একইসঙ্গে আইনসভা ও গণপরিষদ নির্বাচন সম্ভব: নাহিদ ইসলাম

জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ বিলোপের পাশাপাশি নতুন সংবিধান প্রণয়নে আগামী নির্বাচনে একইসঙ্গে আইনসভা ও গণপরিষদ নির্বাচন আয়োজন সম্ভব বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
ফ্যাসিবাদ-বিরোধী রাজনীতিবিদ, ছাত্র-শ্রমিক, পেশাজীবী, অ্যাক্টিভিস্ট, ওলামায়ে কেরাম ও বিশিষ্ট নাগরিকদের সম্মানে মঙ্গলবার (১১ মার্চ) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ইফতার পার্টিতে তিনি এসব কথা বলেন।
নাহিদ বলেন, আমাদের মধ্যে নানা বিষয়ে মতপার্থক্য হতে পারে, তর্কবিতর্ক হতে পারে, নীতিগত বিরোধ হতে পারে। কিন্তু এসব কারণে গণতান্ত্রিক সম্পর্ক, সংলাপ ও পারস্পারিক মিথস্ক্রিয়ায় যেন কোনো ছেদ না পড়ে।
বাংলাদেশবিরোধী শক্তিরা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে এবং দেশের বিপদ এখনও কাটেনি উল্লেখ করে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, নীতিগত বিরোধ থাকলেও ষড়যন্ত্রকারীদের মোকাবিলায় ঐক্য ধরে রাখতে হবে। এনসিপি বাংলাদেশের শাসন-কাঠামোর গুণগত ও মৌলিক পরিবর্তন চায়। তাই আমরা একটি নতুন সংবিধানের মাধ্যমে একটি নতুন রিপাবলিকের কথা বলছি।
বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের প্রসঙ্গ টেনে নাহিদ বলেন, সামনের নির্বাচনে একই সঙ্গে আইনসভা ও গণপরিষদ নির্বাচন সম্ভব। এতে করে একদিকে নতুন সংবিধান কায়েম হবে, অন্যদিকে গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় নতুন পথের উত্তরণ ঘটবে।
সরকার সংস্কার ও নির্বাচনের জন্য যে সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে, সেই সময়ের মধ্যেই এসব কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, সংবিধান সংস্কারের পাশাপাশি জনপ্রশাসন ও পুলিশ সংস্কারের প্রস্তাবগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের অধ্যাদেশ জারি করে সম্পন্ন করা উচিত।
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের আগে অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হতে হবে। সরকারের একার পক্ষে আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে সবার সম্মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন।
এছাড়া নির্বাচনের সময়ে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও গণমাধ্যমের নিরপেক্ষ আচরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
পুরনো রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে প্রত্যাখ্যান করে রাজনীতিতে আমূল পরিবর্তন আনার ওপর জোর দিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, জুলাই গণহত্যার বিচার দ্রুত করতে হবে এবং বিচারের মাধ্যমেই আওয়ামী লীগের ব্যাপারে রাজনৈতিক ফয়সালার পথে হাঁটতে হবে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে কারও অবদান কারও থেকে কম নয় বলে মন্তব্য করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী ছাত্রজনতার সম্মিলিত প্রতিরোধের ফসল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দল, ছাত্রসংগঠন, নাগরিক সমাজ, পেশাজীবী, আলেম, শ্রমিক ও সর্বোপরি সাধারণ জনতার অংশগ্রহণ ও সহায়তায় এই গণ-অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারকে উৎখাত করা সম্ভব হয়েছে।
এনসিপির এই ইফতার পার্টিতে অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমেদ আবদুল কাদের, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন।
রাজনীতিবিদদের মধ্যে আরও ছিলেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসানসহ বিভিন্ন মতের রাজনৈতিক দলের জ্যেষ্ঠ নেতা ও প্রতিনিধি।