জুনের আগে সব ধরনের গণপরিবহনে চালু হচ্ছে না বহুল প্রতীক্ষিত র্যাপিড পাস

সব ধরনের গণপরিবহনের জন্য একক কার্ড হিসেবে ব্যবহারযোগ্য বহুল প্রতীক্ষিত র্যাপিড পাস, চলতি বছরের জুনের আগে সব রকমের গণপরিবহনে চালু করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানা গেছে।
'ঢাকা শহর ও এর আশেপাশের জেলাগুলোর পরিবহন টিকেটিং ব্যবস্থা একীভূত করতে ক্লিয়ারিং হাউস স্থাপন প্রকল্প' এর জন্য প্রয়োজনীয় সমন্বিত সফটওয়্যার উন্নয়নের কাজ এখনও চলমান থাকায়, আগামী জুনের মধ্যে এটি চালু হওয়ার আশা করা হচ্ছে।
আর এই সফটওয়্যার চালু হওয়ার পর, বাসে র্যাপিড পাস ব্যবহারের জন্য বাস ভ্যালিডেটর স্থাপন করা হবে।
বর্তমানে র্যাপিড পাস শুধুমাত্র মেট্রোরেল ও সীমিত সংখ্যক কিছু বিআরটিসি বাসে ব্যবহার করা হয়।
প্রকল্প পরিচালক ও ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) সিনিয়র রোড সেফটি স্পেশ্যালিস্ট মোহাম্মদ মামুনুর রহমান, প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে বলেন, "সফটওয়্যারটির সফল পরীক্ষামূলক পরিচালনা ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে, এতে আমরা প্রকল্পের অগ্রগতির ইতিবাচক সংকেত পেয়েছি। সফটওয়্যারটি চালুর উপযোগী হলে, ভ্যালিডেটর কেনার জন্য সেবাদাতাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে, যেখানে র্যাপিড পাস ব্যবহার করা যাবে।"
ভ্যালিডেটর সিস্টেম সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, "ভ্যালিডেটর হলো বাসের গায়ে স্থাপন করা একটি স্থির ডিভাইস, যেখানে যাত্রীদের ওঠা ও নামার সময় তাদের র্যাপিড পাস কার্ডটি ট্যাপ করতে হবে। কার্ড থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভাড়া কেটে নেওয়া হবে।"
গণপরিবহনে র্যাপিড পাস চালুর বিষয়ে মামুনুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে এটি বাস রুট র্যাশনালাইজেশন (বিআরআর) এবং বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) সিস্টেমের আওতাভুক্ত বাসগুলোতে চালু করা হবে। এই বাসগুলোতে আগে থেকেই ভ্যালিডেটর স্থাপন করা থাকবে অথবা চালুর আগে সেগুলোতে ভ্যালিডেটর বসানো হবে।
তবে, কবে থেকে এই সেবা চালু হতে পারে তা নির্দিষ্টভাবে বলতে পারেননি তিনি।
বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে ডিটিসিএ প্রায় ১১.৫ লাখ র্যাপিড পাস কার্ড সরবরাহের পরিকল্পনা করেছে; ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনাও রয়েছে।
মামুনুর রহমান বলেন, "প্রকল্পের আওতায় আমরা ইতোমধ্যে ৪ লাখ র্যাপিড পাস কার্ড কিনেছি এবং আরও ২.৫ লাখ কার্ড কেনার প্রস্তাব দিতে যাচ্ছি। পাশাপাশি, ডিটিসিএ অতিরিক্ত আরও ৫ লাখ কার্ড কিনবে এবং চাহিদা বাড়লে আরও কার্ড সংযোজন করা হবে, যাতে কোনো ঘাটতি না হয়।"
প্রকল্পের সামগ্রিক অগ্রগতির বিষয়ে তিনি জানান, ইতোমধ্যে একটি ক্লিয়ারিং হাউস স্থাপন করা হয়েছে।
"ক্লিয়ারিং হাউসটি হবে মূলত এর কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা—যেখানে লেনদেন সংরক্ষণ ও বিতরণের কাজ করা হবে। এই সিস্টেমের মাধ্যমে সমস্ত সেবা প্রদানকারীদের মধ্যে আয় ভাগ করা হবে; এর ফলে ভাড়া আদায় প্রক্রিয়া সহজ, স্বচ্ছ ও অধিক কার্যকর হবে," ব্যাখ্যা করেন মামুনুর রহমান।
প্রত্যেক সেবা প্রদানকারী বা অংশীদারের ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডে (ডিবিবিএল) একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকবে, এবং ডিটিসিএ সফটওয়্যার ও সমস্ত আর্থিক লেনদেন–উভয়ই তত্ত্বাবধান করবে।
তিনি আরও বলেন, "ডিটিসিএ কেন্দ্রীয় সিস্টেম ও তহবিল পরিচালনা করবে এবং সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ পর্যন্ত সার্ভিস চার্জ গ্রহণ করবে। এই চার্জ কোম্পানি ভেদে ভিন্ন হবে এবং বিষয়টি প্রত্যেক সেবা প্রদানকারীর সঙ্গে চুক্তির সময়ই নির্ধারণ করা হবে।"
গ্রাহকরা যেন সহজে র্যাপিড পাস কার্ড রিচার্জ করতে পারেন, সেজন্য মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে রিচার্জ সুবিধা চালুর উদ্যোগ নিচ্ছে ডিটিসিএ।
মামুনুর রহমান বলেন, "বর্তমানে যাত্রীরা মেট্রো স্টেশনগুলোতে ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের মাধ্যমে তাদের র্যাপিড পাস কার্ড রিচার্জ করতে পারেন। তবে, রিচার্জ প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করতে শিগগিরই একটি সফটওয়্যার চালু করা হবে—যার মাধ্যমে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ব্যবহার করে গ্রাহকরা অনলাইনেই রিচার্জের সুবিধা পাবেন। তবে, এই সফটওয়্যার সম্পূর্ণরূপে কার্যকর হতে প্রায় ১ থেকে ১.৫ বছর সময় লাগতে পারে।"
র্যাপিড পাসের সুবিধা সম্পর্কে তিনি বলেন, এই ব্যবস্থা ভাড়া আদায়ে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করবে এবং জনবল নিয়োগের ব্যয় কমাবে।
তিনি বলেন, "এতে কোনো বাস কন্ডাক্টরের প্রয়োজন হবে না, কারণ পুরো প্রক্রিয়াটিই স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন হবে।"
র্যাপিড পাস ব্যবহারকারী যাত্রীদের ১০ শতাংশ ভাড়া ছাড় দেওয়া হবে, যাতে সবাই এই পদ্ধতি গ্রহণে উৎসাহিত হন।
যাদের র্যাপিড পাস নেই, তাদের জন্য ভ্যালিডেটরে নগদ টাকা পরিশোধের ব্যবস্থা থাকবে। "মেশিনটি একটি কিউআর কোডযুক্ত কাগজ প্রিন্ট করবে, যা ব্যবহার করে যাত্রীরা ভ্রমণ করতে পারবেন," ব্যাখ্যা করেন মামুনুর রহমান।