এবারের রমজানে রেস্তোরাঁয় সেহরি বিক্রি কমেছে

গত কয়েক বছর ধরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা সেহরি পার্টির জন্য রেস্তোরাঁগুলোতে থাকে নানা আয়োজন। তবে চলতি রমজানে রেস্তরাঁগুলোতে সেহরি পার্টির বিক্রি কমে গেছে। এ বছর রমজানে রেস্তোরাঁগুলোতে সেহরি প্রস্তুতি থাকলেও ক্রেতার সংখ্যা গত বছরের তুলনায় কম।
রেস্তোরাঁ মালিকরা বলছেন, ঢাকায় ছিনতাইয়ের আতঙ্কসহ দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে অনেকেই সেহির খাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হচ্ছে না।
বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমাদের বিক্রি অনেক কমেছে। বর্তমান পরিস্থিতে ভোররাতে বিশেষ কারণ ছাড়া এখন মানুষ বের হতে চাচ্ছে না।
'আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, ক্রেতাদের আর্থিক সংকট—সবকিছু মিলে বিক্রি কমেছে। কর্মচারীর বেতন তো আমাদের দিতেই হচ্ছে; যার ফলে আমাদের ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছে।'
তিনি আরও বলেন, 'আগে সেহরিকে ঘিরে এক ধরনের উৎসব তৈরি হতো। মানুষ দল বেঁধে সেহরি খেতে বের হতো। এবার সেটা দেখা যাচ্ছে কম। গতবারের তুলনায় মাত্র ১০ শতাংশ ক্রেতা আছে। তবে যারা ধনী, তাদের কথা আলাদা। তাদের নিজস্ব গাড়ি আছে, তারা পাঁচতারকা হোটেলে সেহরি খেতে চলে যাচ্ছে। সেখানে হয়তো বিক্রিতে প্রভাব পড়েনি।'
ইফতার ও সেহরির জন্য জনপ্রিয় স্থান স্টার কাবাব অ্যান্ড রেস্তোরাঁয় সেহরিতে ক্রেতার সংখ্যা কমেছে। ধানমন্ডি শাখার মালিক মীর আক্তার উদ্দিন দুলাল বলেন, 'সেহরির অবস্থা যাচ্ছেতাই। বিক্রি প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গেছে গত বছরের তুলনায়।'
তবে পাঁচতারকা হোটেল থেকে প্রাপ্ত তথ্যে গেছে, তাদের সেহরির বিক্রি স্বাভাবিক রয়েছে।
রমজানে লা মেরিডিয়ান ঢাকা আয়োজন করেছে মাসব্যাপী বিশেষ বুফে ইফতার ও সেহেরি।
লা মেরিডিয়ানের একজন প্রতিনিধি বলেন, 'লা মেরিডিয়ানের একজন কর্মকর্তা বলেন, 'সেহরিতে বেশ ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। অনেকে আসছেন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সেহরি খেতে। গত রমজানের মাতোই বিক্রি হচ্ছে। আর ছুটির দিনে অনেকে সেহরি পার্টি করছেন; অগ্রিম বুকিং থাকছে।'
লা মেরিডিয়ান ঢাকার ইফতার ও সেহরি আয়োজনে রাখা হয়েছে বিশেষ ছাড়। বুফে ইফতার ও ডিনার জনপ্রতি ১১ হাজার ৫০০ টাকা, বুফে সেহরি জনপ্রতি ৮ হাজার ৫০০ টাকা এবং ইফতার বক্স জনপ্রতি ৮ হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংকের নির্দিষ্ট কিছু কার্ডে থাকছে সর্বোচ্চ 'একটি কিনলে তিনটি ফ্রি' অফার।
প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের অতিথিরা উপভোগ করতে পারছেন সুস্বাদু মিসরীয় ও মধ্যপ্রাচ্যের ঐতিহ্যবাহী ইফতার ও সেহরি।
রাজধানীতে সেহরিতে ক্রেতা কম থাকলেও ইফতারির বাজার জমজমাট। কল্যাণপুর, ধানমন্ডি, পুরান ঢাকাসহ কয়েকটি এলাকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে ও তথ্য নিয়ে এ চিত্র দেখা গেছে।
স্টার কাবাব ধানমন্ডি শাখার মালিক মীর আক্তার বলেন, 'ইফতারে বিক্রি জমজমাট। গত বছরের মতোই ভালো বিক্রি হচ্ছে এবারও।'
রাজধানীর বেইলি রোড মুখরোচক খাবারের জন্য পরিচিত নাম। অগ্নিকাণ্ডের কারণে গত বছর বেইলি রোডের ইফতার বাজার জমে ওঠেনি। কিন্তু এ বছর অবস্থা ভিন্ন। এবার জমজমাট এখানকার ইফতারির বাজার।
রমজানের শুরু থেকেই প্রতিদিন চকবাজার ও আশপাশের এলাকায় দোকানিরা ইফতারের বিভিন্ন আইটেম সাজিয়ে বসছেন। বিক্রি হচ্ছে 'বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙ্গা ভইরা লইয়া যায়' ও সুকি কাবাবের মতো ইফতারি আইটেম।
কল্যাণপুর বাস স্ট্যান্ডের কাছে মুসলিম হোটেল অ্যান্ড রেন্টুরেন্টের বিক্রিয় কর্মী ওয়ালি উল্লাহ বলেন, 'প্রতিদিন ইফতারে যে আয়োজন থাকে সেটা বিক্রি হয়ে যায়।'
এই রেস্টুরেন্টে ইফতার কিনতে আসা ক্রেতা মোহাম্মদ ফাহিম বলেন, 'আলুর চপ ১০ টাকা, বেগুনি ১০ টাকা করে কিনেছি। গত বছরও একই দাম ছিল। এবার আলুর দাম কমেছে, কিন্তু আলুর চপের দাম তো কমাল না।'