রোজা শুরুর এক সপ্তাহ পর জমতে শুরু করেছে চট্টগ্রামের ঈদ বাজার

রোজা শুরুর এক সপ্তাহের মধ্যে ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন হাতে পেয়েছেন চাকরিজীবী ও শ্রমজীবীরা। তাই আর বোনাসের অপেক্ষা না করে, বেতন পেয়েই বিভিন্ন শপিং সেন্টারে ঈদের কেনাকাটা করতে ছুটছেন ক্রেতারা। ফলে রমজানের প্রথম সপ্তাহ থেকেই জমতে শুরু করেছে চট্টগ্রামের ঈদ বাজার।
তবে ১৫ রজমানের পর বেচাকেনা প্রত্যাশা অনুযায়ী পৌঁছবে বলে আশা ব্যবসায়ীদের।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম জেলার তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম মহানগর এবং জেলার সকল উপজেলায় পোশাকের দোকান আছে প্রায় ৬০,০০০। চট্টগ্রাম শহরে ১৫টি অভিজাত ও ৫৮টি সাধারণ বিপণিকেন্দ্র রয়েছে। চট্টগ্রাম নগর ও জেলা মিলিয়ে মার্কেট ভিত্তিক ১০১টি সংগঠন দোকান মালিক সমিতির আওতাভুক্ত।
টেরিবাজার: চট্টগ্রামে ঈদের কেনাকাটার কেন্দ্রবিন্দু
চট্টগ্রামে পাইকারি ও খুচরা বাজারের জন্য বিখ্যাত টেরিবাজার। সরেজমিনে বাজার ঘুরে দেখা গেছে– ঈদ উপলক্ষে বাহারি জামা, শাড়ি, পাঞ্জাবি, শার্ট-প্যান্ট, স্যুটের কাপড়, থানকাপড় তো আছেই, পাশাপাশি এখানে মিলছে জাকাতের কাপড়, বিছানার চাদর, পর্দার কাপড়সহ সব ধরনের কাপড়। রোজার শুরুতেই নারী ক্রেতারা কিনেছেন থান কাপড় ও থ্রিপিস।
চট্টগ্রামে শাড়ি, লেহেঙ্গা, পাঞ্জাবি ও কসমেটিকসের জন্য বিখ্যাত নিউ রাজপরী, সানা, শারীকা, মনেরেখ, নবারুণ ট্রেডার্সের মতো ওয়ানস্টপ শপিংমলগুলোর। এসব দোকানে ভারতের চেন্নাই, কলকাতা, দিল্লি ও জয়পুর থেকে শাড়ি আমদানি করা হয়েছে বলে জানান বিক্রয়কর্মীরা।
শুক্রবার সন্ধ্যায় টেরিবাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি দোকানেই ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করছেন সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।
কাপড়-জুতাসহ চট্টগ্রামে ঈদ বাজারের সবচেয়ে বড় মার্কেট রেয়াজুদ্দিন বাজার। এখানকার প্রায় ১৫ হাজার দোকানের ৫০ শতাংশই পাইকারি বিক্রেতা। এরমধ্যে হাসিনা শপিং, বিনিময় টাওয়ার, রহমান ম্যানসন, প্যারামাউন্ট সিটি ও সালেহ ম্যানসন পাইকারি কাপড় এবং জুতার জন্য বিখ্যাত। শবে বরাতের পর থেকে চট্টগ্রামের পাইকারি কাপড়ের বাজারে বিক্রি শুরু হয়ে গেছে।
বাজারজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ
টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুল মান্নান টিবিএসকে বলেন, "এবার শবে বরাতের পর থেকেই টেরিবাজারে ঈদের কেনাকাটা শুরু হয়ে গেছে। এই বাজারে ৮২টি মার্কেটে ২ হাজারের বেশি দোকান এখন অনেকটা উৎসবমুখর। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা তৎপর রয়েছি। দেশীয় পোশাকের পাশাপাশি এলসির মাধ্যমে আমদানি করা বিভিন্ন দেশের পোশাকও রয়েছে।"
রোজা শুরু হওয়ার প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বেতন পাওয়ায় ক্রেতাদের উপস্থিতি আগের যেকোনো বছরের তুলানায় এবার বেশি মনে হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
চট্টগ্রামের নিউ মার্কেটে টাঙ্গাইলের শাড়ির জন্য বিখ্যাত। ওই মার্কেটের দোকান মালিকরা জানিয়েছেন, টাঙ্গাইল, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, মাধপদী, নরসিংদীর বাবুর হাট, ঢাকার মিরপুর জামদানী পল্লীসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ঈদের জন্য শাড়ীর কালেকশন নিয়ে এসেছেন তারা। দিন যত যাচ্ছে, বিক্রিও তত বাড়ছে।
ঈদের কেনাকাটায় খলিফা পট্টি
চট্টগ্রাম নগরীর আন্দরকিল্লা এলাকা সংলগ্ন খলিফা পট্টি এলাকায় তৈরি হয় নতুন পোশাক। এখানকার ছোট বড় প্রায় ৩৫০ কারখানা এবং ১৫০টি শো রুমে প্রায় ৬,০০০ কর্মী এখন নতুন পোশাক তৈরিতে ব্যস্ত।
এক মাস আগে থেকেই শুরু হয়ে গেছে কারখানা শ্রমিকদের ব্যস্ততা। দেশি-বিদেশি ডিজানের পোশাক প্রস্তুত হয় এই কারখানাগুলোতে।
খলিফা পট্টি বণিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি নুরুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, "রমজান মৌসুমে প্রত্যেক সেলাই শ্রমিক প্রায় ৩০ হাজার টাকা আয় করতে পারেন। এখানকার কারিগররা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকারী ব্যবসায়ীরা এখান থেকে পোশাক নিয়ে যান।"
অনলাইনে ও মেলায় ঈদের কেনাকাটা
মার্কেট, শপিং মলের পাশাপাশি চট্টগ্রামের বিভিন্ন তারকামানের হোটেল, কমিউনিটি সেন্টার, উন্মুক্ত মাঠে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঈদ শপিং ফেয়ার। সেখানে লেডিস ও জেন্টস আইটেম এবং কসমেটিকসসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য বেচাকেনা হচ্ছে। মূলত অনলাইন-ভিত্তিক বিভিন্ন নারী উদ্যোক্তারা এসব মেলার বিক্রেতা।
চট্টগ্রাম ওমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির তথ্যমতে, চট্টগ্রামে ২,৫০০ ফ্যাশন ও বুটিক হাউজ রয়েছে। এরমধ্যে ১,০০০ প্রতিষ্ঠান নিজস্ব কারখানায় পোশাক তৈরি করে।
চট্টগ্রাম সম্মিলিত হকার্স ফেডারেশনের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম নগরীতে ২২ হাজার ভ্রাম্যমান দোকান (হকার) রয়েছে। এরমধ্যে ১৫ হাজার হকার পোশাক, জুতা, কসমেটিকস পণ্য বিক্রি করেন। একটি দোকানে ঈদ বাজারে গড়ে ৮ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হয়।