সেনাবাহিনীর ওপর পূর্ণ আস্থা আছে, তবে ‘ক্যান্টনমেন্ট থেকে’ হস্তক্ষেপ মানব না: হাসনাত

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতি পূর্ণ সমর্থন ও আস্থা প্রকাশ করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে 'ক্যান্টনমেন্ট থেকে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে হস্তক্ষেপ' মেনে নেওয়া হবে না।
শনিবার (২২ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন। সমাবেশে আওয়ামী লীগের বিচার ও রাজনৈতিক দল হিসেবে এর নিবন্ধন বাতিলের দাবি জানানো হয়।
হাসনাত বলেন, 'যাদের কাজ সেনানিবাসে, তারা সেখানেই থাকুন। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর ওপর আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির ওপরও আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে। কোনো ব্যক্তির ওপর আমাদের ক্ষোভ নেই। আমরা বলতে চাই, এ প্রতিষ্ঠানের ওপর কেউ আঘাত করবেন না এবং দেশকে অস্থিতিশীল করবেন না। সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আপনাদের আপসহীন থাকা উচিত।'
তিনি আরও বলেন, 'কেউ কেউ দেশবাসীকে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে। আমাদের অবস্থান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নয়। আমাদের অবস্থান তাদের বিরুদ্ধে, যারা সেনাবাহিনীকে আমাদের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়।'

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে হাসনাত বলেন, 'আমরা আপনাদের কাছ থেকে যে দৃশ্যমান পদক্ষেপ আশা করেছিলাম, তা এখনও দেখতে পাইনি। আমরা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ চাই না, তবে আওয়ামী লীগ বাংলার জমিনে যে অপরাধ করেছে—যেভাবে মানুষের বাকস্বাধীনতা হরণ করেছে, খুন-গুম করেছে, হত্যার রাজনীতি চালিয়েছে—তার প্রকৃত বিচার করা হলে আগামী ৩০০ বছরেও তারা বাংলার মাটিতে ফিরে আসবে না।'
তিনি বলেন, 'বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।'
এনসিপি নেতা আরও বলেন, 'যতদিন এনসিপির একজন কর্মীও বেঁচে থাকবে, ততদিন বাংলার মাটিতে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে দেওয়া হবে না।'
হাসনাত বলেন, 'ভোটের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যায়নি। তারা পালাতে বাধ্য হয়েছে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে। বিশ্বের ইতিহাসে কোথাও নেই যে, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে যারা পালিয়ে গেছে, তাদের আবার নির্বাচনে ফিরিয়ে আনা হয়।'
ভারত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'এ দেশের নাটাই ছিল ভারতে, ঘুড়ি উড়েছে বাংলাদেশে। আমরা ৫ আগস্টের মাধ্যমে ঘুড়ির সুতা কেটে দিয়েছি। ভারতের আধিপত্যবাদ বাংলাদেশে চলতে দেওয়া হবে না।'
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেন, 'জুলাই চার্টারে আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করতে হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশের মানুষ জীবন দিয়ে আওয়ামী লীগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে। আমাদের শরীরে একবিন্দু রক্ত থাকা অবস্থায় আমরা তাদের স্বনামে রাজনীতি করতে দেব না।'

'আওয়ামী লীগের নৌকা বঙ্গোপসাগরে ভেসে গেছে, সেটি আর বাংলাদেশে ফেরানো যাবে না,' বলেন আখতার।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমালোচনা করে আখতার বলেন, 'আশ্চর্যের বিষয় হলো, সাত মাস পার হলেও সরকার দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারিক কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের নামে সাংগঠনিক রাজনীতি চলতে দেওয়া যাবে না। যত দ্রুত সম্ভব তাদের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে।'
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের কোনো ভালো নেতৃত্ব আছে—এ ধারণাও ভুল। 'তারা এখন পর্যন্ত কোনো হত্যাকাণ্ডের জন্য দায় স্বীকার করেনি বা অনুশোচনা করেনি। যারা-ই আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করবে, বাংলাদেশের মানুষ তাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।'
বিকেল সাড়ে তিনটায় সমাবেশ শুরু হয়। নেতাদের বক্তব্য শেষে, স্লোগান দিতে দিতে একটি মিছিল শাহবাগ থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে রওনা হয়।