তিন মাসে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ কমেছে ১ হাজার কোটি টাকা

২০২৪ সালের শেষ প্রান্তিকে দেশের ব্যাংকিং খাতে ব্যপক পরিমাণে খেলাপি ঋণ বাড়লেও ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে (এনবিএফআই)। গত বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে এনবিএফআইগুলোর খেলাপি ঋণ কমেছে ১ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে এনবিএফআইগুলোর খেলাপি ঋণ ছিল ২৬ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা। তিন মাসের ব্যবধানে ডিসেম্বরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ৮৯ কোটি টাকা।
এর ফলে এনবিএফআই খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মোট বিতরণকৃত ঋণের ৩৩.২৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, 'আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যেই সবই যে খারাপ, তা নয়। কিছু কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবস্থা অনেক ভালো। তারা ভালো ব্যবসা করছে। ঋণ আদায়ের হারও ঊর্ধ্বমুখী।'
তবে এরপরও আর্থিক খাতের ৩৩.২৫ শতাংশ ঋণই খেলাপি হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এই খাতটিকে নতুন করে সাজাতে হবে। এখন আমরা ব্যাংক রেজ্যোলুলেশন অ্যাক্টের মাধ্যমে ব্যাংক সংস্কারকে গুরুত্ব দিচ্ছি। একই ধারায় আর্থিক প্রতিষ্ঠাগুলোতেও সংস্কার কাজ শুরু হবে।'
তবে অবস্থার উন্নতি সত্ত্বেও এনবিএফআই খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ এখনও গত বছরের চেয়ে বেশি। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে এনবিএফআইগুলোর খেলাপি ঋণ ছিল ২১ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা, যা ওই সময়ের মোট ঋণের ২৯.২৭ শতাংশ।
২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট বকেয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৫ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা।
তবে এনবিএফআইগুলোর খেলাপি ঋণ এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে সাড়ে 3 হাজার কোটি টাকা।
অন্যদিকে একই সময়ে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। ডিসেম্বরে এ খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা (মোট ঋণের ২০.২ শতাংশ), যেখানে সেপ্টেম্বরে এ পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাত্র তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬০ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা।
বেশ কয়েকটি এনবিএফআইয়ের কর্মকর্তারা বলেন, প্রতি বছরের ডিসেম্বর প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ আদায় ও পুনঃতফসিল বেশি থাকে। কারণ ডিসেম্বরকেন্দ্রিক ব্যালান্স শিট করতে হয়।
এছাড়া কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন এনে ঋণ আদায়ের কার্যক্রম জোরদার করায় খেলাপি ঋণ কিছুটা কমেছে বলে জানান তারা।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খেলাপি ঋণ ১ হাজার কোটি টাকা কমলেও এখনও এই খাতে খেলাপি ঋণ মোট ঋণের এক-তৃতীয়াংশের বেশি।
আর্থিক খাতের বহুল আলোচিত ব্যক্তি প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যে অনিয়ম করে গেছেন, তার জের পুরো খাতকেই টানতে হচ্ছে। পি কে হালদারের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় ছিল, এমন কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানেই এখন খেলাপি ঋণের হার সবচেয়ে বেশি।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. কায়সার হামিদ টিবিএসকে বলেন, এনবিএফআই খাতে যেসব অনিয়ম ছিল, সেগুলো ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যেই প্রকাশ্যে চলে এসেছে। তবে ব্যাংকের ঋণ অনিয়মের তথ্য দীর্ঘদিন গোপন ছিল, যা ৫ আগস্টের পর বের হচ্ছে। সে কারণে ব্যাংকে নতুন করে ব্যাপক পরিমাণে খেলাপি ঋণ দেখা যাছে।
তিনি আরও বলেন, 'বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে ভালো করছে, যার ফলে পুরো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণ কমেছে। আমাদের প্রতিষ্ঠানেও খেলাপি ঋণ ১১ শতাংশ থেকে কমে ৯ শতাংশে নেমে এসেছে।'
'২০২৪ সাল পুরো দেশের জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল। এই বছরে আমরা বড় ধরনের ঋণে যাচ্ছি না, তবে এসএমই ও ক্ষুদ্র ঋণে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। আশা করছি সমনে খেলাপি আরও কমে আসবে,' বলেন কায়সার।