‘গণহত্যার’ বিচারের আগে আ.লীগকে নির্বাচন করতে দেওয়ার আলোচনা-প্রস্তাবের বিপক্ষে এনসিপি: নাহিদ

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, বিচার অনিষ্পন্ন রেখে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়ার বিষয়ে যেকোনো ধরনের আলোচনা ও প্রস্তাব এনসিপি প্রত্যাখ্যান করে। আওয়ামী মতাদর্শ, দল এবং মার্কার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণ ৩৬শে জুলাইয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে। ফলে দল ও মতাদর্শ হিসেবে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করার সব অধিকার হারিয়েছে।
আজ শুক্রবার রাত ৮টায় রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ন টাওয়ারে সংগঠনটির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলন থেকে আওয়ামী লীগের বিচার ও এর নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে সারাদেশে ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় এনসিপি।
লিখিত বক্তব্যে নাহিদ দাবি করেন, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আওয়ামী লীগের বিচার চলাকালীন দলটি ও ফ্যাসিবাদের সহযোগী ব্যক্তি-সংগঠনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে।
নাহিদ বলেন, 'আমরা অত্যন্ত উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানের সাত মাস অতিবাহিত হলেও গণহত্যাকারী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের খুনিদের বিচারে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক কমিশনের প্রতিবেদনে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, জুলাই মাসে বাংলাদেশে সংঘটিত অপরাধ আন্তর্জাতিক অপরাধের শামিল।'
'আওয়ামী লীগের মানবতাবিরোধী অপরাধের ব্যাপারে এত সুস্পষ্ট আন্তর্জাতিক বক্তব্য থাকার পরও বিচারিক প্রক্রিয়ার ধীরগতি অত্যন্ত নিন্দনীয়। জাতীয় নাগরিক পার্টি অবিলম্বে জুলাই গণহত্যাসহ বিগত ফ্যাসিবাদী রেজিমে সংঘটিত গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচারে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে চায়', যোগ করেন তিনি।
সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের 'আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই'- বক্তব্যের নিন্দা জানান এনসিপির এই নেতা।
তিনি আরও বলেন, 'আত্মপ্রকাশের পর থেকে আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছি, কৃত অপরাধের বিচার, দায় স্বীকার, অনুশোচনা, পাপমোচন ব্যতীত আওয়ামী লীগের দল হিসেবে ক্রিয়াশীল থাকার পক্ষে যেকোনো ধরনের তৎপরতা ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসনের শামিল।'
আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে উল্লেখ করে এনসিপির এই নেতা বলেন, 'এই মাফিয়াগোষ্ঠীর রাজনীতিতে ফেরার যেকোনো প্রচেষ্টাকে এনসিপি প্রতিহত করার অঙ্গীকার করছে।'
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কোনো গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক দল নয়; বরং এটি একটি ফ্যাসিবাদী দল। দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়েছে। যে কারণে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী রেজিম উৎখাত হয়েছে। ফলত, আওয়ামী লীগ এ মুহূর্তে গণতান্ত্রিক ফ্রেমওয়ার্কের বাইরে অবস্থান করছে।
নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টার বেঁধে দেওয়া ডিসেম্বর-জুন টাইম ফ্রেম আমরা সমর্থন করছি। এই সময়ের মধ্যেই সংস্কার কার্যক্রম ও আওয়ামী লীগের বিচার সম্ভব। সেই ধাপ অতিক্রম করেই যেন নির্বাচন হয়।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একটি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ বা কার্যক্রম করতে পারবে কি-না, সেটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার সরকার ও বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোর। সেখানে সেনাবাহিনী কিংবা রাষ্ট্রীয় এমন কোনো প্রতিষ্ঠানের কোনো ধরনের মন্তব্য, পরিকল্পনা, সিদ্ধান্ত ও প্রস্তাবনা দেওয়ার এখতিয়ার নেই।
তিনি বলেন, আমরা মনে করি, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলো রাজনৈতিক মহলই নেবে এবং সেটা গণতান্ত্রিকভাবেই হবে। আমরা সামনে সেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াতেই উত্তরণ করতে চাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের প্রচেষ্টার কথা শোনা যায়। বিদেশি শক্তিগুলোরও এ ব্যাপারে সমর্থন তৈরির চেষ্টা দেখা যাচ্ছে। আমরা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনে দেশি-বিদেশি প্রচেষ্টার তীব্র নিন্দা জানাই।
এর আগে আজ বিকেলে 'দেশের চলমান রাজনীতি' ও 'দেশের সার্বিক পরিস্থিতি' নিয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনের ডাক দেয় সংগঠনটি।