প্রথমবারের মতো সন্দ্বীপবাসীর ফেরিতে করে ঈদযাত্রা

সন্দ্বীপ উপজেলার বাসিন্দা আবদুর রহমান জুয়েল গত ১৫ বছর ধরে চট্টগ্রামে গাড়ি চালান। প্রতি বছর ঈদ উদযাপনের জন্য তিনি ও তার পরিবার স্পিডবোট বা ট্রলারে সন্দ্বীপের মাইটভাঙ্গা এলাকায় যেতেন।
তবে, এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। নতুন চালু হওয়া সীতাকুণ্ড-সন্দ্বীপ ফেরি পরিষেবার মাধ্যমে আজ (২৭ মার্চ) বৃহস্পতিবার সকালে তিনি প্রথমবারের মতো নিজের গাড়িতে বাড়ি ফিরেছেন।
জুয়েলের মতো হাজারো সন্দ্বীপবাসী এখন প্রতিদিন ফেরি পরিষেবা ব্যবহার করছেন। এটি তাদের জন্য ঈদের উপহারস্বরূপ, যা ভ্রমণকে আরও নিরাপদ ও সুবিধাজনক করেছে।
সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে সীতাকুণ্ড-সন্দ্বীপ ফেরি পরিষেবার উদ্বোধন করেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। একই অনুষ্ঠানে ঢাকা-সন্দ্বীপ বিআরটিসি বাস পরিষেবাও চালু করা হয়।
পরিষেবা চালু হওয়ার পর থেকে যাত্রীবাহী বাস, ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল এবং পণ্যবাহী যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন উভয় ঘাটেই ফেরি পারাপারের জন্য অপেক্ষমাণ যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা যায়।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) জানিয়েছে, সবচেয়ে বেশি পারাপার হচ্ছে পিকআপ, মাইক্রোবাস, জিপ ও মোটরসাইকেল।
গত মঙ্গলবার ফেরি সার্ভিস ব্যবহার করেছে ১৩৪টি যানবাহন, যা ২৬ মার্চ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫১টিতে।
চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ রুটের এক প্রাইভেট কার চালক মো. জাভেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'ফেরি সার্ভিস চালুর পর থেকে আমি নিয়মিত যাত্রী পরিবহন করছি। চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে সন্দ্বীপে গাড়ি ভাড়া ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়।'
তিনি আরও বলেন, 'বর্তমানে ফেরি প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি ট্রিপ পরিচালনা করে। তবে যাত্রী ও যানবাহনের সংখ্যা বাড়ায় অতিরিক্ত ট্রিপ চালু করা প্রয়োজন।'
আজ সকালে (২৭ মার্চ) সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া ঘাটে ফেরির জন্য অপেক্ষমাণ পণ্যবাহী ট্রাক, বাস, প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেলের দীর্ঘ সারি দেখা যায়।
যাত্রী ও চালকরা নতুন এই ফেরি সার্ভিসে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আগের মতো উত্তাল জলপথে ঝুঁকি নিয়ে ভ্রমণের পরিবর্তে এখন তারা নিরাপদ ও আরামদায়কভাবে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন।
আবদুর রহমান জুয়েল বলেন, 'এই ফেরি পরিষেবা সন্দ্বীপবাসীর জন্য সত্যিকারের ঈদ উপহার। আগে ঈদে বাড়ি ফিরতে স্পিডবোট ও কাঠের ট্রলারে ঝুঁকি নিতে হতো। এখন আমরা পরিবারের সঙ্গে নিরাপদে ভ্রমণ করতে পারছি। তবে নির্বিঘ্ন ভ্রমণ নিশ্চিত করতে ফেরির সংখ্যা আরও বাড়ানো দরকার।'
৭৫০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপ বহুদিন ধরেই যোগাযোগ সমস্যায় ভুগছিল।
এর আগে প্রায় ৪ লাখ বাসিন্দাকে মূল ভূখণ্ডে পৌঁছাতে কুমিরা-গুপ্তছড়া সহ ছয়টি জলপথের ওপর নির্ভর করতে হতো। অনেকে ছোট ও অনিরাপদ নৌকায় ভ্রমণ করায় প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হতেন।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) উপ-পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, 'চাহিদার কারণে কপোতাক্ষ ফেরি বাঁশবাড়িয়া থেকে প্রতিদিন তিনবার চলাচল করছে। চালুর পর থেকে এটি ব্যাপক ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে।'
তিনি জানান, ফেরির সময়সূচি ৩১ মার্চ পর্যন্ত নির্ধারিত হয়েছে। এরপর আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে বর্ষাকালে কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত রাখা হতে পারে।
ফেরি ভাড়ার তালিকা
বিআইডব্লিউটিসি যানবাহনের ধরণভেদে ফেরির ভাড়া নির্ধারণ করেছে: বিআইডব্লিউটিসি যানবাহনের ধরণের উপর ভিত্তি করে ভাড়া তালিকা প্রকাশ করেছে: ১ টন পর্যন্ত পণ্যবাহী যানবাহন ১ হাজার ৩০০ টাকা, ছোট ট্রাক/লরি (৩ টন পর্যন্ত) ১ হাজার ৫০০ টাকা, মাঝারি ট্রাক (৩-৫ টন) ১ হাজার ৬০০ টাকা, বড় ট্রাক (৫-৮ টন) ২ হাজার টাকা, ভারী ট্রাক (৮-১১ টন) ২ হাজার ৭০০ টাকা, ১০ চাকার পণ্যবাহী ট্রাক (৩০ টন পর্যন্ত) ৫ হাজার ৭০০ টাকা, মিনিবাস ১ হাজার ৭৫০ টাকা, মাঝারি আকারের বাস ২ হাজার ৪৫০ টাকা, বড় বাস ২ হাজার ৬৫০ টাকা, মাইক্রোবাস, অ্যাম্বুলেন্স, বড় টেম্পো ১ হাজার ৪০০ টাকা, প্রাইভেট কার ৭৫০ টাকা, মোটরসাইকেল ১৫০ টাকা, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, ভ্যান, রিকশা ৪০০ টাকা, সাইকেল ৭৫ টাকা, ডিলাক্স-ক্লাস যাত্রী ভাড়া ১০০ টাকা, ইকোনমি-ক্লাস যাত্রী ভাড়া ৮০ টাকা।
সূত্র জানিয়েছে, সীতাকুণ্ড-সন্দ্বীপ ফেরি পরিষেবা ইতিমধ্যে ঈদের আগে ভ্রমণকারীদের জন্য স্বস্তি এনে দিয়েছে।
ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে স্থানীয়রা আশা করছেন, কর্তৃপক্ষ আগামী মাসগুলোতে ফেরির সংখ্যা বৃদ্ধি ও সময়সূচির উন্নয়ন করে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করবে।