শেয়ার কারসাজির জন্য এক ডজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ৮০ কোটি টাকা জরিমানা

তিনটি তালিকাভুক্ত কোম্পানি—সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস, ফাইন ফুডস ও ফরচুন শুজ লিমিটেডের শেয়ারের দাম কারসাজির অভিযোগে ফেব্রুয়ারিতে এক ডজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে মোট ৭৯.৯২ কোটি টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
যাদের জরিমানা করা হয়েছে, তারা হলো: মো. আবুল খায়ের (১১.০১ কোটি টাকা), আবুল কালাম মাতবর (৭.২১ কোটি টাকা), কাজী সাদিয়া হাসান (২৫.০২ কোটি টাকা), কনিকা আফরোজ (১৯.০১ কোটি টাকা), কাজী ফরিদ হাসান (৩৫ লাখ টাকা), কাজী ফুয়াদ হাসান (৩৫ লাখ টাকা), ডিআইটি কো-অপারেটিভ (৫ কোটি টাকা), মোহাম্মদ শামসুল আলম (৫৭.৫০ লাখ টাকা), মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (১ লাখ টাকা), সাজিয়া জেসমিন (৪৯ লাখ টাকা), সুলতানা পারভীন (১১ লাখ টাকা), এএএ এগ্রো এন্টারপ্রাইজ (৭৫ লাখ টাকা), আরবিম টেকনো (২৩ লাখ টাকা) ও মো. ফরিদ আহমেদ (১ লাখ টাকা)।
সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস
সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসের শেয়ার কারসাজির জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা ছয়জন ব্যক্তিকে—মো. আবুল খায়ের, আবুল কালাম মাতবর, কাজী সাদিয়া হাসান, কনিকা আফরোজ, কাজী ফরিদ হাসান ও কাজী ফুয়াদ হাসান—মোট ৭৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে ২০২১ সালের ২৮ জুন থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত তদন্ত করা হয়েছিল। তদন্ত দল সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসের শেয়ার লেনদেন-সংক্রান্ত বিভিন্ন টিআরইসি হোল্ডার কোম্পানি থেকে সংগৃহীত নথিপত্র দৈব চয়নের মাধ্যমে পরীক্ষা করেছে।
সংশ্লিষ্ট নথিপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মো. আবুল খায়ের ও তার সহযোগীরা সোনালী পেপারের ৭ লাখ ৩৭ হাজার ৭১টি শেয়ার কিনেছেন। তারা উল্লেখিত বিও অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ১১.২৭ শতাংশ লেনদেন করেছেন এবং তদন্তের সময়কালে ৭২ লাখ ক্যাপিটাল গেইন রিয়ালাইজ করেছেন। এছাড়া এই সময়কালে তাদের আনরিয়ালাইজড ক্যাপিটাল গেইন ছিল ৯.৩০ লাখ টাকা।
তদন্তে দেখা গেছে, মো. আবুল খায়ের ও তার সহযোগীরা সোনালী পেপারের শেয়ারের ধারাবাহিক লেনদেনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন।
ফাইন ফুডস
ফাইন ফুডস লিমিটেডের শেয়ারের দাম কারসাজি ও কৃত্রিমভাবে মূল্য বাড়ানোর জন্য বিএসইসি চারজন ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারী এবং দুটি প্রতিষ্ঠানকে মোট প্রায় ১.৯৬ কোটি টাকা জরিমানা করেছে।
মূল কারসাজিকারী হিসেবে চিহ্নিত মোহাম্মদ শামসুল আলমকে ৩৭.৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তার ভাই মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে, আর তার স্ত্রী সাজিয়া জেসমিনকে জরিমানা করা হয়েছে ৪৯ লাখ টাকা। এছাড়াও তার বোন সুলতানা পারভীনকে ১১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এই চারজন ব্যক্তি একই পরিবারের সদস্য।
মোহাম্মদ শামসুল আলমের সঙ্গে যুক্ত দুটি প্রতিষ্ঠানকেও জরিমানা করা হয়েছে। এএএ অ্যাগ্রো এন্টারপ্রাইজকে—যেখানে তিনি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন—৭৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আরবিম টেকনোকে জরিমানা করা হয়েছে ২৩ লাখ টাকা। তিনি এই প্রতিষ্ঠানের একজন পরিচালক।
বিএসইসি তাদের নজরদারি বিভাগের তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কমিশনের তথ্যমতে, এই সময়কালে কারসাজিকারীরা তাদের নেটওয়ার্কের মধ্যে একাধিক লেনদেন পরিচালনা করেছিল। এর ফলে মানুষের মধ্যে ভুল ধারণা তৈরি হয়েছিল যে পড়তি বাজারেও কোম্পানিটির শেয়ার আরও সক্রিয় এবং শেয়ারের চাহিদা বেশি ছিল।
তারা এই সময়ে একাধিক ব্রোকারেজ ফার্ম ও বেশ কয়েকটি বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে কৃত্রিমভাবে ক্রয়-বিক্রয় কার্যক্রমকে প্রভাবিত করেছিল। এছাড়া এই সময়কালে তারা স্টক এক্সচেঞ্জ বা নিয়ন্ত্রক সংস্থায় ঘোষণা না দিয়েই কোম্পানির ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ করেছিল, যা নিয়ম বহির্ভূত।
ফরচুন শুজ
ফরচুন শুজের শেয়ার কারসাজির জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা চার ব্যক্তি ও একটি সংস্থাকে—মো. আবুল খায়ের, আবুল কালাম মাতবর, কাজী সাদিয়া হাসান, কনিকা আফরোজ ও ডিআইটি কো-অপারেটিভ—মোট ৭৭.২ কোটি টাকা জরিমানা করেছে।
ডিএসইর মাধ্যমে ২০২১ সালের ৩ অক্টোবর থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত তদন্ত পরিচালিত হয়েছিল।
সংশ্লিষ্ট নথি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মো. আবুল খায়ের ও তার সহযোগীরা ফরচুন শুজের ১.৭১ কোটি শেয়ার কিনেছেন।
উল্লিখিত বিও অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে তারা কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৩৭.৮৪ শতাংশ লেনদেন করেছেন এবং তদন্তের সময়কালে ৭৭.১৫ কোটি টাকা ক্যাপিটাল গেইন রিয়ালাইজ করেছেন। এছাড়াও এই সময়কালে তাদের আনরিয়ালাইজড গেইন ছিল ৪২.৩৮ কোটি টাকা।