ধানমন্ডিতে র্যাব পরিচয়ে ভবনে ঢুকে ডাকাতি, পুলিশের ওপর হামলা, গ্রেপ্তার ৬

রাজধানীর ধানমন্ডিতে 'র্যাব' পরিচয়ে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনায় সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের ছয় সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে নগদ ৪৫ হাজার টাকা, র্যাবের পোশাকসহ ডাকাতিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
ডাকাত দলের সদস্যরা নিরাপত্তাকর্মীদের মারধর করে ও বেঁধে রেখে ধানমন্ডির একটি ভবনের গয়নার দোকান ও কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকে প্রায় ৩৭ লাখ মূল্যের সমপরিমাণ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীকে অপহরণের চেষ্টা করলে পুলিশের ওপরও হামলা চালায় তারা।
ঘটনাস্থল থেকে চারজনকে আটক করে পুলিশ। তারা হলেন ফরহাদ বীন মোশারফ (৩৩), ইয়াছিন হাসান (২২), মোবাশ্বের আহাম্মেদ (২৩), ওয়াকিল মাহমুদ (২৬)। আর মামলা রুজুর পর তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় (২৭ মার্চ) ভোরে হাজারীবাগ থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত আবদুল্লাহ (৩২) ও সুমনকে (২৯) গ্রেপ্তার করা হয়।
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. মাসুদ আলম।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, রাজধানীর ধানমন্ডিতে এম এ হান্নান আজাদের 'অলংকার নিকেতন জুয়েলার্স' নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ভিকারুন্নেসা স্কুলের ধানমন্ডি শাখার গলিতে তার বাড়ির নিচতলায়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় এস এম সোর্সিংয়ের অফিস আছে। এছাড়া, ওই বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলায় একটি কনসালটেন্সি অফিস এবং পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলা নিয়ে তার ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট রয়েছে।
বুধবার (২৬ মার্চ) ভোর আনুমানিক ৪ টা ৪০ মিনিটের দিকে, তিনটি মাইক্রোবাস এবং একটি প্রাইভেটকারে অভিযুক্ত ডাকাতরা দলবদ্ধভাবে ওই বাসার সামনে এসে গেইটে দায়িত্বরত সিকিউরিটি গার্ডদের জানান, তারা র্যাবের সদস্য, এবং তাদের সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেটও আছেন।
তারা বাড়িতে অভিযান চালাতে চায়, তাই দ্রুত গেইট খুলতে বলে। তাদের কয়েকজনের গায়ে র্যাব লেখা জ্যাকেট পরা ছিল। সে সময় সিকিউরিটি গার্ড তাদের সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলে। এর পরই অভিযুক্ত ডাকাতরা সিকিউরিটি গার্ডদের গালাগালি করতে থাকে এবং গেইট না খুললে তাদের হত্যার হুমকি দেয়।
কয়েকজন গেইটের ওপর দিয়ে ওঠে জোর করে গেইট খুলে ফেলে। এরপর তারা সিকিউরিটি গার্ড, কেয়ারটেকার ও গাড়ি চালককে দঁড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে এবং বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে।
পুলিশ জানায়, ডাকাতরা নিচতলার অফিসের গেইট ভেঙে পিয়নকে মারধর করে এবং হত্যার ভয় দেখিয়ে তার কাছে থাকা নগদ ৪৫ হাজার ১০০ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এরপর তারা তাকে ভয় দেখিয়ে তৃতীয় তলায় গিয়ে এস এম সোর্সিংয়ের অফিসের গেইট ভাঙে। এ সময় গেইট ভাঙার শব্দ পেয়ে চতুর্থ তলায় থাকা এস এম সোর্সিংয়ের তিন অফিস সহকারী তৃতীয় তলায় নেমে আসে।
ডাকাতরা তাদেরও আটক করে মারধর করে এবং অফিস ও বাসার চাবি দিতে বলে। তারা চাবি নিয়ে তৃতীয় তলার অফিসের দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে এবং অফিসের ড্রয়ার ভেঙে নগদ ২২ লাখ টাকা লুট করে নেয়। এছাড়া, অফিসের বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়।
একটি দল চতুর্থ তলার অফিসের দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে এবং আলমারি ভেঙে নগদ ১৩ লাখ টাকা লুট করে নেয়। পরে, তারা মালিক এম এ হান্নান আজাদের পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। সেখানে তারা এক লাখ ৫০ হাজার টাকা, স্বর্ণের কানের দুল ও চেইনসহ আনুমানিক আড়াই ভরি স্বর্ণ (যার মূল্য তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকা) লুট করে নেয়।
ডাকাতরা মালিক এম এ হান্নানকে জোর করে নিচে নিয়ে গাড়িতে উঠানোর চেষ্টা করে। তবে ধানমন্ডি থানার একটি টহল টিম ওই বাড়ির সামনে হাজির হয়ে তাকে ডাকাতদের হাত থেকে উদ্ধার করে। এসময় ডাকাতরা তাদের হাতে থাকা ছেনি ও রেঞ্জ দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে। তাদের হামলায় পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হন। পরে, আশেপাশের লোকজনের সহায়তায় পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের পাশাপাশি পলাতক আটজন ও অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।