২০২৫–২৬ অর্থবছরে বাড়তি ৫৭ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় সম্ভব নয়, আইএমএফকে জানাল এনবিআর

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, তার আওতায় আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরে অতিরিক্ত ৫৭ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারা।
তাদের মতে, নীতিগত পদক্ষেপের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৮ হাজার কোটি টাকা—যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র এক-সপ্তমাংশ—পর্যন্ত রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
বুধবার (৯ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআরের সদর দপ্তরে আইএমএফ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এনবিআর কর্মকর্তারা সম্ভাব্য কর ছাড় কমানো, কর হার বৃদ্ধির আওতা এবং আসন্ন অর্থবছরের রাজস্ব পূর্বাভাস নিয়ে তাদের বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেন।
বহুপাক্ষিক ঋণদাতা সংস্থাটি শর্ত দিয়েছে যে, সূর্যাস্ত বিধান অনুসারে এ অর্থবছরের শেষে যেসব কর ছাড়ের মেয়াদ শেষ হচ্ছে, তা জুনের পরে আর বাড়ানো উচিত নয়।
তবে এনবিআর কর্মকর্তারা আইএমএফ প্রতিনিধিদের জানিয়েছেন, দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা এবং চলমান শিল্পায়নের বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে জুনের মধ্যেই সব ছাড় প্রত্যাহার করা সম্ভব নয়।
আলোচনার সময় আইএমএফ দল অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা স্বীকার করে এবং কর বৃদ্ধির সীমাবদ্ধতা নিয়ে এনবিআর কর্মকর্তাদের কিছু যুক্তি বিবেচনায় নেয়। তবে বৈঠকে উপস্থিত কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, আইএমএফ ৫৭ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা সংশোধনের কোনো ইচ্ছা প্রকাশ করেনি।
'জানুয়ারিতে প্রায় ১০০টি পণ্য ও পরিষেবার ওপর ভ্যাট বৃদ্ধির পর কেবল কর বৃদ্ধির মাধ্যমে কিংবা বিদ্যমান কর ছাড় বাতিল করে অতিরিক্ত ৫৭ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করা আমাদের জন্য প্রায় অসম্ভব,' নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন।
তিনি আরও বলেন, 'আমরা সম্ভাব্য কর বৃদ্ধি এবং আদায় নিয়ে একটি বিশদ বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেছি, যেখানে দেখানো হয়েছে যে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৮ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত রাজস্ব বৃদ্ধি সম্ভব।'
এনবিআর সূত্র জানায়, নির্দিষ্ট কিছু কর ছাড় প্রত্যাহার ও কর হার বৃদ্ধির ফলে রাজস্ব বৃদ্ধি হবে—আয়কর খাত থেকে প্রায় ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, ভ্যাট থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা এবং কাস্টমস খাত থেকে ৫০০ কোটি টাকা।
আইএমএফ যে অতিরিক্ত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, তা কেবল করনীতির পরিবর্তনের মাধ্যমে অর্জনের কথা বলা হয়েছে। অন্যান্য প্রশাসনিক ব্যবস্থা—যেমন কর ফাঁকি রোধ, বকেয়া আদায়, অটোমেশন বৃদ্ধি অথবা স্বাভাবিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মতো বিষয়গুলো এতে অন্তর্ভুক্ত নয়।
এনবিআরের প্রাক্কলন ও আইএমএফের শর্তের মধ্যে এত বড় ব্যবধান কেন—এ প্রশ্নের উত্তরে এনবিআরের আরেক কর্মকর্তা বলেন, 'বাস্তবতার নিরিখে যা সম্ভব, তা-ই আমরা তাদের জানিয়েছি। হঠাৎ করে সব ছাড় বাতিল করা যায় না এবং বড় পরিসরে কর বৃদ্ধির সুযোগও সীমিত।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা তাদের এ বাস্তবতাটুকু বোঝানোর চেষ্টা করেছি। সেই সময়ে আমরা আইএমএফ প্রতিনিধিদের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য উপস্থাপন করেছি, এবং তারা বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করছে বলেই মনে হয়েছে। আশা করি, তারা লক্ষ্যমাত্রাটি আরও বাস্তবসম্মত পর্যায়ে সংশোধন করবে।'