পাচার সম্পদ পুনরুদ্ধারে লন্ডনে আন্তর্জাতিক মামলা অর্থায়নকারীদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক গভর্নরের
আন্তর্জাতিক মামলায় অর্থায়নকারী বা বৈশ্বিক লিটিগেশন ফান্ডারদের সঙ্গে লন্ডনে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। এসব বৈঠকের লক্ষ্য ছিল ২০২৫ সালের মধ্যে অন্তত ৩০টি মামলার জন্য ১০ কোটি ডলার সংগ্রহ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ১০ থেকে ১৩ জুন লন্ডন সফর করেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে তাঁর এই সফর হলেও এ সময় গভর্নর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত বিষয়ে আলাদাভাবে বেশ কয়েকটি বৈঠক করেন।
ওমনি ব্রিজওয়ে ও বেঞ্চওয়াক ক্যাপিটালসহ শীর্ষস্থানীয় লিটিগেশন বা মামলায় তহবিল প্রদানকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে তিনি আলোচনা করেন বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া তিনি আলভারেজ অ্যান্ড মার্শাল-সহ একাধিক তদন্ত সংস্থা এবং ইউনিটাস গ্লোবাল নামের একটি কৌশলগত যোগাযোগ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও আলোচনা করেছেন।
গভর্নর ডিএলএ পাইপার নামে শীর্ষস্থানীয় বৈশ্বিক আইন সংস্থা আয়োজিত অ্যাসেট রিকভারি রাউন্ড টেবিলের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এ গোলটেবিল বৈঠকে ওমনি ব্রিজওয়ে ও বেঞ্চওয়াক ক্যাপিটালের মতো প্রধান লিটিগেশন ফান্ডার এবং আলভারেজ অ্যান্ড মার্সাল ও ইউনিটস গ্লোবালের মতো তদন্ত ও কৌশলগত যোগাযোগ সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ ৩০টি মামলা পরিচালনার জন্য ১০ কোটি ডলার লিটিগেশন তহবিল (মামলার তহবিল) সংগ্রহে গভর্নরের লক্ষ্য অর্জনের পথরেখা নিয়ে আলোচনা করেন।
বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা বাংলাদেশ ব্যাংক ও স্বতন্ত্র ব্যাংকগুলোর সঙ্গে দ্রুত এনডিএ (গোপনীয়তা চুক্তি) স্বাক্ষর করে তাদের খেলাপি ঋণ (এনপিএল) সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদান এবং সম্পদ চিহ্নিতকরণ ও পুনরুদ্ধারের জন্য আইনি পদক্ষেপ শুরুর প্রয়োজনীয়তায় জোর দেন।
গভর্নর গোলটেবিলের অংশগ্রহণকারীদের যুক্তরাজ্য ও সিঙ্গাপুরের মতো মূল দেশগুলোতে আইনি দাবি পূরণের জন্য একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠান গঠনের পরামর্শের প্রতিও সমর্থন জানান। এর মাধ্যমে সম্পদ পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া যাবে এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনের বিরুদ্ধে তা আরও স্থিতিশীল করা সম্ভব হবে বলে মত দেন তিনি।
লন্ডন সফরে গভর্নর আরও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারণী বৈঠকে অংশ নেন। এর মধ্যে ১১ জুন তিনি দুদক চেয়ারম্যান ড. মো. আবদুল মোমেনের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) পরিদর্শন করেন। সেখানে তারা ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্টি-করাপশন কো-অর্ডিনেশন সেন্টার (আইএসিসিসি)-এর প্রধান ড্যানিয়েল মারফিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
এ সময় গভর্নর বাংলাদেশের অ্যাসেট রিকভারি টাস্কফোর্সের সঙ্গে আইএসিসিসি-র চলমান সহযোগিতা এবং ১১টি অগ্রাধিকার মামলায় গঠিত যৌথ তদন্ত দলের (জেইটি) জন্য তাদের কারিগরি সহায়তার প্রশংসা করেন।
তিনি সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর যুক্তরাজ্যে ১৭ কোটি পাউন্ড মূল্যের সম্পদ জব্দ এবং গত মাসে বেক্সিমকো গ্রুপের শায়ান রহমান ও শাহরিয়ার রহমানের ৯ কোটি পাউন্ড মূল্যের সম্পদ জব্দের জন্যও এনসিএকে ধন্যবাদ জানান।
গভর্নর আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে এনসিএ ও আইএসিসিসি-র সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা গড়ে উঠবে এবং যুক্তরাজ্যের এই ২৬ কোটি পাউন্ড মূল্যের সম্পদ জব্দের পদক্ষেপ অর্থ পাচারের অন্যান্য গন্তব্য দেশগুলোকেও বাংলাদেশকে সহায়তা করতে উৎসাহী করবে।
সফরকালে গভর্নর বিশ্বের বৃহত্তম সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান ব্ল্যাক রকের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির উন্নতি সম্পর্কে তাদের অবহিত করেন এবং ব্যাংক ও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে উৎসাহ দেন।
আহসান এইচ মনসুর লন্ডনের লর্ড মেয়র এবং নেতৃস্থানীয় ফিনটেক কোম্পানিগুলোর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। আলোচনায় বাংলাদেশের আর্থিকখাতে লন্ডন সিটির বিনিয়োগ ও সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়টি উঠে আসে। এসময় গভর্নর লর্ড মেয়রকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
এ ছাড়া তিনি লন্ডনের বেশ কয়েকটি মানি এক্সচেঞ্জ হাউজের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে রেমিট্যান্স প্রক্রিয়া আরও সহজ করার উপায় এবং রেমিট্যান্স প্রবাহের ইতিবাচক ধারাবাহিকতা রক্ষার উপায় নিয়ে আলোচনা হয়।
