বরিশালে ধর্ষণচেষ্টার আসামিকে পিটিয়ে হত্যা

বরিশালে ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামিকে পিটিয়ে হত্যা করেছে স্থানীয়রা।
শনিবার (১৫ মার্চ) বিকালে বরিশাল নগরীর ধান গবেষণা সড়কে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতের নাম সুজন হাওলাদার (২৪)। তিনি ওই এলাকার মনির হোসেনের ছেলে।
পুলিশ জানিয়েছে, চার বছরের এক শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে গতকাল সুজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়। মামলার খবর পেয়ে গতকালই স্থানীয়রা সুজনকে ধরে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করে।
জানতে চাইলে বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতয়ালী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মো. মিরাজ বলেন, 'আমরা ৯৯৯ নম্বরে কল পেয়ে সন্ধ্যার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে সুজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।'
তিনি আরও বলেন, 'মূলত মব সৃষ্টি করে সুজনকে গণপিটুনি দেওয়া হয়েছে। তবে থানায় কেউ মামলা দিলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।'
সুজনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে সুজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় নতুন তথ্য সামনে এনেছে তার পরিবার।
সুজনের পরিবার বলছে, ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা 'সালিশের জন্য' দাবি করা ২০ হাজার টাকা না দেওয়ায় স্থানীয় বাচ্চু নামে একজন সহযোগীদের নিয়ে সুজনকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন।
নিহতের পিতা মনির হোসেন বলেন, 'শুক্রবার পাশের ঘরের লোকজন অভিযোগ আনেন, আমার ছেলে চার বছরের শিশুকে ধর্ষণচেষ্টা চালিয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ আসে ঘটনাস্থলে। পরিবার থেকে ওইদিন কোনো অভিযোগ থানায় দেয়নি।'
'শনিবার দুপুরে থানায় মামলা করে। তবে শুক্রবার রাতে এলাকার বাচ্চু দোকানদার ৫০ হাজার টাকা চায়। বলে, ধর্ষণচেষ্টার যে ঘটনা ঘটেছে তা সালিশি করে দেবে। আমার কাছে অত টাকা ছিল না। বলেছি, টাকা দিতে পারব না। তখন বাচ্চু বলে গেছে, সুজনের সিকিউরিটি তারা দিতে পারবে না,' যোগ করেন মনির।
সুজনের মা মঞ্জু বেগম বলেন, 'শনিবার দুপুর ২টার দিকে বাচ্চু দোকানদার আইসা কয়, ২০ হাজার টাকা দিব, তাইলে তোমার পোলা বাঁইচ্যা থাকবে, কেস-মেস ডিসমিস হইয়া যাইবে। সালিশের খরচ। আমি কইছি, মুই টাকা পামু কই। বাচ্চু কয়, তুমিই তো পোলা লাই (প্রশ্রয়) দাও।'
মঞ্জু বেগম আরও বলেন, 'বিকাল ৪টার দিকে আমার পোলাডারে ধইরা নিয়া পিটাইয়া মাইরা ফালাইছে। ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের এই সরকারের নেতা বাচ্চু, বাচ্চুর ছেলে, বাচ্চুর ভাইয়ের ছেলেসহ আরও অনেকে গাছের সাথে বেঁধে পিটাইয়া মারছে। আমার পোলায় অন্যায় করলে থানা-পুলিশ ছিল। তোরা আমার পোলাডারে পিটাইয়া মাইরা ফালাইলি কেন?'
সুজনের বড় ভাই রুবেল হাওলাদার বলেন, 'যারা সুজনের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে, তারা ওরে মারে নাই। মাঝখানের লোকজন মারছে। ওরে টার্গেট অনেক আগেই করছিল। সুজন এলাকার খারাপ ছেলেদের সাথে মিশে নেশা বিক্রি করত। আমরা অনেক কষ্টে সেই পথ থেকে ফিরিয়েছি। তবে এলাকার সেই খারাপ লোকগুলো ওরে হুমকি দিত আবার বিক্রি না করলে মেরে ফেলবে।
'প্রতিবেশী একজন থানায় মামলা দিয়েছে, সুযোগ পেয়ে তারা আমার ভাইকে ধরে নিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে।'
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দায়িত্বরত স্টাফরা জানিয়েছে, নির্মম নির্যাতনের চিহ্ন সুজনের শরীরে স্পষ্ট। এছাড়া পিটিয়ে ও লাথি দিয়ে সুজনের অণ্ডকোষ থেঁতলে দেওয়া হয়েছে।