চোখ ধাঁধানো পাটপণ্য, তবে প্রচারণার অভাবে নেই ক্রেতা: অভিযোগ বিক্রেতাদের

রাজধানীর তেজগাঁওয়ের মনিপুরীপাড়া জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারে (জেডিপিসি) বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) থেকে শুরু হয়েছে পাঁচ দিনব্যাপী বহুমুখী পাটপণ্য মেলা। তবে গতকাল শুক্রবার (৭ মার্চ) ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও মেলায় দর্শক ও ক্রেতাদের সংখ্যা ছিল খুবই কম। বিক্রেতাদের অভিযোগ, যথেষ্ট প্রচার-প্রচারণার অভাবে জমছে না মেলা।
শুক্রবার বিকালে সরেজমিনে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, প্রায় ৪০টি স্টলে পণ্য বিক্রি ও প্রদর্শন করছেন বিক্রেতারা, যা আগামী ১০ মার্চ পর্যন্ত চলবে।
মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, দৃষ্টিনন্দন পাটপণ্য দিয়ে সাজানো প্রতিটি স্টল। তবে ক্রেতা দর্শনার্থীর জন্য অলস বসে রয়েছেন বিক্রেতারা। জেডিপিসি ভবনের সামনের রাস্তায় অস্থায়ীভাবে স্টলগুলো সাজানো হয়েছে।
বেকি সেন্টার প্রতিষ্ঠানে পাটের জুতা, স্যান্ডেল পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোগক্তা তাহমিদুল ইসলাম বলেন, "জেডিপিসি মেলার আয়োজন করেছে। কিন্তু আগে থেকে এর জন্য তেমন প্রচারণা ছিল না। রাজধানীর মোড়ে কোনো বিলবোর্ডও নেই। তাই অনেকে জানেনই না মেলা চলছে। শুক্রবারেও কোনো ভিড় নেই। অলস বসে রয়েছি আমরা। তার উপর জায়গা ছোট হওয়ায় যারা গাড়ি নিয়ে আসবেন, তাদের গাড়ি পার্কিংয়েরও ব্যবস্থা নেই।"
মেলায় পাটপণ্যের তৈরি গৃহসজ্জার জিনিসের পাশাপাশি নারীদের বিভিন্ন অলংকারও পাওয়া যাচ্ছে। গলার হার, চুড়ি, কানের গহনা, নাকের গহনা, পার্স পাওয়া যাচ্ছে। মেলায় আরও রয়েছে শো-পিস, টিস্যু বক্স, খেলনা, ফুল, ফুলদানি, ওয়ালমেট, ফটোফ্রেমসহ নানান পণ্য। আছে আলোকসজ্জার বাতি, দোলনা, সিকা, ঝুলানো ফুলদানি, ফুলের টব, পুতুলসহ বাচ্চাদের বাহারি খেলনা সামগ্রী।
শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টির দিকে হোলি ক্রাফট অ্যান্ড ফ্যাশন স্টলের বিক্রেতা স্বর্ণা আক্তার তিশা বলেন, "আজ এখন পর্যন্ত ২০০ টাকার পণ্য বিক্রি করেছি। আসলে প্রচারণাই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, কিন্তু দর্শনার্থীদেরও দেখা পাচ্ছি না—যাদেরকে আমাদের পণ্য সম্পর্কে জানাবো।"
ইন্সপায়ার জুটেক্স-এর প্রতিষ্ঠাতা মেহেদি হাসান পাটের শপিং ব্যাগ, ল্যাপটপ ব্যাগ, সেমিনার ব্যাগ, স্কুলব্যাগ, ফাইল ফোল্ডারসহ পাটের নানান ধরনের বহুমুখী পণ্য দিয়ে সাজিয়েছেন তার স্টল। তার এসব পণ্য রপ্তানিও হয়।
মেহেদি বলেন, "তৈরি পোশাক শিল্প আমাদের বিদেশে খুব পরিচিত। আমাদের রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে তৈরি পোশাক শিল্প থেকে। বিদেশি বায়ারদের সঙ্গে তাদের ভালো যোগাযোগ আছে। তাদের যে ক্রেতা আছেন, তারা পাটের ব্যাগসহ পাটজাত পণ্যেরও কিছু অর্ডার দিয়ে থাকেন। কিন্তু আমাদের আরএমজি সেক্টকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকায় আমরা এ সুযোগ নিতে পারছি না। গার্মেন্টস মালিকরাও জানছেন না যে, আমরা এত ভালো পণ্য তৈরি করছি।"
"মেলায় যদি গার্মেন্টস সেক্টরের মার্কেটিং অফিসারা আসতেন, আমাদের পণ্য দেখতেন– তাহলে বিদেশি ক্রেতাদের কাছে আমাদের পণ্যও তুলে ধরতে পারতেন। এর জন্য প্রচারণা প্রয়োজন," যোগ করেন তিনি।
আব্দুল বারি এসেছেন পরিবার নিয়ে। তিনি পাটের একটি নান্দনিক লেডিস ব্যাগ কিনেছেন। দাম নিয়েছে ৪০০ টাকা। তিনি বলেন, "পাটের বহুমুখী পণ্য মেলা ছাড়া তোমন কিনতে পাওয়া যায় না। তাই মেলাতে আসলাম, ঘর সাজানো কিছু পণ্য কিনতে। এসে দেখি আনেক পণ্যর সম্ভার। ভালো লাগছে, তবে মেলার জায়গাটা ছোট হয়েছে। খোলামেলা জায়গা হলে ভালো হতো।"
একেতো ক্রেতা দর্শনার্থী কম, তার উপর মেলার ৫ দিনে মোট ৫ হাজার টাকা স্টল ভাড়া দিতে হচ্ছে, এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বেশ কয়েকজন ক্ষুদ্র উদ্যেক্তারা।
জুট মার্ট এর প্রতিষ্ঠাতা খালেদা সুলতানা বলেন, "চীন মৈত্রী সেন্টার, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে আগে মেলা হতো, সেখানে যেই টাকা স্টল ভাড়া এখানেও তেমন। সরকারি জায়গায় হওয়ার কারণে ভাড়া কিছুটা কম নিতে পারতো। ৭ ফিট বাই ৭ ফিট স্টলের ভাড়া ৫ দিনে ৫ হাজার টাকা। অথচ যারা ভালো ক্ষুদ্র উদ্যেক্তা তাদের এখানে ফ্রি স্টল দিতে পারতো।"
তিনি বলেন, "আমাদের মতো ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের মূলধনের অভাব। তারপর সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে, মানসম্পন্ন কাঁচামালের অভাব। পাটের বহুমুখী পণ্য বানানো জন্য মানসম্পন্ন কাপড় ও জুট ফাইবারসহ কাঁচামাল প্রয়োজন হয়। আমরা সেটা পাচ্ছি না। মানসম্পন্ন কাঁচামাল না পেলে আমাদের পণ্য ভালো হবে না।"
"ভারতের চেয়ে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ দাম বেশি আমাদের দেশের কাঁচামাল। এর ফলে আমরা প্রথমেই কাঁচামাল কিনতে গিয়ে ঠকলাম। আমরা কীভাবে ব্যবসায় টিকে থাকবো? পণ্য রপ্তানিতে প্রতিযোগিতা ধরে রাখবো?"
"তাই সরকারের কাছে আবেদন থাকবে দেশে যেন সুলভ মূল্যে মানসম্পন্ন পাটপণ্য তৈরির কাঁচামাল পাওয়া যায়, সে ব্যবস্থা করা হয়," যোগ করেন এই উদ্যাক্তা।
এর আগে, বৃহস্পতিবার মেলা উদ্ভোধন করেন বস্ত্র ও পাট এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
এ সময় তিনি বলেন, "পাট রপ্তানির ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, যা কাঙ্ক্ষিত নয়। পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি আয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা নিয়ে আসুন, আমরা প্রয়োজনীয় সবকিছুই করবো।"
উপদেষ্টা বলেন, "রপ্তানি ৫ বিলিয়ন না হলেও ২ বিলিয়ন ডলারে যেতে কী করতে হবে, কোথায় বিনিয়োগ করতে হবে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি আমি তা করবো। পাটের হারানো ঐতিহ্য ফেরাতে সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।"