আশুলিয়ায় ওসির কক্ষে ঢুকে অসদাচরণ করা সেই যুবক গ্রেপ্তার

বিএনপির পার্টি অফিসের পিয়ন পরিচয় দিয়ে ঢাকার আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কক্ষে ঢুকে অসদাচরণ করা সুমনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৬ই মার্চ) গভীর রাতে চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার চিতোষী পূর্ব ইউনিয়নের চান্দল গ্রাম থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে শাহরাস্তি থানা পুলিশ।
গ্রেপ্তার সুমন চাঁদপুরের শাহরাস্তি থানাধীন চিতোষী পূর্ব ইউনিয়নের চান্দল গ্রামের মৃত আব্দুর রবের ছেলে।
সুমনকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে শাহরাস্তি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবুল বাসার বলেন, 'ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সুমনকে গ্রেপ্তারের পর আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তাকে আশুলিয়া থানার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।'
এর আগে গত মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সকালে বিএনপি অফিসের পিয়ন পরিচয় দিয়ে আশুলিয়া থানার ওসির কক্ষে ঢুকে থানায় সদ্য যোগদান করা ওসি মনিরুল হক ডাবলুর সঙ্গে অসদাচরণ করার অভিযোগ ওঠে ওই যুবকের বিরুদ্ধে। ঘটনার পর এসংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ভাইরাল হলে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হয়।
ঘটনার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস) জানিয়েছিলেন, গতকাল মঙ্গলবার (৪ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কক্ষে প্রবেশ করেন সুমন নামে ওই যুবক।
এসময় ওই যুবক নিজেকে বিএনপির পার্টি অফিসের পিওন পরিচয় দিয়ে আশুলিয়া থানায় সদ্য যোগদান করা ওসি মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম ডাবলুকে 'ছাত্রলীগের ওসি' উল্লেখ করে বিভিন্নভাবে বিব্রত করার চেষ্টা করার পাশাপাশি তাকে ওসির বিরুদ্ধে তদন্ত করতে বিএনপি অফিস থেকে পাঠানো হয়েছে বলেও দাবি করেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এসংক্রান্ত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ঘটনার সময় ওসির কক্ষে উপস্থিত সাংবাদিকরা এসময় ওই যুবকের পরিচয় এবং ওসিকে বিব্রত করার কারন জানতে চাইলে অভিযুক্ত যুবক নিজেকে বিএনপির পার্টি অফিসের পিয়ন পরিচয় দিয়ে বলেন, 'আমাকে স্যার বলছে উনি ছাত্রলীগের ওসি, তাই আসছি তার সাথে পরিচিত হতে'।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাংবাদিকদের জেরার মুখে এক পর্যায়ে সুযোগ বুঝে থানা থেকে সটকে পড়েন ওই যুবক।
এদিকে বিএনপির পার্টি অফিসের পিয়ন পরিচয়ে ওসির কক্ষে ঢুকে অসদাচরণের ওই ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর বিএনপি'র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আশুলিয়া থানার ওসিকে ফোন করে অভিযুক্ত ওই যুবকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করার আহ্বান জানান।
ঘটনার দিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভেরিফাইড পেইজ থেকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে জানানো হয়, আশুলিয়া থানায় ঢুকে থানার ওসির সাথে বিএনপি অফিসের পিয়ন পরিচয় দিয়ে অসদাচরন করা সুমনের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিতে আশুলিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ মনিরুল হক ডাবলুকে ফোন করেন বিএনপি'র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
পোস্টে বলা হয়, বিভিন্ন গণমাধ্যমে ঘটনাটি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে বিষয়টি রুহুল কবির রিজভী'র নজরে আসে। তাৎক্ষণিকভাবে বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বিএনপির দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন সুমন নামের ব্যাক্তিটি ভুয়া পরিচয়ে থানায় গিয়ে বিএনপির নাম ব্যবহার করে অপকর্ম করেছেন।
বিষয়টি জানার পর তাৎক্ষণিকভাবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আশুলিয়া থানার ওসিকে ফোন করে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা এবং ভুয়া পরিচয়ে পুলিশ কর্মকর্তার সাথে অসদাচরণ করার জন্য অভিযুক্ত যুবকের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহনের আহবান জানান বলে জানানো হয় পোস্টটিতে।
ঘটনার পর গতকাল বুধবার আশুলিয়া থানায় সদ্য যোগদান করা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম ডাবলু টিবিএসকে বলেন, 'আমি গত (মঙ্গলবার) থানায় যাওয়ার পরপরই, সেখানে সাংবাদিকসহ আরও অনেকে ছিল, সবার আগেই ওই যুবক নিজেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল সাহেবের ড্রাইভারের ভাই এরকম একটা পরিচয় দিয়ে আমার সঙ্গে পরিচিত হচ্ছিলেন।'
এসময় উপস্থিত সাংবাদিকরা তাকে কেন আসছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'উনাকে তো ছাত্রলীগের ওসি বলে, এইজন্যই আমি খোঁজখবর নিতে আসছি', এরকম কথাবার্তা বলছিলেন তিনি। আসলে ব্যস্ততার কারনে পুরো বিষয়টি আমি খেয়ালও করতে পারিনি। পরে লোকজন তাকে বের করে দেয়।'