বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবে চীনের সোলার প্যানেল জায়ান্ট লোংগি

বিশ্বের সর্ববৃহৎ সোলার প্যানেল প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান লোংগি বাংলাদেশে সোলার প্যানেল উৎপাদনে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চীনা জায়ান্টটি এজন্য এদেশে একটি অফিস খুলবে বলেও প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছেন ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।
রাষ্ট্রদূত জানান, বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে গত ডিসেম্বর মাসেই চীনের একাধিক শীর্ষ সোলার প্যানেল প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সফর করেন।
অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশকে একটি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের হাবে পরিণত করার পরিকল্পনা করছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এজন্য চীনের সোলার প্যানেল প্রস্তুতকারকদের বাংলাদেশে কারখানা স্থানান্তরের আহ্বান জানান। এরপরেই চীনা কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তারা বাংলাদেশে এসেছিলেন। এরমধ্যে লোংগি-সহ অন্তত দুটি চীনা কোম্পানি বাংলাদেশে কারখানা ও অফিস খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও জানান রাষ্ট্রদূত।
ইয়াও ওয়েন বলেন, 'তাঁরা বাংলাদেশে খুব শিগগিরই বিনিয়োগ করবে।'
গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর থেকে বাংলাদেশে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোই সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করছে বলেও প্রধান উপদেষ্টাকে জানান ইয়াও ওয়েন।
তিনি বলেন, চীনা কোম্পানিগুলোর জন্য নির্ধারিত একটি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল খুব শিগগিরই কাজ শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে, চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো এদেশে বিনিয়োগ করার জন্য এগিয়ে আসছে।
প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন চীন সফর, বিশ্বস্ত ও বন্ধুপ্রতীম দুই দেশের অর্ধ শতকের সম্পর্কের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এসময় বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগকে স্বাগত জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান পশ্চিমা বিশ্বের বাজারে রপ্তানি করতে চায়— তাদের জন্য শীর্ষ উৎপাদন কেন্দ্র হতে পারে বাংলাদেশ। তিনি চীনের হাসপাতাল চেইনগুলোকে বাংলাদেশে উচ্চ মানের ক্লিনিক স্থাপনসহ যৌথ উদ্যোগে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র নির্মাণের অনুরোধ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন। তাই চীনের হাসপাতাল চেইনগুলোর এখানে হাসপাতাল নির্মাণের অনন্য সুযোগ রয়েছে।'
ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত এসময় প্রধান উপদেষ্টাকে বলেন, কুনমিং সিটিতে চারটি ডেডিকেটেড হাসপাতালে বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা সেবা নেওয়ার সুযোগ দিচ্ছে চীন। গত সপ্তাহেই বাংলাদেশ থেকে একদল রোগী চীনে চিকিৎসা সেবা নিতে গেছেন।
ইয়াও ওয়েন জানান, চীন সফরকালে প্রধান উপদেষ্টাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়, যা বিশ্বের অন্যতম সেরা উচ্চ বিদ্যাপীঠ। এই উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রধান উপদেষ্টা ভাষণও দেবেন।
প্রধান উপদেষ্টার এটিই প্রথম দ্বিপাক্ষিক বিদেশ সফর। চীন সফরকালে তিনি বাওয়াও ফোরামে অংশ নেবেন ও বক্তৃতা দেবেন। বাওয়াও ফোরাম প্রাচ্যের ডাভোস নামেও খ্যাত। যেখানে বিশ্বের শীর্ষ ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও প্রধান নির্বাহীরা বৈশ্বিক নানান বিষয়ে আলোচনা করেন।
চীন সফরে 'এশিয়া ইন এ চেঞ্জিং ওয়ার্ল্ড: টুওয়ার্ডস এ শেয়ার্ড ফিউচার' শীর্ষক আয়োজনে বক্তব্য রাখবেন ড. ইউনূস। একই সেশনে তাঁর সঙ্গে বক্তব্য রাখবেন চীনের ভাইস প্রিমিয়ার।
আগামী ২৮ মার্চ চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে প্রধান উপদেষ্টা বৈঠক করবেন। বৈঠকের পরে দুই দেশ একটি যৌথ বিবৃতি প্রদান করবে।