১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে লোটো-র নতুন কারখানা উদ্বোধন, প্রায় তিনগুণ হবে উৎপাদনক্ষমতা

ইতালিয়ান স্পোর্টসওয়্যার ব্র্যান্ড লোটো ও ইংল্যান্ডের ব্র্যান্ড লি কুপার শু-র বাংলাদেশের লাইসেন্সধারী এক্সপ্রেস লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেড (লোটো বাংলাদেশ) গতকাল গাজীপুরের কাপাসিয়ায় নতুন কারখানা উদ্বোধন করেছে।
১০০ কোটি টাকার এ প্রকল্প আগামী দুই বছরের মধ্যে পুরোপুরি চালু হবে এবং কোম্পানির জুতা উৎপাদন সক্ষমতা ২.৭ গুণ বৃদ্ধি করবে বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জামিল ইসলাম।
তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে যেভাবে আমদানির ব্যয় বেড়েছে, তাতে এই বিনিয়োগ তাদের সেই চাপ সামাল দিতে, পণ্য সাশ্রয়ী করতে এবং ব্র্যান্ডেড ফুটওয়ারের বাজারে আরও দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হবে।
জামিল ইসলাম বলেন, ডলারের দাম বাড়ায় আমদানি খরচ বেড়ে গেছে। তাই আন্তর্জাতিক মানের উৎপাদনের মাধ্যমে স্থানীয় মূল্য সংযোজনের দিকে যাচ্ছেন তারা।
এক জোড়া সম্পূর্ণ প্রস্তুত জুতা আমদানি করলে প্রায় ১৩০ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। তবে সম্পূর্ণ নকড-ডাউন অবস্থায় স্থানীয়ভাবে সংযোজনের জন্য আধা-প্রস্তুত জুতা আমদানি করলে শুল্ক কমে দাঁড়ায় প্রায় ৮৫ শতাংশ।
অন্যদিকে দেশেই সম্পূর্ণ উৎপাদনের জন্য কাঁচামালে মাত্র ৩৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়।
জামিল বলেন, 'দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি নিয়ে ব্র্যান্ডেড জুতার বাজার এখন দেশের সামগ্রিক জুতা বাজারকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কারণ, মানুষ এখন নির্ভরযোগ্য, ফ্যাশনেবল ও আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের দিকে ঝুঁকছে।'
বর্তমানে ২ বিলিয়ন ডলারের দেশীয় জুতা বাজারে ব্র্যান্ডেড জুতার বাজার হিস্যা প্রায় ২০-২৫ শতাংশ, যা দুই দশক আগেও ছিল মাত্র ১০-১২ শতাংশ।
লোটোর ২২০টি আউটলেট ও ১ হাজারের বেশি ডিস্ট্রিবিউটরের মাধ্যমে কোম্পানিটি এখন বছরে ৩০০ কোটির বেশি রাজস্ব আয় করছে। আগামী পাঁচ বছরে এ আয় ৮০০ কোটিতে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে কোম্পানিটি।
১৫ লাখ টাকা বিনিয়োগে শুরু
২০০৭ সালে বাটা-র সাবেক নির্বাহী জামিল ইসলাম টঙ্গীতে মাত্র ৩৫ জন কর্মী নিয়ে জুতা উৎপাদন শুরু করেন।
সীমিত মূলধনে পুরনো ও সস্তা যন্ত্রপাতি কিনে তা মেরামত করে চালু করেন। শুরুতে তার বিনিয়োগ ছিল মাত্র ১৫ লাখ টাকা।
২০১১ সাল পর্যন্ত তিনি দেশের বড় ব্র্যান্ডগুলোর অর্ডারেই নির্ভর করতেন। ওই বছরই লোটোর লাইসেন্স পান। ২০১৯ সালে যুক্ত হন লি কুপারের সঙ্গে।
প্রায় প্রতি মাসেই লাভের টাকা দিয়ে নতুন যন্ত্রপাতি কিনতেন জামিল। টঙ্গীতে ভাড়ায় নেওয়া ১০ হাজার বর্গফুটের কারখানাটি এখন ৯০ হাজার বর্গফুটজুড়ে বিস্তৃত।
বর্তমানে এই কারখানা মাসে ৮ লাখ জোড়া জুতা এবং প্রায় ৫০ হাজার ইউনিট ক্রীড়া পোশাক ও আনুষঙ্গিক পণ্য উৎপাদনে সক্ষম।
দুই বছরের মধ্যে কোম্পানিটি উৎপাদন কার্যক্রম কাপাসিয়ায় ২৩ বিঘা জমিতের ওপর তৈরি নতুন কারখানায় সম্পূর্ণ স্থানান্তর করবে। এখানে নতুন ও আধুনিক যন্ত্রের পাশাপাশি পুরোনোগুলোকেও ব্যবহার করা হবে। হবে এক হাজারেরও বেশি নতুন কর্মসংস্থান—বিশেষত স্থানীয় নারীদের জন্য।
গতকালই নতুন কারখানায় আংশিক উৎপাদন শুরু হয়েছে। প্রথম ধাপে তৈরি হচ্ছে হালকা, পানিপ্রতিরোধী জুতা—বার্ষিক উৎপাদনক্ষমতা ১০ লাখ জোড়া।
'আমরা টেকসই উৎপাদনে বিশ্বাসী—সবুজ কারখানা, শ্রমিক ও স্থানীয়দের পাশে দাঁড়ানোই আমাদের অঙ্গীকার,' বলেন জামিল। শ্রমিকদের আবাসন, চিকিৎসা ও তাদের সন্তানদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা রয়েছে তার পরিকল্পনায়।
তিনি জানান, লোটোর বিক্রি হওয়া অর্ধেক জুতাই স্নিকার্স। এই সেগমেন্টে তারা ব্র্যান্ডেড স্পোর্টস শু-র বাজারে শীর্ষস্থানে।
লি কুপার স্টাইলিশ জুতা, অ্যাকসেসরিজ ও জিন্সের পাশাপাশি এখন তারা নিজেদের নতুন ইন-হাউস ব্র্যান্ড 'দি এক্সপ্রেস'ও গড়ে তুলছে।
নতুন কারখানার উদ্বোধনে জামিল তার ব্যাংকার ও বিদেশি প্রযুক্তি অংশীদারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান লোটোকে উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছাতে সহযোগিতা করার জন্য।
কিছু পরীক্ষামূলক রপ্তানি অভিজ্ঞতা ইতিবাচক হওয়ায় এখন এক্সপ্রেস লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেড আন্তর্জাতিক বাজারের দিকেও নজর দিচ্ছে—বিশেষত বিশ্বের ১১০টিরও বেশি দেশে থাকা অন্যান্য লোটো লাইসেন্সধারীদের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।