বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন: ত্রিমুখী বিরোধে বরিশালে অবরুদ্ধ নাহিদ, বের হলেন পুলিশি সহায়তায়

বরিশালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) সন্ধ্যায় বরিশাল ক্লাব মিলনায়তনে এই ঘটনা ঘটে।
এ সময় সংগঠনের বিবাদমান পক্ষগুলোর মধ্যে হাতাহাতি ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশের সহায়তায় মিলনায়তন থেকে বের হন নাহিদ ইসলাম।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইফতারের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা ও মহানগর কমিটির সঙ্গে মতবিনিময় করছিলেন নাহিদ ইসলাম। এ সময় মহানগর কমিটির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম শাহেদ ও জেলা কমিটির সদস্য সচিব এস এম ওয়াহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তোলেন সাধারণ কর্মীরা।
একপর্যায়ে মতবিনিময় সভা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং তর্কাতর্কি থেকে হাতাহাতিতে রূপ নেয়। সংগঠনের একাংশের নেতাকর্মীরা নাহিদ ইসলামের সামনেই মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন।
পরিস্থিতি সামাল দিতে মাইকে সবাইকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানালেও বিশৃঙ্খলা থামানো সম্ভব হয়নি। এ সময় মাইকে ঘোষণা করা হয়, 'বিশৃঙ্খলাকারীদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হবে।'
একপর্যায়ে নাহিদ ইসলাম দোতলা থেকে নিচে নামার চেষ্টা করলে সংগঠনের একাংশের কর্মীরা বরিশাল ক্লাবের মূল গেট আটকে রেখে স্লোগান দিতে থাকেন। উপস্থিত অনেকে 'ভুয়া ভুয়া' বলে স্লোগান দেন।
সংগঠনের এক কর্মী হৃদয় বলেন, 'বরিশাল জেলা ও মহানগর কমিটির নেতৃত্ব স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে সংগঠন চালাচ্ছে। আমরা আমাদের অভিযোগ দলীয় প্রধানের কাছে জানাতে চেয়েছিলাম, কিন্তু বাধা দেওয়া হয়।'
'তাই আমরা গেট আটকে রাখি এবং দাবি জানাই, নাহিদ ভাই আমাদের কথা শুনে তারপর চলে যাবেন,' বলেন তিনি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মহানগর কমিটির নেতা জোবায়ের কাইয়ূম বলেন, 'শহিদুল ইসলাম শাহেদ ভাই ও ওয়াহিদুর রহমান ভাই নিজেদের মতো করে সংগঠন চালান। কমিটির অন্য সদস্যরা কোনো সুবিধা পান না।
আমরা যারা সাধারণ, তারা সবসময় চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট ধারণ করি, অন্যায়ের আশ্রয় নেব না। তাই প্রতিবাদ জানিয়েছি।'
তিনি আরও বলেন, 'অনেক দিন ধরেই এ বিরোধ চলছিল। আমরা প্রতিবাদ জানালে আমাদেরকে অভ্যন্তরীণ মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বের করে দেওয়া হয়।'
নাহিদ ইসলাম বরিশালে এলে তার সঙ্গে তারা কথা বলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাদের সুযোগ দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন কাইয়ূম। 'একপর্যায়ে শাহেদ ভাইয়ের অনুসারী যুগ্ম আহ্বায়ক সুমি হকের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। আমরা প্রতিবাদ জানাই, যা পরে দ্বন্দ্বে রূপ নেয়।'
এদিকে জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহানগর আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম শাহেদ অভিযোগ করেন, অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য একদল অনুপ্রবেশকারী ঢুকেছিল।
'তারা পরিকল্পিতভাবে নাহিদ ইসলামকে অপমান করেছে। এর প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা রাতে নগরের আমতলা মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন,' বলেন তিনি।
বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, 'আমাদের টহল টিম বরিশাল ক্লাব সংলগ্ন এলাকায় ছিল। হট্টগোল শুনে গিয়ে দেখা যায়, ক্লাবের মূল ফটক বন্ধ করে রেখেছেন কিছু নেতাকর্মী।'
'পরে পুলিশ গিয়ে গেট খুলে দিলে নাহিদ ইসলামকে বহনকারী গাড়িসহ মোট তিনটি গাড়ি নিরাপদে বেরিয়ে যায়,' বলেন তিনি।