আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাকাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ-অবস্থান

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও জুলাই গণহত্যার বিচার দাবিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে আজ শুক্রবার বিভিন্ন সময়ে ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে একই দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি করেছেন শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো পরিকল্পনা নেই—প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এমন বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে এবং আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবিতে আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন ছাত্র-জনতা। ইনকিলাব মঞ্চ ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ব্যানারে পৃথকভাবে তারা এ কর্মসূচি পালন করেন।
আজ জুমার নামাজের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে ইনকিলাব মঞ্চ। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিন, শ্যাডো, সূর্য সেন হল, ভিসি চত্বর হয়ে রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে শেষ হয়।
অন্যদিকে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের মিছিলটি মধুর ক্যানটিন, শ্যাডো, হলপাড়া, রাজু ভাস্কর্য হয়ে কেন্দ্রীয় মসজিদের দিকে যায়।
মিছিলে 'আওয়ামী লীগের বিচার চাই', 'আওয়ামী লীগের গদিতে, আগুন জ্বালো একসাথে', 'একটা একটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জেলে ভর', 'ইউনূস সাহেবের বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে', 'গণহত্যার বিচার চাই', 'অবিলম্বে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে', 'আওয়ামী লীগের বিষদাঁত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও', 'আওয়ামী লীগ নিপাত যাক' ইত্যাদি স্লোগান দেন।
পাশাপাশি ফিলিস্তিনে যুদ্ধবিরতির চুক্তি লঙ্ঘন করে ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদেও নানা স্লোগান দেন তারা।
মিছিল থেকে তারা আওয়ামী লীগকে গণহত্যাকারী সংগঠন হিসেবে অবিলম্বে নিষিদ্ধ করার দাবি জানান এবং আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত রাজপথে থাকার ঘোষণা দেন তারা।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদী বলে, ইসরায়েল এবং এশিয়ার ইসরায়েল ভারতের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
তিনি আরও বলেন, 'আওয়ামী লীগকে নিয়ে নির্বাচন করতে চাইলে বাংলাদেশে রক্তের বন্যা বয়ে যাবে। দুই হাজারের বেশি শহিদ এবং হাজার হাজার আহতের রক্তের শপথ, আমাদের দেহে এক বিন্দু রক্ত থাকতে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে দেব না। আওয়ামী লীগ মানেই খুনি।'
এর আগে বৃহস্পতিবার রাত দেড়টায় প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য (আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিকল্পনা নেই) প্রত্যাহারের দাবিতে এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে অবিলম্বে দলটিকে নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
আজ শুক্রবার (২১ মার্চ) দুপুর সোয়া ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক সংলগ্ন প্রধান ফটকের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
মিছিলে 'আমার সোনার বাংলায় খুনি লীগের ঠাঁই নাই', 'অবিলম্বে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে হবে', 'হাসিনার দোসরেরা হুঁশিয়ার সাবধান' ইত্যাদি বলে স্লোগান দেন।
সমাবেশে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম বলেন, 'যেই ফ্যাসিস্ট দল এদেশে একাধিক গণহত্যা চালিয়েছে, তাকে নিষিদ্ধ করার জন্য আর কিছুর প্রয়োজন নাই। ৫ আগস্ট বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা শেখ হাসিনাকে বিদায় করার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখ্যান করেছে।'
তিনি বলেন, 'অন্তর্বর্তী সরকারকে বলতে চাই, আপনারা যদি আওয়ামী লীগকে ফেরত আনার চেষ্টা করেন, তাহলে ছাত্র-জনতা কত ভয়ঙ্কর হতে পারে তা আপনারা '২৪ এ দেখেছেন।'

সেনাবাহিনীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, 'আপনারা যদি ঢাকার বাইরের কোনো এজেন্সির প্রেসক্রিপশনে চলতে চান, আমরা আপনাদের ছেড়ে কথা বলব না। আমরা ভুলি নাই ১৯ জুলাই মোহাম্মদপুরে আপনারা কীভাবে আমাদের ওপর গুলি চালিয়েছেন। আমরা ভুলি নাই ৩ আগস্ট কীভাবে আমাদের ওপর গুলি চালিয়েছেন। আমরা ভুলি নাই ওয়াকার সাহেব ৫ আগস্ট কীভাবে শেখ হাসিনাকে সেইফ এক্সিট দিয়েছেন।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা সবকিছুর বিচার করব। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের বিষয়ে আপনি যদি কোনো রকম বাধা প্রদান করেন, ছাত্র নেতৃত্বদের ভয় দেখান, তাহলে আপনার আত্মীয় যেই পথে গেছে, আপনাকেও সেই পথে পাঠিয়ে দেব।'
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে উদ্দেশ্য করে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, '১৬ বছরে হাসিনা যে মসনদ গড়েছিল, দেশের ছাত্র-জনতা মাত্র ৩৬ দিনে সেই মসনদ ভেঙে দিয়েছে৷ আপনি যদি জনগণের রায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করেন, তাহলে আমরা আপনার বিরুদ্ধে যেতে বাধ্য হবো।'
শাখা ছাত্র শিবিরের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'এদেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি চলতে দেওয়া মানে শহিদদের রক্তের সাথে বেঈমানি করা। শহিদদের রক্তের ওপর দিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি চলবে দেওয়া হবে না। আমরা খুব স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, আমাদের শরীরে এক ফোটা রক্ত থাকা পর্যন্ত বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি চলবে না।'
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ-সমাবেশ
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ও জুলাই গণহত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে রাজশাহীর মুক্তিকামী ছাত্র-জনতা। শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়।

মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেট হয়ে তালাইমারী গিয়ে শেষ হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
মিছিল শেষ সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ এবং জুলাই গণহত্যার জন্য তাদের বিচার দাবি করেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, 'আওয়ামী লীগকে বাংলার মাটিতে রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না। আমরা জুলাই ভুলি নাই, যদি জুলাইয়ের মতো আরও একটিবার জুলাইয়ের মতো নামতে হয় তাহলে দলমত নির্বিশেষে আওয়ামী লীগের প্রশ্নে আমরা মাঠে নামব।'
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অবস্থান
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি করেছেন।
এ সময় সহ-সমন্বয়ক নাহিদ হাসান, তানভির মণ্ডল, ইয়াশিরুল কবীর, ইসমাইল রাহাতসহ সমন্বয়ক পরিষদের অন্য সদস্যরা এবং শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

শিক্ষার্থীরা বলেন, আওয়ামী লীগকে কোনোভাবেই পুনর্বাসন করলে ছাত্র জনতা তা মেনে নেবে না। যদি এমন কিছু হয়, আমরা কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলব। আমরা রাস্তায় ছিলাম, আছি, থাকব— আমরা আওয়ামী লীগকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ চাই এবং তা করতেই হবে।
মধ্যরাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ-সমাবেশ
এদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে দলে দলে মিছিল নিয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের সামনে জড়ো হন।
এ সময় তারা 'চব্বিশের বাংলায়, আওয়ামী লীগের ঠাঁই নাই', 'জ্বালো রে জ্বালো, আগুন জ্বালো', 'আওয়ামী লীগের গদিতে, আগুন জ্বালো' ইত্যাদি স্লোগান দেন।

শিক্ষার্থীরা বলেন, গত ১৬ বছর ধরে যারা ফ্যাসিবাদ কায়েম করে গুম, হত্যা, নিপীড়ন চালিয়েছে এবং ছাত্র-জনতাকে পাখির মতো শহীদ করেছে, তাদের পুনর্বাসন ছাত্র-জনতা মেনে নেবে না। তাদের পুনর্বাসন করা হলে আরেকটা জুলাই হবে।
তারা বলেন, জুলাইয়ের আহতরা এখনো হাসপাতালে কাতরাচ্ছে, কিন্তু এতদিনেও আওয়ামী লীগের বিচার করতে পারেনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন চট্টগ্রাম প্রতিনিধি, রাজশাহী প্রতিনিধি, কুষ্টিয়া প্রতিনিধি ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।