পুলিশের ডিজিটাইজেশনে ৪ উদ্যোগ, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে চালু হচ্ছে শর্টকোড

নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে পুলিশের হটলাইন সেবার পাশাপাশি শর্টকোড চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ। পুলিশের ডিজিটাল রূপান্তরের অংশ হিসেবে সরকারের চারটি বড় উদ্যোগের মধ্যে এটি অন্যতম।
প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, পুলিশি কার্যক্রমকে আরও দক্ষ ও নিরাপদ করতে 'পুলিশ কমান্ড অ্যাপ' তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি, অভিযোগ ব্যবস্থাপনায় 'ইনসিডেন্ট ট্র্যাকিং সফটওয়্যার', অনলাইন সাধারণ ডায়েরি (জিডি), এবং শর্টকোডের মাধ্যমে মামলা বা এফআইআর করার সুবিধা চালু করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, 'বর্তমানে জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩ চালু আছে। নতুন ব্যবস্থায় ৩৩৩৩ নম্বরে ডায়াল করে বা ৩৩৩ নম্বরে কল করে নির্দিষ্ট অপশনে গিয়ে ৩ চাপলে নারীরা সরাসরি পুলিশের সহায়তা নিতে পারবেন। নারী ভুক্তভোগীরা যাতে নির্ভয়ে অভিযোগ জানাতে পারেন, সেজন্য ৩৩৩৩-এর কল সেন্টারে শতভাগ নারী অপারেটর রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে ৯৯৯ নম্বরে সরাসরি এই সেবা যুক্ত করা হচ্ছে না, কারণ এটি জীবনরক্ষাকারী জরুরি সেবা এবং এর সক্ষমতা বাড়ানোর কাজ সময়সাপেক্ষ।'
এছাড়া অনলাইন জিডির প্রক্রিয়াতেও পরিবর্তন আসছে। এখন থেকে অনলাইন এফআইআর করার সুযোগ থাকছে, যেখানে অভিযোগকারী কল সেন্টারে কল করলে তার তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট থানায় চলে যাবে। এর জন্য থানার কর্মকর্তাদের নম্বরের একটি ডাটাবেজ তৈরি করা হচ্ছে।
সরকারের এই উদ্যোগগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ।
পুলিশ কমান্ড অ্যাপ ও 'পুশ টু টক' সুবিধা
পুলিশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ আরও নিরাপদ ও দ্রুত করতে 'পুলিশ কমান্ড অ্যাপ' তৈরি করা হচ্ছে, যার প্রোটোটাইপ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এটি আরও উন্নয়নের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
'বর্তমানে পুলিশ সদস্যরা অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে থাকেন। এতে অনেক সময় নষ্ট হয়। তাছাড়া তথ্য পাচারের ঝুঁকিও খুব বেশি; যে কোনো সদস্য আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ব্যবহার করে সমস্ত আলোচনা কপি করে নিয়ে যেতে পারেন,' বলেন উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
তিনি আরও জানান, পুলিশ কমান্ড অ্যাপে কর্মকর্তাদের জন্য কয়েকটি স্তর থাকবে। প্রথম স্তরে থাকবেন আইজিপি ও শীর্ষ কর্মকর্তারা, দ্বিতীয় স্তরে পুলিশ সদর দপ্তর, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলা পর্যায়ের পুলিশ সুপাররা এবং সবশেষে থাকবেন দেশের সকল থানার পুলিশ কর্মকর্তারা। তবে থানা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এখনই কমান্ড অ্যাপে সংযুক্ত করা হবে না বলে জানান ফয়েজ আহমেদ।
ইনসিডেন্ট ট্র্যাকিং ও পুলিশের কার্যক্রম সংরক্ষণ
পুলিশি তদন্ত ও ঘটনাবলির যোগাযোগ সহজ করতে মোবাইল কোম্পানির কাস্টমার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের আদলে 'ইনসিডেন্ট ট্র্যাকিং সিস্টেম' তৈরি হচ্ছে। এতে সব ধরনের মেসেজ ও যোগাযোগ সংরক্ষিত থাকবে, ফলে যে কোনো ঘটনার অগ্রগতি সহজেই পর্যবেক্ষণ করা যাবে।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, 'বর্তমানে যে কোনো অভিযোগ তদন্ত বা কোনো ঘটনা ঘটলে সকল ধরনের যোগাযোগের ক্ষেত্রে হোয়াটসঅ্যাপ ও প্রচলিত অন্যান্য পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। পুলিশ কমান্ড সেন্টারের দায়িত্বে থাকা সদস্যরা সারাদিন এসব কাজেই ব্যস্ত থাকেন। এ ধরনের যোগাযোগের পুরো বিষয়টিকে একটি প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসতে মোবাইল কোম্পানিগুলোর কাস্টমার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের আদলে একটি ইন্সিডেন্টস ট্র্যাকিং সিস্টেম তৈরি করা হচ্ছে'।