ঋণের ৫১৮ কোটি টাকা আদায়ে সাইফ পাওয়ারটেকের সম্পদ নিলামে তুলছে ইউসিবি

ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) ৫১৭.৭৪ কোটি টাকা বকেয়া ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সাইফ পাওয়ারটেকের সম্পদ নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) ব্যাংকটি তাদের ওয়েবসাইটে নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সম্ভাব্য ক্রেতাদের ২৪ এপ্রিলের মধ্যে প্রাইস কোটেশন জমা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
নিলামটি ২০০৩ সালের মানি লোন কোর্ট আইনের বিধান অনুযায়ী পরিচালিত হবে।
নিলাম বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ইউসিবি ঋণ হিসেবে দেওয়া মোট ৭৫৫.২৪ কোটি টাকা আদায়ের জন্য তিনটি কোম্পানির সম্পদ নিলামে তুলছে। সব নিলামই ব্যাংকের মহাখালী শাখা থেকে জারি করা হয়েছে।
সাইফ পাওয়ারটেক ছাড়াও নিলামে থাকা অন্য দুটি কোম্পানি হলো—ই-ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড, যার ১৯৭.৬৯ কোটি টাকা এবং ম্যাক্সন পাওয়ার লিমিটেড, যার ৩৯.৮১ কোটি টাকা বকেয়া ঋণ রয়েছে।
এই ঋণের পরিমাণের মধ্যে ১৮ মার্চ পর্যন্ত গণনা করা সুদ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
নিলামের আওতায় নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে অবস্থিত দুটি বন্ধকী জমি বিক্রি করা হবে, যার মোট পরিমাণ ৫৭.৫৭ শতাংশ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঋণ পরিশোধের লক্ষ্যে এসব সম্পত্তি বিক্রি করা হবে।
ইউসিবির মহাখালী শাখার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস) জানান, ব্যাংকের বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও কোম্পানিগুলো দীর্ঘদিন ধরে ঋণের অর্থ পরিশোধ করেনি। তাই পাওনা আদায়ে ব্যাংকিং নিয়ম অনুযায়ী নিলামের মতো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সাইফ পাওয়ারটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার মো. রুহুল আমিন ই-ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড এবং ম্যাক্সন পাওয়ার লিমিটেডের চেয়ারম্যানও। তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
এদিকে, সাইফ পাওয়ারটেকের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা হাসান রেজার প্রতিক্রিয়া জানতে টিবিএস-এর পক্ষ থেকে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল বা হোয়াটসঅ্যাপ বার্তার জবাব দেননি।
সাইফ পাওয়ারটেক মূলত চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার টার্মিনাল পরিচালনার সঙ্গে জড়িত। প্রতিষ্ঠানটি বন্দরের মোট কন্টেইনার অপারেশনের প্রায় ৫৮ শতাংশ পরিচালনা করে।
এছাড়া, প্রতিষ্ঠানটি মোংলা ও পানগাঁও বন্দরের কন্টেইনার পরিচালনাও করে থাকে।
বন্দর পরিচালনার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি জেনারেটর ও ব্যাটারির ব্যবসাতেও যুক্ত। এছাড়া আরও বিভিন্ন খাতে সাইফ পাওয়ারটেকের ছয়টি সহায়ক সংস্থা রয়েছে।
অর্থবছর ২০২৩-২৪-এর বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাইফ পাওয়ারটেকের দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ১,৪৮২ কোটি টাকা, যার ৮৩ শতাংশ ন্যাশনাল ব্যাংকের কাছে।
এছাড়া, এর স্বল্পমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ৩৭৪ কোটি টাকা, যার ৮৫ শতাংশ ইউসিবির কাছে বকেয়া রয়েছে।
আর্থিক ও শেয়ারবাজার পরিস্থিতি
২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য সাইফ পাওয়ারটেক তাদের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ সুপারিশ করেছিল।
তবে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লভ্যাংশ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কোম্পানিটিকে 'জেড' ক্যাটাগরিতে নামিয়ে দিয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির একীভূত রাজস্ব ৩৮ শতাংশ বেড়ে ৪৮৩ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। একীভূত নিট মুনাফাও সামান্য বেড়ে ২৫.৮১ কোটি টাকা হয়েছে।
অর্থবছরের শেষে, কোম্পানির শেয়ার প্রতি একীভূত আয় (ইপিএস) ছিল ০.৭০ টাকা, শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য ১৭.০১ টাকা এবং শেয়ার প্রতি নিট অপারেটিং নগদ প্রবাহ ১.৮৮ টাকা।
বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে কোম্পানির শেয়ারদর ছিল ১১.৮০ টাকা, যা আগের দিনের তুলনায় ০.৮৫ শতাংশ বেশি।
কোম্পানির রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ও পরিচালন সক্ষমতা বাড়লেও ঋণ খেলাপির কারণে বিনিয়োগকারী ও অংশীদারদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
শেয়ারবাজার বিশ্লেষকদের মতে, সাইফ পাওয়ারটেকের 'জেড' ক্যাটাগরিতে নামানো মূলত এর চলমান আর্থিক সংকট ও ঋণ পরিশোধের চ্যালেঞ্জকেই প্রতিফলিত করে।
দেশের বন্দর পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও ঋণ সমস্যা প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের ওপর অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করছে।