পণ্যের দাম কমিয়েও ছোট দোকানে ঈদের বিক্রি কম

ক্রেতা টানতে পণ্যের দাম কমানোর পরও ঢাকার ছোট পোশাক ও জুতার দোকানগুলোতে ঈদের বিক্রি প্রত্যাশার চেয়ে কম হচ্ছে।
মিরপুর, ফার্মগেট ও কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, আগের বছরের তুলনায় এবার বিক্রি ৩০-৫০ শতাংশ কমেছে। অনেকেই তাদের লক্ষ্যমাত্রার ৬০ শতাংশও বিক্রি করতে হিমশিম খাচ্ছেন।
মিরপুর-২-এর রাস্তার পাশে শার্ট-প্যান্টের দোকান আইকন ফ্যাশন। এবারের ঈদকে ঘিরে যে প্রত্যাশা ছিলো তার চেয়ে দোকানটিতে প্রায় ৪০ শতাংশ বিক্রি কম।
আইকন ফ্যাশনের দোকানি রাকিব হোসাইন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'গত বছরের তুলনায় এবারে বিক্রি অনেক কম। পণ্যের দাম আগের চেয়ে ১০-২০ শতাংশ কমিয়েও বিক্রি বাড়ছে না। এবারে আমরা পুরো ধরা। শেষ মুহূর্তে এসে প্রতিটি পণ্যে নূন্যতম ৫০ টাকা লাভ থাকলেই ছেড়ে দিচ্ছি।'
ফার্মগেটের পাঞ্জাবী ব্যবসায়ী ইদ্রিস মিয়াও বলেন, ক্রেতারা আগ্রাসীভাবে দরদাম করছেন।
'এবারে খুব একটা কাস্টমারই আসছে না। যারা আসেন, তারা ৮০০ টাকার পণ্যের দাম হাঁকান ৪০০ টাকা। অল্প কিছু লাভ হলেই পণ্য বিক্রি করে দিচ্ছি,' বলেন তিনি।
শুক্রবার (২১ মার্চ) মিরপুর-২, মিরপুর-১০, মিরপুর-১১, ফার্মগেট ও কারওয়ান বাজারের ঈদের পোশাক ও বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রির ছোট দোকানগুলো ঘুরে এমন চিত্রই দেখা যায়।
অনেক ব্যবসায়ীর বলছেন, পণ্যের দাম বাড়েনি, বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে কমার পরেও বিক্রি কম হচ্ছে।
মিরপুরে জুতার দোকান মৃদুল সুজ-এর দোকানি জাহিদ হাসান বলেন, 'আগে যেখানে দিনে ৭০ হাজার টাকার বেশি বিক্রি হতো, এবারে ৫০ হাজারও বিক্রি হচ্ছে না। অন্যান্য ঈদে এমন সময়ের মধ্যে বড় একটা অংশ বিক্রি হয়ে যায়। কিন্তু এবারে বিক্রির পিক টাইমই পেলাম না। এই শুক্র-শনিবারে বিক্রি না হলে ঈদের খরচ তোলাই কষ্ট হয়ে যাবে।'
মৃধা গার্মেন্টসের বিক্রয়কর্মী মো. জহিরুল ইসলামও বিক্রি কমার কথা জানিয়ে বলেন, 'আগে দিনে ৮০-৯০ হাজার টাকা বিক্রি হতো। এখন ৪০ হাজার হয়। আগের বছরের তুলনায় এবারে পণ্যের দাম কম। ৫০ টাকা লাভেই বিক্রি করে দিচ্ছি।'
তিনি আরও বলেন, ঈদ উপলক্ষে দোকানে কর্মচারীর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু যা বিক্রি হচ্ছে, সেটা দিয়ে বেতন-ভাতাতেই শেষ হবে।
ক্রেতারাও খরচ কমানোর কারণ হিসেবে আর্থিক চাপের কথা জানিয়েছেন।
মিরপুরে পরিবার নিয়ে কেনাকাটা করতে আসা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জিয়াউল হাসান টিবিএসকে বলেন, 'আগে ঈদে কেনাকাটা নিয়ে ৪০-৫০ হাজার টাকা বাজেট থাকত। কিন্তু এবারে শুধু পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্যদের জন্য ২০-২৫ হাজার টাকার মতো কেনাকাটা করব। আর্থিক পরিস্থিতি ভালো না।'
নতুন পোশাকের দোকান এক্সপোর্ট প্লাস ওয়ান-এর দোকানীনি ওমর ফারুক বলেন, 'অনেক প্রত্যাশা নিয়েই নতুন বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করেছি, কিন্তু আশানুরূপ বিক্রি হয়নি। সামনের যে কদিন আছে, এর মধ্যে ভালো বিক্রি না হলে খরচ মেটানোই দায় হবে।'
ফার্মগেটের কাপড় বিক্রেতা মো. রাসেলও একই উদ্বেগের কথা বলেন। 'দাম না বাড়লেও এবারের বিক্রি গত বছরের চেয়ে অনেক কম। অপেক্ষায় আছি শুক্রবার ও শনিবারের বিক্রি নিয়ে। কিন্তু আশানুরূপ গ্রাহক আসছে না।'
ফার্মগেটের নিউ আজমেরী শাড়ি অ্যান্ড বেডিং হাউজের সাইদুর রহমানও কেনাকাটার ধরনে পরিবর্তন আসার কথা জানান।
'আজকে শুক্রবার দেখে কাস্টমার কিছু আসছে। কিন্তু বিগত ঈদের মতো জমেনি বাাজার। আগে অনেক রাজনৈতিক নেতা ছিল, তারা এলে ১০০-২০০ কাপড় নিত জাকাতের জন্য। এবারে তো তেমন নাই। এখন দোকান খুলে বসে থাকি, কাস্টমার পাই না,' বলেন তিনি।
ফার্মগেটে রবিন ফ্যাশনে কাপড় নিয়ে দরাদরি করছিলেন শ্যামলী বেগম। তিনি জানান, এবারের ঈদে পর্যাপ্ত বাজেট নেই'
'তাই ছোট বোনকে একটা জামা কিনে দিতেই মার্কেটে এসেছি। বাকি সদস্যদের জন্য কেনাকাটার মতো এবারে আর্থিক অবস্থা নেই।'
রবিন ফ্যাশনের বিক্রেতা আবদুর রউফ খান বিক্রি কমার কথা জানিয়ে বলেন বলেন, 'এবারে বিক্রি অর্ধেকে নেমে গেছে। ক্রেতারা যারা আসছেন, তারাও খুব বেশি কেনাকাটা করছেন না। আগে যেখানে একজনেই ৪-৫টি ড্রেস কিনতেন সেখানে, তারা এখন একটি কিনছেন।'
ঈদের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি, ছোট দোকান মালিকরা শেষ মুহূর্তে বিক্রি বাড়ার ব্যাপারে আশাবাদী। কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতিতে বিক্রি বৃদ্ধি অনিশ্চিত।