কোয়েলের মাংস হিসেবে বিক্রির উদ্দেশ্যে ৬৯৭ বন্যপাখি জবাই, চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার ৩

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার ইছামতি নদীর তীর থেকে বিপুল সংখ্যক বন্যপাখি শিকার ও পরিবহনের অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (৪ মার্চ) রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
পুলিশ জানায়, অভিযানে মোট ৬৯৭টি জবাই করা পাখি উদ্ধার করা হয়েছে, যার মধ্যে ১৩৫টি শালিক, ৪২২টি চড়ুই ও ১৪০টি বাবুই রয়েছে। এগুলোকে কোয়েলের মাংস নাম দিয়ে রেস্তোরাঁয় বিক্রির উদ্দেশ্যে প্রস্তুত করা হচ্ছিল।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন আনোয়ারার আজামুল্লা পাড়ার মো. সৈয়দুল আলম (৬০), মোহরি পাড়ার মো. ইদ্রিস (৬৫) ও পটিয়ার শোভনদন্ডি ইউনিয়নের মো. সোহেল (৩০)।
আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনির হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'ইছামতি নদীর তীরবর্তী বিস্তৃত ফসলি জমিতে প্রতিদিন হাজারো পাখি খাবারের সন্ধানে আসে। গ্রেপ্তারকৃতরা সেই জমিতে জাল পেতে পাখিগুলো ধরে জবাই করত। পরে গরম পানিতে পালক তুলে কোয়েলের মাংস হিসেবে রেস্তোরাঁয় বিক্রি করত।'
তিনি আরও জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ উপজেলা সদর এলাকায় একটি চেকপোস্ট স্থাপন করে। পরে, একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা তল্লাশি করে দুটি বস্তাভর্তি মৃত পাখি উদ্ধার করা হয় এবং চালকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ ঘটনায় বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২-এর আওতায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং আদালতে হাজির করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারের পর উদ্ধার করা মৃত পাখিগুলো পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। তবে সেগুলো দ্রুত পচন ধরায় কবর দেওয়ার প্রয়োজন হবে বলে জানান ওসি মনির। তিনি বলেন, 'আমরা বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ চেয়েছি।'
চট্টগ্রামের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা দীপান্বিতা ভট্টাচার্য স্থানীয় বন্যপাখির পরিবেশগত গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে বলেন, 'কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ, কৃষি উৎপাদনশীলতা ও পরাগায়নে এসব পাখি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এত বিপুল সংখ্যক পাখি শিকার এলাকাটির জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।'
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, '৬৯৭টি পাখি হত্যা একটি নৃশংস অপরাধ। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আইনি ফাঁকফোকরের কারণে অপরাধীরা আদালতে হাজির হওয়ার পরপরই হয়তো জামিন পেয়ে যাবে। বন্যপ্রাণী পাচার একটি অ-আমলযোগ্য অপরাধ হওয়ায় অভিযুক্তরা অনেক সময় শাস্তির বাইরে থেকে যায় এবং একই অপরাধ বারবার ঘটায়।'