শুল্ক নিয়ে ঢাকা-ওয়াশিংটন চূড়ান্ত সভা আজ, অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রে গেলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত পারস্পরিক শুল্ক চুক্তি (রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ অ্যাগ্রিমেন্ট) নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা করে সমঝোতায় পৌঁছাতে আজ ও আগামীকাল জুলাই বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র।
ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ-এর (ইউএসটিআর) সঙ্গে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সভায় যোগ দিতে বুধবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটনের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন।
এর আগে গত ২৬ জুন ইউএসটিআরের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সভায় বাংলাদেশের ওপর সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কর আরোপের অনুরোধ করে বাংলাদেশ যেসব প্রস্তাব দিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র সেগুলো গ্রহণ করেনি বলে জানা গেছে।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান টিবিএসকে বলেন, ওই সভায় বাংলাদেশের কাছে কোন কোন পণ্যে শূন্য-শুল্ক সুবিধা চায়, তা জানতে ইউএসটিআরের কাছে একটি শুল্ক শিডিউল চেয়েছিল ঢাকা। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ট্যারিফ শিডিউল পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ শিডিউল [আমদানি বা রপ্তানিকৃত বিভিন্ন পণ্যের ওপর প্রযোজ্য শুল্ক হারের আনুষ্ঠানিক তালিকা] না পাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ অ্যাগ্রিমেন্টের জন্য যে খসড়া বাংলাদেশকে দিয়েছে, তার ভিত্তিতেই আলোচনা হবে।'
বাণিজ্য সচিব আরও বলেন, 'আলোচনায় অংশ নিতে বাণিজ্য উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন। উই আর ভেরি মাচ অন ট্র্যাক। আমরা শেষ সময় পর্যন্ত আলোচনা অব্যাহত রেখে সমাধানে পৌঁছানোর চেষ্টা করব।'
গত ২ এপ্রিল বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের ওপর উচ্চহারে পারস্পরিক শুল্ক আরোপ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরে তা তিন মাসের জন্য কার্যকর স্থগিত রাখার ঘোষণা দেন তিনি, যার মেয়াদ আগামী ৯ জুলাই শেষ হবে।
সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, ৯ জুলাইয়ের পর বিভিন্ন দেশের ওপর পারস্পরিক শুল্ক কার্যকর করা হবে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান আলোচনায় কোন দেশ কতটা ছাড় দিচ্ছে, তার ভিত্তিতে শুল্কের হারে পরিবর্তন আসতে পারে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশের ওপর আরোপিত পারস্পরিক শুল্ক চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করতে আগে থেকেই ওয়াশিংটনে রয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। আজ তার সঙ্গে যোগ দেবেন বাণিজ্য উপদেষ্টা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ৩৭ শতাংশ পারস্পরিক শুল্ক কিছুটা কমানোর ইঙ্গিত পাওয়ার পরই বাণিজ্য উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। তবে শুল্ক ঠিক কতটা কমতে পারে, সে সম্পর্কে কোনো তথ্য জানাতে পারেননি তিনি।
পারস্পরিক শুল্ক থেকে অব্যাহতি দিতে যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশকে চুক্তি করতে আহ্বান জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রচলিত বিভিন্ন নিয়মবিরোধী বিভিন্ন শর্তারোপ করায় একমাত্র যুক্তরাজ্য ছাড়া আর কোনো দেশ এখনও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একমত হতে পারেনি।
শুল্ক আলোচনা সম্পর্কে অবগত সূত্রগুলো জানিয়েছে, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তিতে সাধারণত যে ধরনের আদর্শ আইনি ভাষা থাকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে তার ঘাটতি রয়েছে। প্রস্তাবে এমন কিছু ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা বাংলাদেশকে তৃতীয় কোনো দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ও শুল্ক বৃদ্ধি মেনে নিতে বাধ্য করবে।
ঢাকা এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে বলেছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একটি সুনির্দিষ্ট দেশের নিজস্ব আইন বাংলাদেশের পক্ষে অনুসরণ করা সম্ভব নয়।
আরেকটি বিতর্কিত ধারা হলো, যেসব পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে শুল্ক ছাড় দেওয়া হবে, সেসব পণ্যে বাংলাদেশ অন্য কোনো দেশকে এ সুবিধা দিতে পারবে না।
কর্মকর্তারা বলছেন, এটি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মোস্ট-ফেভার্ড ন্যাশন (এমএফএন) নীতির বিরোধী, যেখানে সব বাণিজ্য অংশীদারের সঙ্গে সমতাপূর্ণ আচরণের কথা বলা হয়েছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের ওপর যাতে বাড়তি শুল্ক আরোপ না হয়।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্যের গড় শুল্ক হার ৩৭ শতাংশ, ভিয়েতনামের পণ্যের ক্ষেত্রে ৪৬ শতাংশ এবং চীনের রপ্তানির জন্য তা আরও বেশি।
নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের পারস্পরিক শুল্ক নীতি যদি সবার ওপর সমানভাবে প্রয়োগ করা হয়, তবে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে না।