গ্রাহকদের সঞ্চয়পত্রের ৩৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ, পোস্টমাস্টারসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে সাত নারী গ্রাহকের ৩৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে পোস্টমাস্টার জসিম উদ্দিনসহ সাতজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) দুপুরে রামগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ভুক্তভোগী ফেরদৌসি আক্তার বিউটি মামলাটি দায়ের করেন। বাকি ছয় ভুক্তভোগী মামলার সাক্ষী হিসেবে রয়েছেন।
বাদীর আইনজীবী আনোয়ার হোসেন মৃধা জানান, আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল অভিযোগটি আমলে নিয়ে রামগঞ্জ থানার ওসিকে এফআইআর গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন রামগঞ্জ উপজেলার সাবেক পোস্টমাস্টার এবং বর্তমানে নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার পোস্টমাস্টার জসিম উদ্দিন। এছাড়া অভিযুক্তরা হলেন ব্যাংক এশিয়ার চ্যানেল ব্যাংকিং ডিভিশনের জেলা ব্যবস্থাপক নেয়ামত উল্যা, ব্যবসায়িক কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন, রামগঞ্জ ডাকঘরের সাবেক কর্মচারী আব্দুর রহিম, এজেন্ট ব্যাংকের উদ্যোক্তা আনোয়ার হোসেন, তার মেয়ে রুকাইয়া হোসেন ঋতু এবং আত্মীয় মনির হোসেন।
সূত্র জানায়, পোস্টমাস্টার জসিমের কাছে সঞ্চয়পত্র কিনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হন ভুক্তভোগীরা। তিনি ও অভিযুক্ত কর্মচারী আব্দুর রহিম জানান, সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে ব্যাংক হিসাব খুলতে হবে। পরে তাদের সহায়তায় ব্যাংক এশিয়ায় একাধিক হিসাব খোলা হয়।
২০২২ সালের ৪ জানুয়ারি ফেরদৌসি আক্তার বিউটি ১০ লাখ টাকা জমা দেন। এছাড়া নুরজাহান আক্তার সুমি ৩ লাখ, রাবেয়া সুলতানা রত্না ৫ লাখ, অনিমা রানী দাস ৫ লাখ, ইয়াসমিন সাবিনা ৪ লাখ, জান্নাতু ফেরদৌস ৩ লাখ ও নাজমুন নাহার ৪ লাখ টাকা জমা দেন।
প্রাথমিকভাবে মাসিক লভ্যাংশ পেয়ে ভুক্তভোগীরা প্রতারিত হন। তবে কয়েক মাস পর লভ্যাংশ বন্ধ হয়ে যায়। বিষয়টি জানতে চাইলে অভিযুক্তরা সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। ২০২৪ সালের মার্চে এজেন্ট ব্যাংকের উদ্যোক্তা আনোয়ার হোসেন হঠাৎ ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ করে আত্মগোপন করেন।
ফেরদৌসি আক্তার বিউটি জানান, প্রতারণার মাধ্যমে তার ১০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। তিনি দ্রুত টাকা ফেরতের দাবি জানান। ইয়াসমিন সাবিনা বলেন, পোস্টমাস্টার জসিম তাদের ব্যাংক এশিয়ার উদ্যোক্তা আনোয়ারের কাছে নিয়ে যান। সেখানে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে টাকা আত্মসাৎ করা হয়। ভুক্তভোগীদের মোট ৩৬ জনের ২ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
পোস্টমাস্টার জসিম উদ্দিন জানান, তিনি আনোয়ারকে সমর্থন করতেন না এবং গ্রাহকদের তার মাধ্যমে হিসাব খুলতে বলেননি। তিনি ব্যাংক এশিয়ার রামগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপককে বিষয়টি জানিয়েছিলেন এবং আনোয়ারকে প্রতারক হিসেবে সন্দেহ করতেন।
ব্যাংক এশিয়ার জেলা ব্যবস্থাপক নেয়ামত উল্যা জানান, আনোয়ার ডাকঘরের উদ্যোক্তা ছিলেন এবং সরকারি সঞ্চয়পত্রের নামে টাকা সংগ্রহ করেন। পরে তিনি প্রতারণার মাধ্যমে সেই অর্থ আত্মসাৎ করেন। ব্যাংক এশিয়ার কোনো রশিদে টাকা জমা দেওয়া হয়নি। আনোয়ারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
রামগঞ্জ থানার ওসি আবুল বাশার জানান, আদালতের নির্দেশনা পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।