা তাদের কর্মীদের পোশাক উপহার দিতেন, কিন্তু এবার সেটা হয়নি।"
নিরাপত্তা শঙ্কায় কমেছে রাতের বেচাকেনা
ঈদ সামনে রেখে রাত পর্যন্ত বাজার খোলা থাকলেও বিক্রেতারা বলছেন, এবার গভীর রাতে ক্রেতার সংখ্যা কম। সর্বোচ্চ রাত ১০টা পর্যন্ত কিছুটা ভিড় দেখা গেলেও তারপরে বাজার ফাঁকা হয়ে যায়।
ধানমন্ডির হকার্স মার্কেটের এক শাড়ির দোকানদার বলেন, "আগে রাত ২টা পর্যন্ত দোকান খোলা থাকলেও এবার রাতে ক্রেতা কম। অনেকেই নিরাপত্তার কারণে রাত ১০টার পর বাইরে থাকেন না। চুরি-ছিনতাইয়ের ভয় থেকেই তারা বের হন না।"
গ্র্যান্ড প্লাজা শপিং মলের 'স্টাইল ব্লিস' দোকানের মালিক আছমা বেগম বলেন, "গত বছর চাঁদরাতে রাত ৩টা পর্যন্ত বিক্রি করেছি, এবার শেষ সময়ে ক্রেতাই নেই। নিরাপত্তা শঙ্কায় মানুষ রাতে মার্কেটে আসছে না।"
ঈদের আগে আর মাত্র দুই-তিন দিন হাতে রয়েছে। প্রতিবছর ঈদুল ফিতর উপলক্ষে কেনাকাটায় জমজমাট হয়ে ওঠে বাজার। নামকরা ব্র্যান্ডের বিক্রি আগের মতো হলেও সাধারণ মানের বিপণিবিতান ও ছোট দোকানগুলোর বিক্রি ২০–৩০ শতাংশ কমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে, দেশীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড 'ক্লোথেন'-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশিকুর রহমান তুহিন টিবিএসকে জানান, "বার্ষিক বিক্রির প্রায় ৫০ শতাংশই হয় ঈদুল ফিতরে, আর ঈদুল আজহায় হয় প্রায় ২০ শতাংশ। বাকি ৩০ শতাংশ বছরের অন্যান্য সময়, বিশেষ করে শীতকালে হয়ে থাকে।"
"এবারের ঈদের বিক্রি অন্যান্য সিজনাল ইভেন্ট যেমন—পহেলা বৈশাখের মতো মনে হয়েছে। আরেকটি বিষয় হলো, যারা উপহার দেওয়ার জন্য পাইকারি অর্ডার করতেন—তারাও এবার ছিলেন না," যোগ করেন তিনি।