রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ ১০০ ঋণখেলাপি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ অর্থ মন্ত্রণালয়ের
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ ১০০ ঋণখেলাপির মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এসব মামলায় জড়িত মোট ঋণের পরিমাণ ৩৮ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সভায় উপস্থিত থাকা একাধিক কর্মকর্তা টিবিএসকে নিশ্চিত করেন।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, মামলাগুলোর কোনটি কোন কারণে আটকে আছে, তা চিহ্নিত করে সমস্যা সমাধান করে দ্রুত নিষ্পত্তি করতে সহযোগিতা চেয়ে আইন মন্ত্রণালয়, অ্যাটনি জেনারেল কার্যালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেবে অর্থ মন্ত্রণালয়।
বিভিন্ন ব্যাংক থেকে পাওয়া ঋণখেলাপি মামলার তথ্য পর্যালোচনা করে তৈরি করা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রতিবেদন অনুসারে, সোনালী ব্যাংকের ১০টি মামলায় ৫ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের ১০ মামলায় ৩ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা, সাধারণ বীমা করপোরেশনের ৩ হাজার ৭১৯ কোটি, রূপালী ব্যাংকের ৩ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংকের ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ১ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের মামলা রয়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ১০ মামলায় ৮৭৬ কোটি টাকা, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ৮৬০ কোটি টাকা, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ২৯৪ কোটি টাকা ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ৮৪ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের মামলা আছে।
শীর্ষ খেলাপি ও প্রক্রিয়াগত সমস্যা
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, ব্যাংক খাতে শীর্ষ খেলাপি মামলার মধ্যে টপে রয়েছে মাহিন এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ২৫১ কোটি টাকা। এছাড়া এফএমসি ডকইয়ার্ড লিমিটেডের খেলাপি ঋণ ১ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা, গ্যালাক্সি সোয়েটার অ্যান্ড ইয়ার্ন ডায়িং লিমিটেডের খেলাপি ঋণ ১ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা, রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের খেলাপি ঋণ ১ হাজার ৮৪ কোটি টাকা, প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেডের ১ হাজার ৭১ কোটি ও মেরিন ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৫৭ কোটি টাকা।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক সাংবাদিকদের জানান, মন্ত্রণালয় বোঝার চেষ্টা করছে কেন মামলাগুলো নিষ্পত্তি হচ্ছে না। এগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য কী করতে হবে। তিনি বলেন, খেলাপিদের রিট করতে কোনো অগ্রিম অর্থ জমা দিতে হয় না। এক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা জমা দিয়ে রিটের বিধান রাখা গেলে উচ্চ আদালতে রিট করার প্রবণতা কমে আসবে এবং ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে অগ্রিম কিছু অর্থ আদায়ও হবে।
তিনি আরও বলেন, পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ব্যাংক ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে মামলা করলেও তা শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত হচ্ছে না, মাসের পর মাস পড়ে থাকছে। মামলায় গতি আনতে বাদী হিসাবে সরকারের আইনানুগ এখতিয়ার অনুযায়ী কাজ করা হবে।
নতুন উদ্যোগ
সভায় উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা জানান, বৃহস্পতিবারের সভায় মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে আরও চারটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে প্রতিটি ব্যাংক এসব মামলার অগ্রগতি, মামলা আটকে থাকার কারণসহ বিভিন্ন বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করতে একজন করে কর্মকর্তাকে সার্বক্ষণিক নিযুক্ত রাখবে।
এছাড়া প্রতিটি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শীর্ষ ঋণখেলাপি মামলাগুলোর অগ্রগতি নিয়ে প্রতি মাসে একটি করে মিটিং করবেন এবং তার ফলাফল আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে জানাবেন। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
অনেক সময় আদালত থেকে খেলাপি ঋণগ্রহীতার বিরুদ্ধে সমন ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলেও পুলিশ তা বাস্তবায়ন করে না বলে সভায় আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা চাইবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
এছাড়া অনেক সময় আদালত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে রায় দিলেও বন্ধকী সম্পত্তি প্রভাবশালী দখলদারদের দখলে থাকে। তাদের উচ্ছেদ করে ব্যাংক তা দখল করতে গেলে পুলিশের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাওয়া যায় না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে এ বিষয়েও সহযোগিতা চাওয়া হবে।
তাছাড়া জেলা প্রশাসকরা যাতে স্থানীয় পর্যায়ে বৈঠকে নিম্ন আদালতে চলমান শীর্ষ ঋণখেলাপি মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নিতে উৎসাহী হন, সেজন্য জেলা প্রশাসক সম্মেলনে তাদের সহযোগিতা চাইবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
