‘অসতর্ক থাকলে ফার্স্ট ওয়েভের চেয়েও ভয়াবহ হতে পারে সেকেন্ড ওয়েভ’

কোনো সমাজের জনগোষ্ঠীর আচরণ ও কার্যবিধির ওপরই নির্ভর করে ওই অঞ্চলের সংক্রমণ হারের ওঠানামা।
সব দেশে যখন কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার কমে আসার পর, জনসাধারণ কিছুটা উদ্বেগমুক্ত হওয়ার পরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে তাদের মধ্যে উদাসীনতা দেখা দেয়।
ফলস্বরূপ আবারও সংক্রমণের হার বাড়তে শুরু করেছে। আমাদের দেশেও এটিই ঘটেছে।
এটি সত্যি যে জীবিকা নির্বাহের তাগিদে আমাদের সবার ঘরে থাকা সম্ভব নয়।
তবে, বাইরে যাওয়ার সময় আমরা আর স্বাস্থ্যবিধিও মেনে চলছি না। এবার দৃশ্যপটে আরেকটি নতুন ব্যাপারও যুক্ত হয়েছে।
যারা আগে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেন, তারাও এখন আর মানছেন না। ভ্যাকসিন গ্রহণের কারণে তারা নিরাপদে আছেন এমনটাই ধারণা তাদের।
ফলে তারা নিজেরা আক্রান্ত হচ্ছেন, একইসঙ্গে অন্যদেরও আক্রান্ত করছেন।
সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ার আরেকটি কারণ হল বর্তমানে অনেকেই মাস্ক পরা ছাড়াই বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন।

জনাকীর্ণ কক্ষ ও রেস্টুরেন্টে এসব অনুষ্ঠান হচ্ছে, গরমের দিন হওয়ায় ফ্যান বা এয়ার কন্ডিশনার চালু করার প্রয়োজন পড়ে। বদ্ধ বাতাসে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে এবং সহজেই একজন থেকে আরেকজনের সংক্রমণ হয়।
আমরা এখনও জানি না ভাইরাসের নতুন কোনো ধরন এবারের সংক্রমণ হার বৃদ্ধির জন্য দায়ী কিনা।
গত জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের নতুন ধরনও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। ওই ধরনটির সংক্রমণ তেমন ছড়াতে পারেনি।
আমাদের দেশেই ভাইরাসের নতুন কোনো ধরন তৈরি হয়েছে কিনা জিনোম সিকুয়েন্সিং এর মাধ্যমে তা জানার চেষ্টা করছি আমরা। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া শেষে আমরা এব্যাপারে নিশ্চিত তথ্য জানতে পারবো।
বর্তমানে প্রতিদিন ১ হাজারের বেশি মানুষ কোভিড-১৯ আক্রান্ত হচ্ছেন।
আমাদের এসব রোগীদের পর্যবেক্ষণ করতে হবে, তারা আইসোলেশনে আছেন কিনা, চিকিৎসা পাচ্ছেন কিনা এগুলো খেয়াল রাখতে হবে। এই কঠিন সময়ে আমাদেরই তাদেরকে সাহায্য করতে হবে।
সবকিছু পুনরায় খুলে দেওয়ায় আমরা কেউ ঘরে থাকতে পারছেন না, যতোক্ষণ পর্যন্ত কেউ গুরুতর অসুস্থ না হন। ফলে তারা প্যারাসিট্যামল খেয়েই কাজে কাজে যাচ্ছেন, এভাবেও সংক্রমণ বাড়ছে।

আমাদের এসব মানুষকে সাহায্য করতে হবে, বিশেষত নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীকে খাদ্যের যোগান ও চাকুরি থেকে ছাটাই হবেন না এমন আশ্বাস দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।
আমরা একাজে ব্যর্থ হলে সংক্রমণের হার কমিয়ে আনা সম্ভব হবে না।
গত বছরের নভেম্বরে, শীতের মধ্যখানে আমরা সেকেন্ড ওয়েভের সংক্রমণের ব্যাপারে জনসাধারণকে বেশ সতর্ক থাকতে দেখেছি। সবাই নিয়মিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছিলেন, এ ব্যাপারটিই সংক্রমণ কমিয়ে আনতে সাহায্য করেছে।
আমরা এখনও একাজটি করতে পারি। এখনও সংক্রমণ হার কমিয়ে আনা সম্ভব।
আক্রান্তদের জন্য আমাদের যথাযথ কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
অন্যথায়, আবারও সংক্রমণ হার মাত্রা ছাড়াবে। ফার্স্ট ওয়েভের চেয়েও গুরুতর হতে পারে সেকেন্ড ওয়েভ।
ফার্স্ট ওয়েভ মোকাবেলা করতে পেরেছি আমরা। আমাদের জরুরি ভিত্তিতে নির্দিষ্ট কার্যবিধি নির্ধারণ করে এগোতে হবে। প্রয়োজনে যেসব স্থানে সংক্রমণের হার বেশি, সংক্রমণ ঠেকাতে আমাদের ওইসব এলাকা লকডাউনের আওতায় আনতে হবে।
কোভিড-১৯ টেস্টের ফি প্রত্যাহার করতে হবে সরকারকে।
যদিও টেস্ট ফি এখনও কম, তবে যে কোনো শ্রেণি-পেশার মানুষের জ্বর বা অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিলে তারা যাতে বিনামূল্যে টেস্ট করাতে পারেন সরকার তা নিশ্চিত করবে এমনটাই চাই আমরা।
আক্রান্তরা যাতে আইসোলেশনে থাকার সুযোগ পান তাও নিশ্চিত করতে আমাদের।

যদিও ইতোমধ্যে আক্রান্তদের পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে, তবে তা যথেষ্ট নয়।
গুরুতর অসুস্থরা যাতে অ্যাম্বুলেন্স সেবা ও হাসপাতালে যাওয়ার সুবিধা পান তা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদেরও কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকে।
এছাড়া স্বাস্থ্যবিধির নির্দেশিকা মেনে চলার জন্য সচেতনতার প্রসার প্রয়োজন। জনাকীর্ণ স্থানগুলোতে, বিশেষত মার্কেট ও অফিসগুলোতে উপযুক্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
টিকাদান কর্মসূচিও আরও দ্রুত এগিয়ে নিতে হবে। মানুষ যখন ভ্যাকসিন নেবেন, গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তির ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে। হাসপাতালগুলোর ওপর চাপও কমে আসবে সেইসঙ্গে।
ডা. মুশতাক হোসেন রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা।
অনুবাদ: রাফিয়া তামান্না
লেখাটি ইংরেজিতে পড়ুন: 'The second wave may be bigger than first one, if we remain careless'