ভর্তি পরীক্ষা: এক জেলার শিক্ষার্থীর সিট অন্য জেলার কেন্দ্রে, তোপের মুখে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন

ভর্তি পরীক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও চট্টগ্রাম—এই পাঁচ বিভাগীয় শহরে নেওয়ার উদ্যোগ নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
তবে পরীক্ষার জন্য সম্প্রতি প্রকাশিত আসন ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতর্ক ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
আসনবিন্যাসে দেখা গেছে, কেন্দ্র পছন্দক্রমের প্রথমে থাকা সত্ত্বেও রংপুর অঞ্চলের অনেক পরীক্ষার্থীর আসন পড়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। একইভাবে, চট্টগ্রাম অঞ্চলের অনেক পরীক্ষার্থীর আসন পড়েছে ঢাকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে।
এই আসনবিন্যাস প্রকাশিত হওয়ার পর ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা।
তারা বলছেন, কেন্দ্র পছন্দের তালিকায় প্রথমে থাকা সত্ত্বেও সেই কেন্দ্র বাদ দিয়ে অন্যান্য কেন্দ্রে তাদের পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এতে তাদের ভোগান্তি কমার চেয়ে উল্টো বেড়েছে। এই আসনবিন্যাস বাতিল করে নতুন আসনবিন্যাস প্রকাশের দাবি করছেন তারা।
বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য ভর্তি উপকমিটির আজ জরুরি সভা করার কথা রয়েছে বলে রাবি কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।
আগামী ১২, ১৯ ও ২৬ এপ্রিল রাবির ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রার্থীরা এই আসন পরিকল্পনা বাতিল এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সংশোধিত সংস্করণ জারি করার দাবি করছেন।
রাবি সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার বিকেল ৪টা থেকে ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র ডাউনলোড করার সুযোগ দেওয়া হয়। প্রবেশপত্র ডাউনলোডের পর আসনবিন্যাসের বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে সমালোচনা শুরু হয়।
বিভ্রান্তি ও ক্ষোভ
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে 'রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষাকেন্দ্র'-নামক একটি গ্রুপে অভিযোগ করে ভর্তি-ইচ্ছুক পরীক্ষার্থীরা লেখেন—'রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিটপ্ল্যান বাতিল চাই, শিক্ষার্থীদের সুবিধা অনুযায়ী নতুন করে সিটপ্ল্যান দিতে হবে।'
ওই ফেসবুক গ্রুপে জিকরা নিহা নামের এক পরীক্ষার্থী লিখেছেন, 'আমার বাসা ঝিনাইদহে। একজন মেয়ে হয়ে আমার পক্ষে ঝিনাইদহ থেকে চট্টগ্রাম গিয়ে পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হবে না। এত টাকা দিয়ে আবেদন করার পর আবার অত দূর অনেক টাকা দিয়ে জার্নি করাটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি বেশি দূরে জার্নি করতে পারি না, অসুস্থ বোধ করি। এ ছাড়া এত টাইম জার্নি করার পর পরীক্ষার হলে বসে পরীক্ষা দেওয়াটা কারোও পক্ষে সম্ভব নয়। এটা আমাদের জন্য অনেক হয়রানি। তাই সব দিক বিবেচনা করে আমাদের প্রত্যেক স্টুডেন্টের মতামত অনুযায়ী পছন্দের বিভাগে সিট দেওয়া উচিত।'
রওনক জাহান রোজি নামের এক পরীক্ষার্থী লিখেছেন, 'আমার বাড়ি বগুড়া হলেও পরীক্ষার সিট পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখান থেকে রাজশাহীতে যেতে ৩ ঘণ্টা লাগে, কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনেক বেশি দূরে হয়ে যায় এবং থাকার জায়গা নিয়েও চিন্তায় পড়ে গেছি। অঞ্চলভেদে সিটপ্ল্যান করা উচিত ছিল। শিক্ষার্থীদের স্বার্থে এই সিটপ্ল্যান নতুন করে প্রণয়ন করা উচিত।'
শিমুল ইসলাম নামের এক পরীক্ষার্থী লিখেছেন, 'রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগীয় শহরে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ছাত্রদের ভোগান্তি কমাতে গিয়ে উল্টো অনেকের ভোগান্তি বাড়িয়ে দিয়েছে। এটাই বাস্তব।'
এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল রাতে এ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তাদের অবস্থান জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ২০২৪-২৫ সেশনের ভর্তি পরীক্ষার অঞ্চল ভিত্তিক আসন বিন্যাস নিয়ে পরীক্ষার্থীদের একটি অংশ ও তাদের অভিভাকদের উদ্বেগের বিষয়টি প্রশাসনের নজরে এসেছে।
বলা হয়েছে, পরীক্ষায় অধিকতর স্বচ্ছতা এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ভর্তি কমিটির সভায় শুধুমাত্র এক শিফটে নির্ধারিত বিভাগীয় শহরের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সে অনুযায়ী রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, চট্টগ্রাম এবং ঢাকায় মোট ৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে।
আরও বলা হয়েছে, এক্ষেত্রে একটি সমস্যা তৈরি হয়েছে, যেখানে কিছু প্রতিষ্ঠানে আসনসংখ্যা কম, অথচ সেখানে আবেদনকারীর সংখ্যা বেশি। আবার যেখানে আসনসংখ্যা বেশি, সেখানে আবেদনকারীর সংখ্যা কম। ফলে মেধার ভিত্তিতে আসন বিন্যাস করায় কিছু পরীক্ষার্থীর আসন তাদের প্রদত্ত পছন্দক্রম অনুসারে অন্য শহরে পড়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এটি নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে যে ভর্তি কমিটি এবং উপকমিটির গৃহীত নীতি অনুসারে যথাযথ ভাবে আসন বন্টন হয়েছে। এরপরেও পরীক্ষার্থীদের একটি অংশের জন্য সমস্যা তৈরি হওয়ায় বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আগামীকাল (আজ) জরুরি ভিত্তিতে ভর্তি উপকমিটির সভা আহ্বান করেছে।