দ্য ম্যান বিহাইন্ড দ্য ক্যামেরা
এক
জন্মেছিলেন হিমালয়ের পাদদেশ জলপাইগুড়িতে; প্রকাণ্ড তুষারঝড়ের মধ্যে। জন্মের ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই মাকে হারান। ১৮৯৪ সালের ৫ নভেম্বর জন্ম নেওয়া ছেলেটির নাম রাখা হয় গোলাম কাসেম। ডাকনাম আল্লাহরাখা। সবাই ডাকতেন 'রাকু' বলে। সেই রাকুই একদিন হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের সৃষ্টিশীল আলোকচিত্রীদের অভিভাবক। সেই থেকে প্রীতিভাজনরা তাঁকে ডাকেন 'ড্যাডি' বলে।
ড্যাডি যখন ফটোগ্রাফি শুরু করেন, তখন অবিভক্ত বাংলায় মুসলমান সমাজে ছবি তোলা গর্হিত কাজ হিসেবেই বিবেচিত হতো। ওই রকম একটা বিরূপ সময়ে ক্যামেরা হাতে নিয়ে তিনি তৎকালীন রক্ষণশীল সমাজের দেওয়াল ভাঙার চেষ্টা করেন। গোটা বিশ শতকের বাঙালি জীবন বন্দী হয়ে আছে তাঁর ক্যামেরায়। পশ্চাৎপদ সমাজ আর উপনিবেশ রাজনীতির বিপরীতে তাঁর ছবিগুলো বাঙালি মুসলমান সমাজের আধুনিক হয়ে ওঠার এক অবিনাশী দলিল।
ড্যাডিই প্রথম বাঙালি মুসলমান আলোকচিত্রশিল্পী, যাঁর ছবিতে একটি নিজস্ব ঘরানা বা শৈলী তৈরি হয়েছে। তাঁর আগে কোনো বাঙালি মুসলমানের ছবিতে এ ধরনের শৈলী তৈরি হয়েছে বলে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় না। হলে নিশ্চয়ই তা কোথাও না কোথাও লিপিবদ্ধ থাকত। ফলে তাঁকে পূর্ববঙ্গের ফটোগ্রাফির রাজসাক্ষী হিসেবেই অবিহিত করা হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দুই বছর আগে এনসাইন বক্স ক্যামেরা আর গ্লাস প্লেট নেগেটিভে ছবি তোলা শুরু করেন ড্যাডি। তখন চার থেকে ছয় আনায় পাওয়া যেত ছয়টি গ্লাস প্লেট। এই ছয়টি গ্লাস প্লেটের মধ্যে দুটিতে শার্প ছবি পেলেই তিনি আনন্দে লাফিয়ে উঠতেন। কখনো কখনো ছবি খারাপ হলে বড় ভাই গোলাম কাদের তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বলতেন, 'আবার চেষ্টা করো।' নতুন প্লেট কেনার জন্য তিনি ড্যাডিকে পয়সা দিতেন। ফটোগ্রাফি ও লেখালেখির ব্যাপারে তাঁর কাছ থেকে সব রকমের প্রশ্রয় পেতেন। তাঁর এই ভাই ছিলেন তৎকালীন সময়ের একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর, সাহিত্যিক ও নৃত্যগীতের শিল্পী।
দুই
ড্যাডি যখন সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়েন, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় ড্যাডি ১৯১৫ সালে নাম লেখান কলকাতা ইউনিভার্সিটি ইনফ্যানট্রি কোরে। কলকতার ফোর্ট উইলিয়াম ও বিহারের মধুপুরে তাঁর প্রশিক্ষণ হয়। সেই সময় তিনি ক্যামেরাটাও সঙ্গে রাখার অনুমতি পান। ফলে প্রথম মহাসমরের বিরল মুহূর্তগুলো দলিল হয়ে থাকে তাঁর ক্যামেরায়। বিশ্বযুদ্ধের প্রশিক্ষণ শিবিরে বসেই তাঁর গল্প লেখার সূচনা। প্রথম গল্প 'সুন্দরী' ছাপা হয় ১৯১৮ সালের অক্টোবর মাসে 'বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা'য় [প্রথম বর্ষ, তৃতীয় সংখ্যা, কার্তিক ১৩২৫]। কোনো মুসলমান লেখকের এমন গল্প অভাবিতপূর্ব। সেই গল্প পড়েই 'সওগাত' সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন তাঁর সদ্য প্রকাশিত পত্রিকায় তাঁকে লিখতে অনুরোধ করেন। দুই মাস পর 'সওগাত' এর তৃতীয় সংখ্যায় ছাপা হয় 'ভ্রম-সংশোধন' নামের একটি গল্প। এর পর থেকে প্রতি সংখ্যায় তাঁর গল্প ছাপা হয়। গোলাম কাসেম ছিলেন বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে আধুনিক ধারার প্রথম ছোটগল্প লেখক। সওগাতযুগে তাঁকে 'শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়' বলা হতো–লিখেছেন কিংবদন্তি সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন। নাসিরউদ্দীনের লেখা থেকে জানা যায়, 'সুন্দরী' গল্প লেখার আগেও তিনি বেশ কয়েকটি গল্প লিখেছিলেন, কিন্তু ছাপার অভাবে তা পড়ে থেকে থেকে নষ্ট হয়ে যায়।
ড্যাডি যখন লেখালেখি শুরু করেন, তখন মুসলমান সমাজে পর্দানসীন নারীদের গল্প-উপন্যাসের উপজীব্য বিষয় করা নিষিদ্ধ ছিল। ধর্মের দৃষ্টিতে এটাকে গর্হিত কাজ হিসেবেই গণ্য করা হতো। সেই রকম একটা রুদ্ধ সময়ে অন্তঃপুরের নারীদের সাবলীলভাবে তুলে ধরেন ড্যাডি। ফলে গল্প-সাহিত্যে নারীরা স্থান পান কেন্দ্রীয় কিংবা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে। তাঁর গল্পের নারীদের সিংহভাগ ছিলেন প্রাগ্রসর চেতনার সঞ্জীবিত প্রতীক। ড্যাডি তাঁর লেখনীর মাধ্যমে সমাজের ভেতরগত রূপটা দেখার চেষ্টা করেছেন। তাঁর দেখার যে দৃষ্টিভঙ্গি বা ফটোগ্রাফিকে শিল্প আকারে তিনি যেভাবে দেখতে চেয়েছেন, গল্পের বর্ণনায়ও সে ব্যাপারগুলো নিখুঁভাবে ফুটে উঠেছে। ড্যাডির গল্প পড়লে মনে হয়, তিনি যেন একেকটা ছবির বর্ণনা দিচ্ছেন, চরিত্রের বয়ান দিচ্ছেন। ফলে তাঁর গল্পগুলো সহজে পাঠ করা যায়, আবার ছবির মতো দেখাও যায়।
সাতচল্লিশের আগ পর্যন্ত 'মাসিক সওগাত', 'সাপ্তাহিক সওগাত', 'সওগাত বার্ষিকী', 'শিশু সওগাত', 'দেশের কথা', 'বঙ্গনূর' ও 'বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা'য় তার লেখা ছাপা হয়। দেশভাগের পর ড্যাডি চলে আসেন পূর্ববঙ্গে। 'সওগাত'ও কলকাতা থেকে ঢাকায় স্থানান্তরিত হয়। ফলে মাসিক 'সওগাত' ছাড়াও 'মাহে-নও', 'দিলরুবা', 'মোহাম্মদী', 'সাহিত্য', 'ইত্তেফাক সাহিত্য সাময়িকী', 'বিপিএস নিউজ লেটার' ও 'ফটোগ্রাফি' ম্যাগাজিনে তাঁর বেশ কিছু গল্প ও স্মৃতিগদ্য ছাপা হয়। লেখালেখির শুরুর দিকে তাঁর কয়েকটি গল্প ছাপা হয় 'সন্দেশ' ও 'মৌচাক' পত্রিকায়–এমনটাই বলেছিলেন ড্যাডি। ১৯১৮ সাল থেকে শুরু করে পরবর্তী প্রায় আট দশক তিনি পাঠকপ্রিয় এমন অসংখ্য গল্প উপহার দেন। তাঁর শেষ গল্প 'ছবির পুরস্কার' ছাপা হয় ১৯৯৬ সালে, 'ফটোগ্রাফি' ম্যাগাজিনের ডিসেম্বর সংখ্যায়। ড্যাডি সারা জীবনে ষাটের অধিক গল্প লিখেছেন। ছড়া আর কবিতাও লিখেছেন। পুরোনো পত্রিকা আর সাময়িকপত্র ঘেঁটে এখন পর্যন্ত তার ৫০টি গল্প উদ্ধার করা গেছে।
তিন
ড্যাডির পৈতৃক বাড়ি তৎকালীন বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার মাদারীপুর মহকুমায়। তাঁর দাদা আমীনউদ্দিন ছিলেন পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর। আর বাবা খানসাহেব গোলাম রাব্বানী [১৮৬৪-১৯৪৬] ছিলেন ব্রিটিশ পুলিশের বড় কর্তা। পিতার চাকরির কারণে অবিভক্ত বাংলার নদীয়া জেলার শান্তিপুর, মালদহ, সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও সিলেটে তাঁর শৈশব কাটে। কৈশোর অতিবাহিত হয় হাওড়া ও কলকাতায়। সার্কাস, ম্যাজিক, ঘোড়দৌড় আর বায়োস্কোপের নেশায় তাঁর সময় কাটত। লেখালেখি আর ছবি তোলার কারণে পড়াশোনায় একদমই মনোযোগ ছিল না। এই হেয়ালি ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন বাবা।
যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রশিক্ষণ থেকে ফেরেন, তখন বয়স ২৩। বাবা গোলাম রাব্বানী তখন কলকাতার পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট। তিনি দেখলেন ছেলের পক্ষে বিএ পাস করা কঠিন। আর পাস করলেও সরকারি চাকরির বয়স থাকবে না। তাই চেষ্টা তদবির করে ১৯১৯ সালে ছেলেকে সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে চাকরি দিলেন। ড্যাডি যখন বাঁকুড়ায় তখন বাবা বললেন, 'তোমার ২৮ বছর হয়ে যাচ্ছে, এখন তোমাকে বিয়ে করতে হবে।' তখন বাবার আদেশ উপেক্ষা করার সাধ্য ছিল না। তাই ১৪ বছরের ছোট বাবাহারা হোসনে আরার সঙ্গে ঘর বাঁধলেন। পারিবারিক জীবনে এই দম্পতি নিঃসন্তান ছিলেন। ছয়চল্লিশে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধে। সেই দাঙ্গায় অনেক সম্পদ ও ঘরবাড়ির ক্ষয়-ক্ষতির কারণে ড্যাডির শিল্পীমনে ক্ষত তৈরি হয়। তিনি সিদ্ধান্ত নেন সপরিবারে পূর্ববঙ্গে স্থায়ী হবেন। তাই বদলি হয়ে পূর্ববঙ্গে চলে আসেন। ১৯৪৯ সালের নভেম্বর মাসে রাজশাহীর ডিস্ট্রিক রেজিস্ট্রার হিসেবে অবসর নেন। চাকরি জীবনে হাওড়া, পাদুং, বাঁকুড়া, মেদেনীপুর, নদীয়া, হুগলিসহ বাংলা অঞ্চলের যেখানেই গেছেন ক্যামেরাটা কখনো হাতছাড়া করেননি।
চার
এ দেশে ফটোগ্রাফির শিক্ষাচর্চা শুরু ও এর সাংগঠনিক ভিত তৈরি হয় ড্যাডির হাত ধরে। সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়ে ড্যাডি ঢাকায় আসেন। পূর্ববঙ্গের রাজধানী হলেও ঢাকা ছিল তখন মফস্বল শহরের মতো; সর্বত্র বিদ্যুৎ সরবরাহ ছিল না। তাই এই দেশে ফটোগ্রাফির মতো টেকনিক্যাল বিষয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করা ছিল তখন কল্পনাতীত ব্যাপার। ড্যাডি ঢাকায় এসে প্রথমে উঠলেন ১৩ মনিপুরীপাড়ার গোলাপ ভবনে, শাশুড়ির বাড়িতে। সেই বাড়িতেই ১৯৫১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতিষ্ঠা করলেন ট্রপিক্যাল ইনস্টিটিউট অব ফটোগ্রাফি। এরপর থাকার জন্য ইন্দিরা রোডে একটি জায়গা কিনে একতলা বাড়ি বানালেন। সেখানে স্থায়ী বসবাসের পাশাপাশি ট্রপিক্যাল ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম চালাতে লাগলেন।
ইতিহাস বলে, এই শিক্ষায়তনটিই এ দেশের প্রথম ফটোগ্রাফিক ইনস্টিটিউট। এই ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি চেয়েছিলেন, শিল্প হিসেবে এ দেশে ফটোগ্রাফি প্রতিষ্ঠিত হোক। কেউ ছবি তোলা শিখতে পারলেই তার আনন্দ হতো। এই স্কুল থেকে ৫০ থেকে ৬০ উৎসাহী ছাত্র ফটোগ্রাফি বিষয়ে শিক্ষা লাভ করে [সূত্র: 'ক্যামেরা', বেগার্ট ইনস্টিটিউট অব ফটোগ্রাফির অনুশীলনমূলক আলোকচিত্রণ সাময়িকী, প্রকাশকাল: এপ্রিল ১৯৭৩, পৃষ্ঠা: ৩২]।
তৎকালীন সময়ে ছাত্র না পাওয়া, আলোকচিত্র সামগ্রীর সীমাবদ্ধতাসহ নানা কারণে দুই বছরের বেশি চলল না স্কুলটা। ওই সময়ই প্রখ্যাত চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম আর ড্যাডি মিলে প্রতিষ্ঠা করেন ইস্ট পাকিস্তান অ্যামেচার ফটোগ্রাফার্স অ্যাসোসিয়েশন [সূত্র: অনুপম হায়াৎ রচিত প্রবন্ধ 'আলোকচিত্র: ১৮৪০-১৯৭০', চারু ও কারুকলা, প্রকাশক: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, প্রকাশকাল: ডিসেম্বর ২০০৭, পৃষ্ঠা: ৩৯৬]। কয়েক বছর চলার পর সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ১৯৬২ সালের ১২ আগস্ট ৭৩ ইন্দিরা রোডের বাড়িতে ড্যাডি প্রতিষ্ঠা করলেন ক্যামেরা রিক্রিয়েশন ক্লাব। সেই বাড়িকে ঘিরে এ দেশে একটি শিল্পপ্রজন্ম গড়ে উঠতে শুরু করল। ক্যামেরা রিক্রিয়েশন ক্লাবে প্রতিবছর বার্ষিকী ও বসন্ত উৎসব নামে দুটি আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনী হতো। আলোকচিত্রীরা সেখানে ফোর আর সাইজ ছবি জমা দিতেন।
এছাড়াও এই ক্লাবে প্রতি মাসে সভা হতো, ফটোগ্রাফি নিয়ে আলোচনা হতো। আলোকচিত্রী ছাড়াও সেই সভায় নিয়মিত আসতেন কবি সুফিয়া কামাল, 'সওগাত' সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন, শিল্পী কামরুল হাসান, শিল্পী আমিনুল ইসলামসহ অনেক গুণীজন। আমুদে ড্যাডি অতিথিদের গান, আবৃত্তি, ছবি এঁকে ও অভিনয় করে দেখাতেন।
পাঁচ
ড্যাডি যখন ছবি তোলা শুরু করেন, তখন শেখার জন্য তিনি কোনো শিক্ষক পাননি। ফটোগ্রাফির বইপত্রও পাওয়া যেত না। তাঁর সামনে কোনো দিকনির্দেশনাও ছিল না। স্টুডিওর কারও কাছে জানতে কিছু চাইলে তাঁরাও কলাকৌশল বলতে চাইতেন না। কলকাতায় বসবাসরত বিখ্যাত ব্রিটিশ নারী আলোকচিত্রী এডনা লরেঞ্জ ছাড়া আর কারও কাছে তিনি কোনো রকমের অনুপ্রেরণা পাননি। ড্যাডি পোর্ট্রেট ফটোগ্রাফির নিয়মকানুন শিখেছেন এডনার কাছে। অন্যকে যেন তাঁর মতো কষ্ট করে শিখতে না হয় এর জন্য তিনি ১৯৩৯ সাল থেকে 'সওগাত'-এ ফটোগ্রাফির কারিগরি বিষয় ও নন্দনতত্ত্ব নিয়ে ধারাবাহিকভাবে প্রবন্ধ লিখতে থাকেন। ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত তার ২০টি পর্ব ছাপা হয়। ১৯৭৮ সাল থেকে 'বিপিএস নিউজলেটারে' [পরবর্তী সময়ে 'মাসিক ফটোগ্রাফি'] নিয়মিতভাবে লিখতে থাকেন। 'বিপিএস নিউজ লেটার' ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রকাশিত ফটোগ্রাফি সাময়িকীতে তাঁর লেখা ছাপা হতো।
ড্যাডি ছিলেন আত্মকুণ্ঠ, প্রচারবিমুখ ও নির্জনতম মানুষ। তিনি লোকচক্ষুর আড়ালে থাকতেই স্বচ্ছন্দবোধ করতেন। ফলে জীবদ্দশায় তিনি গল্পের বই প্রকাশ করার কোনো উদ্যোগ নেননি। তবে ফটোগ্রাফি নিয়ে তিনি তিনটি গ্রন্থ রচনা করেন। ফটোগ্রাফি ক্লাব প্রতিষ্ঠার পর দেখলেন তরুণদের শেখানোর মতো কোনো বই নেই। তাই ৭০ বছর বয়সে উদ্যোগ নিলেন ফটোগ্রাফি বিষয়ে বই লেখার। ১৯৬৪ সালের আগস্ট মাসে প্রকাশিত হলো 'ক্যামেরা' নামের ছোট একটি পুস্তিকা। ড্যাডির দ্বিতীয় বই 'একনজরে ফটোগ্রাফি' প্রকাশিত হয় ১৯৮৬ সালের জুলাই মাসে। তৃতীয় বই 'সহজ আলোকচিত্রণ' প্রকাশিত হয় ড্যাডির মৃত্যুর চার বছর পর, ২০০২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর। বইটি প্রকাশ করে পাঠশালা ও দৃক।
ছয়
ড্যাডি কেন ফটোগ্রাফিতে জড়ালেন, তা এক কৌতূহল জাগানো অধ্যায়। ১৯১২ সালে ড্যাডি পড়তেন হাওড়া জেলা স্কুলে, দশম শ্রেণিতে; তখন তিনি ১৮ বছরের তরুণ। হাওড়া শহরের ১০০ মধুসূদন বিশ্বাস লেনে ড্যাডির নিজ বাড়ির পাশের বাড়িতে সহপাঠী রথিনের পরিবার থাকত। রথিনরা সম্ভ্রান্ত খ্রিস্টান। তাঁর বড় বোন এলসি, ড্যাডির চেয়ে এক বছরের বড়। রথিনের একটা এনসাইন ক্যামেরা ছিল। সেই ক্যামেরায় প্রথম ছবি তোলেন ড্যাডি।
কিন্তু ছবি পরিস্ফুটন করতে না পারায় এলসি তাচ্ছিল্যের সুরে বলেছিলেন, 'তোমার পক্ষে ছবি বানানো সম্ভব না।' কথাটা খুব গায়ে লেগেছিল ড্যাডির। ধর্মতলার স্টুডিও পাড়ায় ঘুরে ঘুরে ড্যাডি রপ্ত করলেন ছবি বানানোর টেকনিক। শেষ পর্যন্ত ডেলাইটে সেলফ টোনিং পেপারে ছবি প্রিন্ট করে সেই তরুণীর মন জয় করে ছাড়লেন।
এরপর সিদ্ধান্ত নিলেন সারা জীবন ক্যামেরা আর ফটোগ্রাফির সঙ্গে থাকবেন। মায়ের [মায়ের মৃত্যুর পর ছোট খালা জামেদা খাতুনকে বিয়ে করেন ড্যাডির বাবা] কাছ থেকে দশ টাকা নিয়ে ছয় টাকা দিয়ে কিনলেন এনসাইন বক্স ক্যামেরা। সীমিত সুবিধার কারণে কলেজে উঠে এনসাইন বাদ দেন। কলেজের যাতায়াত ভাড়া আর টিফিন খরচ বাঁচিয়ে দশ কি বারো টাকায় কেনেন কোডাক ব্রাউনি কিউ এ ক্যামেরা। এই ক্যামেরা ব্যবহার করতে করতেই ড্যাডি একদিন তাঁর বড় ভাইকে বললেন, ভালো একটা ক্যামেরা কিনে দিতে। চৌরঙ্গী থেকে সত্তর টাকা দিয়ে একটি থ্রি এ ফটোগ্রাফিক কোডাক ক্যামেরা কিনে দিলেন তাঁর বড় ভাই গোলাম কাদের।
সাত
১৯১৪ সালের ২৮ জুলাই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। ১৯১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনফ্যানট্রি কোর বা পদাতিক বাহিনী বলে একটি বিশেষ দল গঠিত হলো। ওই কোরে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই যোগ দিতে পারতেন। ড্যাডি নাম লেখালেন ওই ইনফ্যানট্রি কোরে। ক্যামেরাটাও রাখলেন সঙ্গে। ফলে অন্যরা যেখানে যেতে পারতেন না, আলোকচিত্রী হওয়ার সুবাদে তিনি সেখানে যাওয়ার অনুমতি পেতেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণের সুবাদে তিনি কলকাতা ফোর্ট উইলিয়ামে অনেক দিন ছিলেন। ফোর্ট উইলিয়ামের পর বিহারের মধুপুরে ছয় মাসের একটা রণপ্রশিক্ষণ হয়। ওখানে সাড়ে পাঁচ শর মতো ছাত্র যোগ দিয়েছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আর কর্তাব্যক্তিরা ছিলেন এই কোরের দায়িত্বে। আর প্রশিক্ষক ছিলেন ক্যাপ্টেন গ্রে।
ব্রিটিশ নাগরিক গ্রে ছিলেন খুবই মিশুক প্রকৃতির। ছাত্রদের সঙ্গে সহজেই মিশে যেতে পারতেন। ফটোগ্রাফি বিষয়ে তাঁর জানাশোনা ছিল। ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই গ্রের সঙ্গে ড্যাডির বন্ধুত্ব হয়ে যায়। ফোর্ট উইলিয়াম কিংবা মধুপুর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ড্যাডির ছবি তোলার মৌখিক অনুমতির কথা সবাই জানতেন।
মধুপুরে প্রশিক্ষণের শুরুতে সবাইকে ইউনিফর্ম দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণে বন্দুক চালনা থেকে শুরু করে শত্রু আক্রমণসহ যুদ্ধের সব রকম কলাকৌশল শেখানো হয়। প্রতিদিন সকালে নিয়ম করে প্যারেড হতো। ফলে ওই সময় ফটোগ্রাফি করার চেয়ে রণকৌশল শেখার দিকে তাঁকে বেশি মনোযোগ দিতে হয়েছে। এর মধ্যেও তিনি সময় বের করে ছবি তুলতেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তিনি যত ছবি তুলেছেন, ভারতবর্ষের আর কোনো বাঙালি এত ছবি তোলার সুযোগ পাননি। তিনি যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণের পাশাপাশি আলোকচিত্রী হিসেবেও কাজ করেছেন, এই বিষয়টিও এত দিন কোথাও উচ্চকণ্ঠে উচ্চারিত হয়নি।
ড্যাডির তোলা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মাত্র তিনটি আলোকচিত্র এখন টিকে আছে। অথচ ড্যাডির বর্ণনা অনুযায়ী প্রথম মহাযুদ্ধের তাঁর আরও অনেক ছবি থাকার কথা। এগুলো উদ্ধার হলেই ছবি পঠনের মধ্য দিয়ে তাঁকে বিস্তারিতভাবে জানা-বোঝা সম্ভব হবে। ড্যাডির সৈনিকজীবন দুই বছরের। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি সার্টিফিকেট পেয়েছিলেন। ক্যাম্প ছাড়ার পর আক্রান্ত হন ম্যালেরিয়ায়। কঠিন ম্যালেরিয়ায় দুই বছর ভোগেন। সেরে উঠতে উঠতে যুদ্ধ শেষ!
আট
ড্যাডি সারা জীবন ফটোগ্রাফি, লেখালেখি, অভিনয়, গানবাজনা, ছবি আঁকা, পাঠাগার বানানো, বাগান করা–এসবের সঙ্গেই ছিলেন। ১৯৬২ সালের শেষের দিকে ক্যামেরা রিক্রিয়েশন ক্লাবের এক ঘরোয়া আড্ডায় আলোকচিত্রের আরেক পুরোধা মনজুর আলম বেগ তাঁকে প্রথম 'ড্যাডি' বলে ডাকলেন। বললেন, 'এখন থেকে আপনি সব আলোকচিত্রীর ড্যাডি।' সেই থেকে বাংলাদেশের আলোকচিত্রীরা তাঁকে 'ড্যাডি' বলে সম্বোধন করেন। ক্যামেরা রিক্রিয়েশন ক্লাবের ট্রাস্টি শেখ আবদুর রাজ্জাক ২০২১ সালের ৯ জানুয়ারি ড্যাডির ২৩তম প্রয়াণ দিবসের এক ফেসবুক লাইভ অনুষ্ঠানে বলেন, 'বেগ সাহেব ড্যাডি ডাকার পর আরমানিটোলা ফটোগ্রাফিক ট্রেনিং সেন্টার তাঁকে "ফাদার অব ফটোগ্রাফি" উপাধি প্রদান করে।'
আন্তর্জাতিক শিল্পবিষয়ক লেখক রাহেল আইমা ২০২০ সালের ৩০ মার্চ বিশ্ববিখ্যাত অনলাইন 'আর্টনিউজ'-এর আর্ট ইন আমেরিকা বিভাগে ড্যাডির আলোকচিত্র নিয়ে একটি রিভিউ লেখেন। সেখানে তিনি গোলাম কাসেম ড্যাডিকে 'দ্য ফাদার অব বাংলাদেশি ফটোগ্রাফি' উল্লেখ করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মাসিক ম্যাগাজিন 'আর্টফোরাম'-এর মে-জুন ২০২০ সংখ্যায় শিল্পবিষয়ক লেখক স্কাই অরুন্ধতী টমাস লিখেছেন, 'গোলাম কাসেম ড্যাডি [১৮৯৪-১৯৯৮], যাঁকে সার্বজনীনভাবে বাংলাদেশের ফটোগ্রাফির জনক বলা হয়।'
আলোকচিত্রশিল্পী নাসির আলী মামুন ১৯৮৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর 'সাপ্তাহিক সচিত্র সন্ধানী'তে 'ব্যক্তিত্ব: ছবির কথা–গোলাম কাসেম' শিরোনামের এক প্রবন্ধ লিখেন। লেখক সেখানে উল্লেখ করেন, 'বাংলাদেশের আলোকচিত্রণের জগতে তাঁর উপস্থিতি একজন অভিভাবকের মতোই। আলোকচিত্রসংক্রান্ত এ দেশের প্রথম সংগঠন ক্যামেরা রিক্রিয়েশন ক্লাবের তিনি প্রতিষ্ঠাতা।'
নাসির আলী মামুন ১৯৮৮ সালের জুলাই মাসে ড্যাডির একটা দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নেন। ২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বর আদর্শ প্রকাশনী থেকে 'পূর্ব বাংলার ফটোগ্রাফি: রাজসাক্ষী গোলাম কাসেম ড্যাডি' শিরোনামে তাঁর একটি সাক্ষাৎকারভিত্তিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। লেখক এই গ্রন্থে ড্যাডিকে আমাদের সৃষ্টিশীল ফটোগ্রাফির জনক ও পূর্ব বাংলার প্রথম বাঙালি মুসলমান সার্থক আলোকচিত্রশিল্পী হিসেবে উল্লেখ করেন [পৃষ্ঠা: ২০]। 'ড্যাডি যে পূূর্ব বাংলা ফটোগ্রাফি চর্চার ইতিহাসের সফল প্রবক্তা–এ বিষয়টিও প্রচারিত হয়নি' [পৃষ্ঠা: ১৮]। তিনি আরও উল্লেখ করেন, 'তাঁর আগে কোনো বাঙালি মুসলমান ক্যামেরায় এমন কিছু সৃষ্টি করেননি, যা নিয়ে আমরা দীর্ঘ আলোচনায় মেতে উঠি।' [পৃষ্ঠা: ২২]।
নয়
ড্যাডি সারা জীবনে ছবি তুলেছেন আট থেকে দশ হাজার। ১৯১৫ সাল থেকে জমানো কাচের নেগেটিভগুলো তিনি তাঁর পুরোনো কাগজপত্রের স্তূপের ভেতর যত্ন করে রেখেছিলেন। শেষ বয়সেও তাঁর কাছে পাঁচ শর বেশি নেগেটিভ ছিল। এর মধ্যে ১৯৮৮ সালে ১৩৫টি গ্লাস প্লেট নেগেটিভ আলোকচিত্রশিল্পী নাসির আলী মামুনের ব্যক্তিগত সংগ্রহশালা ফটোজিয়ামে সংরক্ষণের জন্য দেন। এই নেগেটিভগুলো ড্যাডির জীবনের শ্রেষ্ঠ কীর্তি বলে নাসির আলী মামুন উল্লেখ করেন। শততম জন্মদিনের আগে ড্যাডি ১৬৫টি নেগেটিভ দৃক আলোকচিত্র গ্রন্থাগারকে প্রদান করেন। সিনেসিক অডিও ভিজুয়াল ক্লাবের জাহেদুল হকের কাছে পাঁচটি মিডিয়াম ফরম্যাট নেগেটিভ সংরক্ষিত ছিল। বাকি দুই শতাধিক নেগেটিভের কোনো খোঁজ নেই।
ড্যাডির ছবি দিয়ে দৃক ১৯৯৩ সালের নভেম্বর মাসে 'ওল্ড ইজ গোল্ড' ও ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে 'হোয়েন দ্য মাইন্ড সেইস ইয়েস' শিরোনামে দুটি প্রদর্শনী করে। জাহেদুল হক পাঁচটি নেগেটিভ ক্যামেরা রিক্রিয়েশন ক্লাবকে প্রদান করেন। নাসির আলী মামুন তাঁর বিভিন্ন লেখার সঙ্গে ড্যাডির তোলা আটটি ছবি প্রকাশ করেন। বাকি ১২৭টি ছবি হারিয়ে গেছে বলে ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর পাঠক সমাবেশ নিবেদিত মঙ্গল সমাবেশের ৭০তম পর্বে নাসির আলী মামুন উল্লেখ করেন।
ড্যাডির অন্তর্মুখী ব্যক্তিত্ব আর জীবনযাপনের কারণে তিনি নিজ থেকে কাউকে ছবি দেখাতেন না। ফলে তাঁর বিশাল সংগ্রহশালার অনেকটাই অজানা। তিনি যেহেতু নিঃসন্তান ছিলেন, ফলে তাঁর মৃত্যুর পর বিপুলসংখ্যক নেগেটিভ বেহাত হয়ে যায়। নেগেটিভগুলো কোথায় কিংবা কী অবস্থায় আছে; সে তথ্যও অজানা। ড্যাডির তোলা আলোকচিত্র, নেগেটিভ, গল্প, প্রবন্ধ, কবিতা, ছড়া, চিঠিপত্র, ডায়েরি, পত্রপত্রিকা, ক্যামেরা সরঞ্জামসহ ব্যবহার্য জিনিসপত্র এখন গবেষণার উপাত্ত। এসব মূল্যবান জিনিসপত্র কারও ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকলে তা প্রকাশ বা প্রদর্শন কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে। এগুলো প্রচার পেলে ড্যাডির কাজের একটা সামগ্রিক মূল্যায়ন সম্ভব হবে।
দশ
৮৬ বছর ক্যামেরা নিয়ে মেতেছিলেন ড্যাডি। ফটোগ্রাফি জীবনে শতাধিক ক্যামেরা ব্যবহার করেছেন। তাঁর প্রথম ক্যামেরা এনসাইন। পরবর্তী সময়ে কোডাক, আগফা, ভায়গল্যান্ডার, জাইস আইকন, রোবট ক্যামেরা ব্যবহার করেছেন। ৭২ খানা ছবি দিতে পারত রোবট। লাইকা ব্যবহার করেছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ই। শেষের দিকে ইয়াসিকা, অলিম্পাস, মিনোলটা, ক্যানন, মিনক্স, আগফা রেকর্ড টু, রোলি ৩৫ রেঞ্জফাইন্ডার প্রভৃতি ব্যবহার করেছেন। সর্বশেষ ক্যামেরা–পেনটেক্স কে-১০০০।
১৯৯৩ সালে বিপিএসের পক্ষ থেকে তাঁকে এই ক্যামেরাটি উপহার দেওয়া হয়। ক্যামেরাটি ছিল তাঁর নিঃসঙ্গতার সঙ্গী। ঘুমোতে যাওয়ার আগে তিনি বালিশের পাশে ক্যামেরাটি রাখতেন। যখন তাঁর খুব মন খারাপ হতো, তখন তিনি ক্যামেরাটির সঙ্গে কথা বলতেন। ক্যামেরাটিও তাঁকে সঙ্গ দিত, মনে আস্থা ফিরিয়ে দিত [শহিদুল আলমের প্রবন্ধ 'যখন মন বলে হ্যাঁ', 'সহজ আলোকচিত্রণ', প্রকাশকাল: সেপ্টেম্বর ২০০৪, পৃষ্ঠা: ১৬]।
দিনের আলোয় ছবি তুলতে পছন্দ করতেন ড্যাডি। নিতান্ত ঠেকে না গেলে ফ্লাশ ব্যবহার করতেন না। পোর্ট্রেট তোলার জন্য ইনডোর-আউটডোর সব রকম আলো ব্যবহার করতেন। ভালো পোর্ট্রেট পাওয়ার জন্য বড় অ্যাপারচারের লেন্স ব্যবহার করতেন। বেশি স্পিডের ফিল্ম ব্যবহার করতে চাইতেন না। হান্ড্রেড, হান্ড্রেড টোয়েন্টি, কখনো কখনো টু হান্ড্রেড স্পিডের ফিল্ম ব্যবহার করতেন। রঙিন ফিল্মে আগ্রহ ছিল না। তিনি মনে করতেন, রঙিন ফিল্মে আসল জিনিসটা আসে না। সাদা-কালোতে যেটা পাওয়া যায় রঙিনে তা পাওয়া যায় না। আর্ট ফটোগ্রাফির জন্য সাদা-কালোই উত্তম। তিনি বলতেন, ক্যামেরা ছবি তোলে না, ছবি তোলে পেছনের মানুষ। তাঁর বিখ্যাত উক্তি–'দ্য ম্যান বিহাইন্ড দ্য ক্যামেরা'।
ফটোগ্রাফিকে আর্ট বলেই মনে করতেন তিনি। একজন চিত্রকরকে যেমন ছবির কম্পোজিশনের দিক খেয়াল করে ছবি আঁকতে হয়, তেমনি একজন আলোকচিত্রীকেও তার বুদ্ধি ও জ্ঞান খরচ করে ক্যামেরার সাহায্যে সেই রকম ছবি ধরতে হয়। তিনি মনে করতেন, এ বিষয়ে ফটোগ্রাফারদের কৃতিত্ব আরও বেশি। কেননা চিত্রশিল্পী ইচ্ছেমতো তুলির সাহায্যে ছবির রূপ দিতে পারেন। কিন্তু আলোকচিত্রশিল্পীকে ক্যামেরার সামনে যা থাকে, তা গুছিয়ে একনিমেষে ছবি সৃষ্টি করতে হয়।
চাকরিজীবনে সমস্ত সঞ্চয় ড্যাডি বিলিয়ে দিয়েছিলেন ফটোগ্রাফির কল্যাণে। অনেকে তাঁকে বলতেন, 'আপনি যে সারা জীবন ফটোগ্রাফি করলেন, এতে আপনার লাভ কী হলো?' ড্যাডি বলতেন, 'এদিক থেকে দেখলে ফটোগ্রাফি করে পয়সাকড়ি কিছুই হয়নি, বরং আর্থিক ক্ষতিই বেশি হয়েছে। কিন্তু ফটোগ্রাফি আমাকে যা দিয়েছে, চাকরি কোনো দিন তা দিতে পারত না। আমার জীবনে ছবি না থাকলে, ফটোগ্রাফি না থাকলে এত বড় বড় মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব হতো না। এত মানুষের ভালোবাসা, খাতির-যত্ন পাওয়া যেত না। এই যে এত মানুষের সঙ্গে পরিচয়, সৌহার্দ্য লাভ; এটি সামান্য ব্যাপার নয়।'
ড্যাডিকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনার কোন কর্মটি স্থায়িত্ব পাবে–গল্প না ছবি? ড্যাডি বলেছিলেন, 'মানুষ কোনটা কীভাবে নেবে, বলতে পারব না। তবে আমার এ সামান্য জীবন থেকে কেউ যদি কোনো রকম অনুপ্রেরণা পায়, এর থেকে মস্ত বড় কথা আর হতে পারে না।'
এগারো
১০৪ বছরের জীবন ছিল ড্যাডির।
এই দীর্ঘ জীবন তিনি উৎসর্গ করেছেন আলোকচিত্রশিল্প আর সাহিত্যসাধনা কর্মে। খুব সাধারণ যাপনের মধ্যেও যে বর্ণাঢ্য জীবন বয়ে নেওয়া যায়, তা সাহিত্য আর আলোকচিত্রের বোদ্ধাদের দেখিয়েছিলেন তিনি। ড্যাডি সম্পর্কে প্রথিতযশা কবি ও কথাসাহিত্যিক আবদুল মান্নান সৈয়দ লিখেছেন, 'আলোকচিত্রীরা যাঁকে গোলাম কাসেম ড্যাডি বলেন, তিনি তাঁদের পিতৃস্বরূপ। আমাদের গল্পকারেরা জানেনই না, তিনি আমাদের গল্পেরও পুরোধাপুরুষ। সম্ভবত তাঁর কালে ও রকম অবিরাম গল্পে নিবিষ্ট ছিলেন না আর কেউ।' [সূত্র: স্মারক-সংবাদী ফরিদা হোসেন, ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ, প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০১৫, পৃষ্ঠা: ১৭]। ৩১ ডিসেম্বর ১৯৭৮ ইত্তেফাক সাহিত্য সাময়িকী 'রবিবাসরীয় ইত্তেফাক' উল্লেখ করে–'গোলাম কাসেম মুসলিম লেখকদের ভেতর প্রথম সার্থক গল্পকার। তাঁর শিল্পকর্মে আধুনিক আঙ্গিক এবং সমকালীন সমাজ জীবন অন্তর্বর্তী হয়ে উঠেছে।'
মুসলিম সমাজে আধুনিক গল্প লেখার কৃতিত্বের জন্য তিনি ১৯৭৭ সালে নাসিরউদ্দীন স্বর্ণপদক পান। ১৯৮৬ সালে সিনেসিক অডিও ভিজ্যুয়াল ক্লাব পদক ও চট্টগ্রাম ফটোগ্রাফিক সোসাইটি থেকে সিপিএস পদক লাভ করেন। ১৯৮৮ সালে ক্রিয়েটিভ ফটোগ্রাফার্স বাংলাদেশ এর প্রথম আন্তর্জাতিক স্যালোনে তাঁর নামে পদক প্রবর্তন করা হয়। তিনি ইন্ডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ফটোগ্রাফিক কাউন্সিল [আইআইপিসি], বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটি [বিপিএস] ও ক্রিয়েটিভ ফটোগ্রাফার্স বাংলাদেশের সম্মানিত ফেলো। ২০০৪ সালে তৃতীয় আন্তর্জাতিক ছবি মেলায় তাঁকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়। প্রতিবছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তাঁর নামে স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করে দৃক। সাম্প্রতিক কালে 'কাউন্টার ফটো' তাঁর নামে একটি ক্লাসরুম স্থাপন করে।
ড্যাডির মৃত্যুর পর ইতিহাসের আবিলতায় হারিয়ে যান ড্যাডি। এই লেখককের সম্পাদনায় ২০২১ সালে পাঠক সমাবেশ থেকে প্রকাশিত হয় চার খণ্ডের ড্যাডিসমগ্র [গল্প, প্রবন্ধ, আলোকচিত্র ও দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থমালা]।
বারো
ড্যাডি কখনো পেশাজীবী আলোকচিত্রী হতে চাননি। তিনি জানতেন, পেশাজীবিতা শিল্পচর্চার জন্য বড় বাধা। তাই সৌখিনভাবেই তিনি শিল্পচর্চায় নিমগ্ন থাকতে চেয়েছেন। ফলে কোনো প্রতিযোগিতায় তিনি ছবি পাঠাতেন না। তবু কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার তাঁর ভাগ্যে জুটে যায়। রাজশাহীর ডিস্ট্রিক রেজিস্ট্রার থাকাকালে একদিন তিনি তাঁর পালিত কন্যা আনোয়ারার একটি ছবি তোলেন। সকালের নরম রোদে পুকুর ঘাটলায় কাপড় কাচছিলেন আনোয়ারা। কন্যাকে বুঝতে না দিয়ে দূর থেকে ছবিটি তুলেছিলেন ড্যাডি। বড় প্রিন্ট করে মেয়েকে চমকে দিয়েছিলেন। পরে মেয়েও চমকে দিয়েছিলেন বাবাকে। বাবাকে না জানিয়ে আনোয়ারা সেই প্রিন্টটি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন অল পাকিস্তান আগফা ফটো কনটেস্টে। মাস দুয়েক পর খবর আসে, ছবিটি প্রথম পুরস্কার জেতে। পুরস্কার হিসেবে আসে একটি রোলফিল্ম ক্যামেরা আর অভিনন্দনপত্র।
ইংল্যান্ড থেকে প্রকাশিত 'কোডাক' ম্যাগাজিনের আলোকচিত্রবিষয়ক ফর্মুলা পড়ে ড্যাডি ফটোগ্রাফি বিষয়ে সমৃদ্ধ হয়েছিলেন। ফলে সেই ম্যাগাজিনের নানা প্রভাবও আছে তাঁর সামগ্রিক ফটোগ্রাফি চর্চায়। ম্যাগাজিনটি পরবর্তী সময়ে বোম্বে থেকে ছাপা শুরু হয়। সেই ম্যাগাজিনে প্রতি মাসে ছবির প্রতিযোগিতা হতো। কম বয়সী ড্যাডি সেখানে ছবি পাঠাতেন। ওই ম্যাগাজিন থেকে ড্যাডি বেশ কয়েকটা পুরস্কার পেয়েছিলেন। পুরস্কার পাওয়া ছবিগুলো কোডাক ম্যাগাজিনে ছাপাও হয়েছিল [সূত্র: শাকুর মজিদের প্রবন্ধ 'গোলাম কাসেম ড্যাডি: এক ছবি পাগলা বুড়ো শিশুর গল্প', 'মাসিক টইটম্বুর', জুলাই ১৯৯২, পৃষ্ঠা: ১২-১৩]।
জীবনের একেবারে উপান্ত সময়ে ড্যাডি তাঁর নিজের নামে একটি আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা করতে চেয়েছিলেন। প্রতিযোগিতার বিষয় নির্ধারণ করেছিলেন 'পোর্ট্রেট' বা 'মানুষের ছবি'। সেই প্রতিযোগিতার খবর প্রকাশের জন্য ১৯৯৭ সালের ১৯ নভেম্বর 'ফটোগ্রাফি' পত্রিকার সম্পাদককে তিনি একটি চিঠিও পাঠিয়েছিলেন। ১৯৯৮ সালের ৩১ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ছবি জমা দেয়ার শেষ দিন ছিল। কিন্তু এর তিন সপ্তাহ আগেই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে অসীমে চলে যান ড্যাডি। ফলে তাঁর শেষ ইচ্ছা অপূর্ণই থেকে যায়। ড্যাডির মৃত্যুর পর চিঠিটি 'ফটোগ্রাফি'র জানুয়ারি-এপ্রিল ১৯৯৮ সংখ্যায় ছাপা হয়। এটি ড্যাডির শেষ লেখা বলে প্রকাশনাটি উল্লেখ করে।
তেরো
ড্যাডির ছিল শিকারের নেশা। একসময় তিনি বন্দুক দিয়ে পশুপাখি শিকার করতেন। পরবর্তী জীবনে সেই তিনিই হয়ে গেলেন অবহেলিত পাখিপশুর বিশ্বস্ত অভিভাবক। বাস্তব উপলব্ধিই মানুষের বোঝাপড়ার বাঁক বদলে দেয়। নিজের সন্তান ছিল না বলে নৃত্যাচার্য বুলবুল চৌধুরীকে পুত্রস্নেহে দেখতেন। তিনি যখন বাঁকুড়ার সাব-রেজিস্ট্রার, বুলবুল চৌধুরীর বাবা তখন সেই থানার দারোগা। বুলবুল চৌধুরী তাঁর শিল্পীজীবনের অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন ড্যাডির কাছ থেকে। বারো বছরের বুলবুলকে নিয়ে ড্যাডি মাছ ধরতে যেতেন, পাখি শিকারের সঙ্গী করতেন। একদিন এক ঝাঁক হরিয়ালকে গুলি করতেই দুটি মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। একটি তখনো জীবিত।
সেটিকে হাতে তুলে দরদভরা চোখে বুলবুল বললেন, 'ওর চোখ দুটি দেখুন; কত করুণ আর ব্যাথায় ভরা। না, চাচা, আপনি আর কখনো পাখি শিকার করবেন না।' এর পর থেকে ড্যাডি আর কখনো পাখি শিকার করেননি। পরবর্তী জীবনে ড্যাডি কিন্তু বিড়াল-কুকুর আর পশুপাখি নিয়ে থাকতেন। তাঁদের নিজ হাতে খাওয়াতেন। বিড়ালগুলো তাঁর কোলে এসে বসত; তাঁর ভাষা বুঝত, কথা শুনত। ড্যাডি মনে করতেন, মানুষ অকারণে মানুষকে ছেড়ে যায়, কষ্ট দেয়। কিন্তু পশুপাখি অযথা কখনোই সম্পর্ক ছিন্ন করে না।
এরমধ্যে একটি দুঃখের ঘটনাও আছে। পালিত কন্যা আনোয়ারা ছিলেন ড্যাডির ছোট বোন রাজিয়া খাতুনের মেয়ে। একদিন বেড়াতে যাবার নাম করে আনোয়ারার বাবা-মা ড্যাডির কাছ থেকে মেয়েকে তাদের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান। ড্যাডিকে না জানিয়েই তাঁরা মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেন। এই ঘটনায় ড্যাডি খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। এরপরও ড্যাডির সঙ্গে তাঁর কন্যার সম্পর্ক ছিন্ন হয়নি। ড্যাডি জানতেন, তখনকার বিয়েতে কনের সম্মতি আমলে নেওয়া হতো না। ড্যাডির সমস্ত আবদার ছিল তাঁর এই মেয়ের কাছে। অসুস্থ কুকুরের কাশির ওষুধ চেয়েও মেয়েকে চিঠি লিখতেন।
চৌদ্দ
শিল্পচর্চাই ছিল ড্যাডির ধ্যান-জ্ঞান। তবে সময় ও নিয়ম মেতে চলতেন কঠোর ভাবে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সৈনিক জীবনের শিক্ষাটা তিনি সারা জীবন ধরে রেখেছিলেন। প্রতিদিন ভোর সাড়ে চারটায় তিনি ঘুম থেকে উঠতেন। শয্যায় যেতেন রাত ৮টার মধ্যে। খুব অল্প খেতেন, তবে সময় মতো খেতেন। এই নিয়মের হেরফের হয়নি কখনো। তাই শরীরটাও সব সময় ভালো গেছে। বিলাসিতা কিংবা অপচয় তাঁর জীবনে ছিল না।
তবে শেষ জীবনটা খুব ভালো কাটেনি তাঁর। একেবারে অন্তিম সময়ে তাঁকে দেখভাল করার মতো লোক ছিল না। কানে কম শোনা চোখে আবছা দেখতে পেতেন বলে বাইরের লোকজন ঘর ঢুকে নানা জিনিস নিয়ে যেত। ফলে কাজের সময় প্রয়োজনীয় জিনিস খুঁজে না পেলে খুব সমস্যায় পড়তেন। কোনো কিছু দরকার হলেই আনোয়ারাকে চিঠি লিখতেন। আনোয়ারা তাঁর ছেলেদের দিয়ে দরকারি জিনিসপত্র পাঠাতেন। মাঝে মাঝে ফকিরাপুলের বাসা থেকে বাবাকে দেখতে আসতেন।
১৯৯০ সালের ১১ জুন আনোয়ারাকে ড্যাডি লিখেছেন–'এ বয়সটা একটা অভিশাপ বিশেষ। কোনো শক্তি সামর্থ্য নেই। সামান্য কাজ করাও সম্ভব হয় না। একটা ছোট্ট জিনিসও প্রকাণ্ড পাহাড়ের মতো মাথা তুলে দাঁড়ায়।'
১১ জানুয়ারি ১৯৯২ তারিখে এক চিঠিতে ড্যাডি লিখেছেন, 'আচার না হলে আমার চলে না। কিন্তু জিনিসের অভাবে তা তৈয়ার করতে পারছি না। কয়েক দিন ধরে তেঁতুলের চেষ্টা করেছি কিন্তু তেঁতুল পাই না। তুমি একটু কষ্ট করে এক পোয়া তেঁতুল পাঠিয়ে দাও।'
১৯৯৮ সালে জানুয়ারি মাসে খুব শীত পড়েছিল, গত শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহতম শীত! দশ দিন সূর্যের দেখা পাওয়া যায়নি। একটি কম্বল চেয়ে মেয়ের কাছে চিঠি লিখেছিলেন। নতুন কম্বলে বাবার শরীর মুড়িয়ে দিয়ে নিশ্চিন্তে বাসায় ফিরেছিলেন মেয়ে। কিন্তু নির্জন একাকী ঘরে সেই কম্বলটাও তিন-চার দিন পর নিয়ে যায় কেউ। আর সেই সুযোগে দানব শীত ড্যাডির শরীরটাকে একেবারে বরফ বানিয়ে দেয়।
পনেরো
'শত বছর বেঁচে থাকা তেমন কোনো কৃতিত্বের ব্যাপার নয়। কাজই মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। পৃথিবীর জন্য, মানুষের জন্য কতটা করতে পারলাম, সেটাই বড় কথা'–শততম জন্মদিনের অনুষ্ঠানে এভাবেই নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করেছিলেন ড্যাডি। পরের দিন দৃকে নিজের প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, 'ফটোগ্রাফির মাধ্যমে পৃথিবীর মানুষ একে অপরকে চিনবার সুযোগ পায়, তাঁদের মধ্যে একটা প্রীতির বন্ধন গড়ে ওঠে। এটা মানুষের বিরাট অবদান বলতে হবে।'
১৯৯৬ সালে, ১০২ বছর বয়সে বাংলাদেশে ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটোর প্রথম প্রদর্শনীর উদ্বোধন করতে এসেছিলেন ড্যাডি। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি সেদিন শরীরের বয়স আর ভারক্রান্ত হওয়ার বাঁধাকে জিততে তাঁর সংগ্রামের কথাগুলো বলেছিলেন। ড্যাডি বলছিলেন–'আমার শরীর বলে "না", কিন্তু মন বলে তোমাকে পারতেই হবে। শেষ পর্যন্ত যে জেতে, সে হলো মন।'
৯ জানুয়ারি ১৯৯৮, শরীরখানা শেষবারের মতো 'না' করল আর মনটা উড়াল দিল।
লেখক: আলোকচিত্রশিল্পী ও গবেষক।