Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Tuesday
July 29, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
TUESDAY, JULY 29, 2025
চীন-মার্কিন বাণিজ্য সংঘাত নাকি ক্ষমতার পালাবদল?

মতামত

সোহেল রানা
07 August, 2019, 04:45 pm
Last modified: 05 September, 2019, 09:58 am

Related News

  • বাংলাদেশে ‘সুশৃঙ্খল, সফল ও অংশগ্রহণমূলক’ নির্বাচন চায় চীন
  • চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কি সত্যিই বিশ্বের সেরা?
  • মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনায় দগ্ধদের সহায়তায় ২৪ জুলাই ঢাকায় আসছে চীনের চিকিৎসক দল
  • চীনের বিশাল বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে প্রতিবেশী ভারত ও বাংলাদেশের উদ্বেগ কেন?
  • মস্তিষ্কপ্রযুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে চীন, মাস্কের নিউরালিংকের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে

চীন-মার্কিন বাণিজ্য সংঘাত নাকি ক্ষমতার পালাবদল?

চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়াং-ই ২০১৮ সালে নিউ ইয়র্কে বলেছিলেন, “একটা গ্লাস ভাঙা সহজ, কিন্তু জোড়া লাগানো কঠিন। আমাদের বর্তমান দূরত্ব হয়তো একসময় কমে আসবে, কিন্তু তা কখনোই আগের অবস্থায় ফিরে যাবে না। আমাদের গ্লাসটা এখনও পুরোপুরি ভেঙে যায়নি ঠিকই, কিন্তু যে ফাটল ধরেছে তার দাগ থেকেই যাবে। ”
সোহেল রানা
07 August, 2019, 04:45 pm
Last modified: 05 September, 2019, 09:58 am
ছবি: সংগৃহীত

বাণিজ্য সংঘাত, যা পশ্চিমা বিশ্ব বলছে ট্রেড ওয়ার, হচ্ছে বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতার পালটা ব্যবস্থা হিসাবে দুই বা ততোধিক রাষ্ট্রের একে অপরের উপর আমদানি-রপ্তানি শুল্কারোপ বা আরো অন্যান্য বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা। আর  ইদানিং এই সংঘাত বিশ্ববাসীর সামনে নতুন করে নজরে এসেছে যখন পৃথিবীর দুই শক্তি, চীন আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এতে নিজেদেরকে নতুন করে জড়িয়েছে। 

চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়াং-ই ২০১৮ সালে নিউ ইয়র্কে বলেছিলেন, “একটা গ্লাস ভাঙা সহজ, কিন্তু জোড়া লাগানো কঠিন। আমাদের বর্তমান দূরত্ব হয়তো একসময় কমে আসবে, কিন্তু তা কখনোই আগের অবস্থায় ফিরে যাবে না।  আমাদের গ্লাসটা এখনও পুরোপুরি ভেঙে যায়নি ঠিকই, কিন্তু যে ফাটল ধরেছে তার দাগ থেকেই যাবে। ”

তার প্রমাণ মেলে সে বছরই , পরস্পরের উপর পাল্টাপাল্টি শুল্কারোপের মধ্য দিয়েই  শুরু হয় দুই দেশের মধ্যে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এই অর্থনৈতিক দ্বন্দ্ব। সর্বশেষ তা তীব্র আকার ধারণ করে চলতি বছরে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে হুয়াওয়েকে নিষিদ্ধ করা হয়।

তবে এই সংঘাত মেটাতে উভয় পক্ষই গত এক বছর ধরে দেনদরবার চালিয়ে আসলেও কোন উপসংহারে পৌঁছাতে পারেনি।  বরং গত মাসের শেষে যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর নতুন করে শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত নেয়।    

চীন -মার্কিন বাণিজ্য সংঘাতের প্রেক্ষাপট

যুক্তরাষ্ট্রের অনেক দিন ধরে অভিযোগ করে আসছে, চীন মার্কিন কোম্পানিগুলোর বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ চুরি করার পাশাপাশি তাদের চীনের কাছে প্রযুক্তি হস্তান্তরে বাধ্য করছে। চীন ভর্তুকি ও অন্যান্য সহায়তার মাধ্যমে অন্যায্যভাবে দেশীয় কোম্পানির স্বার্থ রক্ষা করছে। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, চীন যেন বাণিজ্যনীতিতে পরিবর্তন আনে। আর দেশটি যেন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আরও বেশি পণ্য কিনে দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরও অভিযোগ, ‘চীন গত কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে আমেরিকা থেকে অন্যায়ভাবে অর্থনৈতিক সুবিধা নিচ্ছে। প্রতি বছরে চীন আমেরিকা থেকে ৪০ থেকে ৬০ হাজার কোটি ডলার হাতিয়ে নিচ্ছে। তিনি এও দাবি করেন, তিনি ক্ষমতায় আসার পরপরই চীন থেকে শুল্কারোপের মাধ্যমে কয়েক শ কোটি ডলার পাচ্ছে আমেরিকা।

অপরদিকে চীনের অভিযোগ হলো, যুক্তরাষ্ট্র তাদের বিরুদ্ধে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য সংঘাত শুরু করেছে। এবং তারা এও জানিয়ে দিয়েছে, অর্থনীতিতে বৃহত্তর কাঠামোগত পরিবর্তন আনার ইচ্ছা এই মূহূর্তে তাদের নেই।

বাণিজ্য সংঘাতের ধারাবাহিক ঘটনা প্রবাহ

২০১৮ সালের ৮ মার্চ ইউরোপ ও চীন থেকে আমদানী করা স্টিলে ২৫% ও এলুমিনিয়ামে ১০% অতিরিক্ত শুল্কারোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। 

কিন্তু ২২ মার্চ  ইউরোপের দেশগুলোর ওপর আরোপিত শুল্ক বাতিলের ঘোষনা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। তবে চীনের ওপর তা বহাল থাকে।  একই দিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ৫০ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের আমাদানিকৃত চীনা পণ্যের ওপর শুল্কারোপের জন্য এক আদেশে সই করেন। ট্রাম্পের  অভিযোগ, চীন চুরি করছে! মানে, আমেরিকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে চীন মেধাসম্পদ চুরি ও স্থানান্তর করছে। 

৩ এপ্রিল ২০১৮ চীনের ৫০০০ কোটি ডলারের পণ্যের নতুন তালিকা তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্র। আর চীনও জবাব দিতে ছাড়েনি। তারা তৈরি করে সয়াবিন, গাড়ি বিমানসহ মার্কিন পণ্যের তালিকা। সেই মাসেই আমেরিকা থেকে আমদানি করা ১২৮ টি পণ্যের ওপর ২৫% শুল্ক বৃদ্ধি করে তারা, যার আর্থিক পরিমান দাঁড়ায় প্রায় ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার। 

১৯ মে ২০১৮ মার্কিন বাণিজ্য ঘাটতি ঘোচাতে খসড়া চুক্তি সাক্ষরিত হয়।  দু’দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা হবার পর সম্ভাব্য বাণিজ্য সংঘাত স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় উভয় পক্ষ। ফলে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হতে শুরু করে।

কিন্তু  বিশ্ব শাসন করা এই দুই মোড়লের দ্বন্দ্ব তো এত সহজে মিটবার নয়। 

১৫ জুন ২০১৮, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প  চীনের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্কারোপের ঘোষণা দিয়ে বসেন। এবার  ৫,০০০ কোটি ডলার মূল্যের পণ্যের উপর ২৫% আমদানী শুল্কারোপ করা হয়। 

আর এই ঘোষণা অনুযায়ী ৬ জুলাই বার্ষিক ৩৪০০ কোটি ডলার বাণিজ্য হয় এমন ৮১৮টি চীনা পণ্যের ওপর ২৫% শুল্ক বসানো হয়। একই দিন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫৪৫টি পণ্যের ওপরও চীন ২৫% শুল্ক আদায় শুরু করে।

২৩ আগস্ট ২০১৮ চীনের আরও ১৬০০ কোটি ডলারের পণ্যের ওপর শুল্কারোপ কার্যকর করে যুক্তরাষ্ট্র। পাল্টা ব্যবস্থা হিসাবে চীনও ১৬০০ কোটি ডলারের মার্কিন পণ্যে ২৫% শুল্কারোপ করে। 

২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, যুক্তরাষ্ট্র ২০,০০০ কোটি ডলারের চীনা পণ্যের ওপর ১০% শুল্ক ঘোষণা করে ।  আরও ৬০০০ কোটি ডলারের চীনা পণ্যে আবগারি শুল্ক আরোপ করা হয়। 

২০১৮ সালের ৩০ নভেম্বর- ১ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনায় অনুষ্ঠিত হয় অর্থনৈতিক দিক থেকে প্রভাব প্রতিপত্তিশীল ১৯ টি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের নিয়ে গঠিত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন। ঐ সম্মেলনে দুই দেশের নেতা বৈঠকে বসেন। ঐ বৈঠক থেকে জানানো হয় ৯০ দিন পর্যন্ত তাদের মধ্যে শুল্কারোপ স্থগিত থাকবে। আর যদি এর মধ্যে কোন সমঝোতা না হয় ,তাহলে ২০% শুল্ক ধার্য করা হবে।  

১ ডিসেম্বর ২০১৮ এই সংঘাতের তুঙ্গে ওঠে যখন ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের অভিযোগে কানাডায় চীনা মোবাইল কোম্পানি হুয়াওয়ের শীর্ষ নির্বাহী, মেং ওয়ানঝুকে  আটক করা হয়। এই গ্রেপ্তারের পর অ্যাপল পণ্য বর্জন করতে শুরু করে চীনারা।

১৪ ডিসেম্বর ২০১৮ সমঝোতার লক্ষ্যে নতুন করে শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত বাতিল এবং নতুন করে আলোচনা শুরু করে উভয় পক্ষ। 

৬ মার্চ ২০১৯ রেকর্ড পরিমান মার্কিন বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দেয়, যার পরিমান দাঁড়ায় ৬২১ বিলিয়ন ডলার। 

৫ মে ২০১৯ চীনের ২০,০০০ কোটি ডলার পণ্যের ওপর ১০% থেকে বাড়িয়ে ২৫% শুল্কারোপ করার সিদ্ধান্ত নেয় মার্কিন প্রশাসন। 

দুই দেশের বিরোধ মেটাতে  উভয় পক্ষ পুণরায় ৯ মে ২০১৯ ওয়াশিংটনে বৈঠকে বসেন। কিন্তু কোন সমঝোতা ছাড়াই শেষ হয় তাদের সেই আলোচনা। উপরন্তু বৈঠক শেষ হবার সাথে সাথে ট্রাম্প ২০,০০০ কোটি মার্কিন ডলার সমমূল্যের চীনা পণ্যের ওপর নতুন করে আমদানী শুল্কারোপের ঘোষণা আসে যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে।  

১৩ মে ২০১৯ যুক্তরাষ্ট্রের ৬০,০০০ কোটি ডলারের পণ্যের ওপর শুল্কারোপের ঘোষণা দেয় চীন। আর তা কার্যকর হয় ১ জুন ২০১৯ থেকে।    

১৫ মে ২০১৯ ট্রাম্প প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে হুয়াওয়েকে যুক্তরাষ্ট্রে ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করে। এতে সরকারি অনুমোদন ছাড়া মার্কিন সংস্থা থেকে হুয়াওয়ের জন্য প্রযুক্তিসেবা নেওয়ার পথ বন্ধ করা হয়। হুয়াওয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞায় যুক্তরাষ্ট্রের অনেক প্রতিষ্ঠান চীনের এ বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করছে।  

চলতি বছরের ৩১ জুলাই চীন থেকে আমদানি করা আরও ৩০০ বিলিয়ন ডলারের পণ্যের ওপর নতুন করে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প।  ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ থেকে নতুন এই শুল্ক কার্যকর হবে। চীন থেকে আমদানি করা সব পণ্যের ওপরই এই শুল্ক বসবে। স্মার্টফোন থেকে শুরু করে কাপড়, সবই এবার শুল্কের আওতায় আসছে।  প্রথমে ১০ শতাংশ হারে এই শুল্ক আরোপ হলেও পরে তা ২৫ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।

সর্বশেষ গত ৩১ জুলাই ২০১৯ এ  চীনের সাংহাইতে শেষ হয় যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের প্রতিনিধিদের সপ্তাহব্যাপী আলোচনা।  আর আলোচনা শেষ হবার পরপরই টুইট করে নতুন শুল্ক আরোপের বিষয়টি জানিয়ে দেন ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রের চীন-নীতির স্বরূপ ও  প্রভাব 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট  ডোনাল্ড ট্রাম্প বিদেশনীতিতে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছেন ।  আর এই পরিবর্তনের মধ্যে অন্যতম হলো চীনের প্রতি সংঘাতমূলক অবস্থান গ্রহণ করা।  এক দশকের পুরোনো নীতি বদলে ফেলার পেছনে কারণ কি? বিশেষজ্ঞদের মত, এর অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে, বিশ্বের দুই জায়ান্টের মধ্যে 'অর্থনৈতিক ঠান্ডা যুদ্ধের ফল'। 

আমেরিকার শাসনভার গ্রহণের  প্রথম বছরেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চীনকে  কৌশলগত ‘প্রতিযোগী’ এবং ‘শক্ত প্রতিদ্বন্দী’ বলে অভিহিত করেছিলেন।  তবে এ দলে তিনি শুধু একাই নন, মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা ও কংগ্রেসের শীর্ষস্থানীয় রিপাবলিকান সদস্যরা এবং কিছু ডেমোক্র্যাটের মতে, চীন বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের প্রাধান্য এবং স্বার্থের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি ও বড় হুমকি।

গত দুই বছরে মার্কিন-চীন সম্পর্কের দ্রুত অবনতির প্রাথমিক কারণ ভূ-রাজনৈতিক হলেও, দু’দেশের বাণিজ্য সংঘাতকেও সামনে আনছেন বিশেষজ্ঞরা।  সম্প্রতি চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চড়া শুল্কারোপের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে, কৌশলগত প্রতিদ্বন্দী হিসেবে চীনকে দূর্বল করে দেওয়া। 

যুক্তরাষ্ট্রের চীনের প্রতি সংঘাতমূলক অবস্থানের একটা উদাহরণ দেয়া যাক। 

বেইজিংয়ের রাশিয়ান যুদ্ধ বিমান সু-৩৫ এবং ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণ যোগ্য এস-৪০০ প্রতিরক্ষা মিসাইল ক্রয়ের প্রতিক্রিয়ায় চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ইকুইপমেন্ট ডেভেলপমেন্ট ডিপাটমের্ন্টের উপর মার্কিন সরকার ২০১৮ সালে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।  কিন্তু লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হলো, ভারতও সে সময় রাশিয়া থেকে এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেম কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ওয়াশিংটন ভারতের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি। ব্যাপারটিতে চীন ব্যাপক ক্ষুব্ধ হয় , যা মাকির্ন-চীন সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব আরও বাড়িয়ে দেয়।

ট্রাম্প প্রশাসনের আপাত যুক্তি হচ্ছে যে, মার্কিন ব্যবসা-বাণিজ্যের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের সুরক্ষা এবং দুই দেশের মধ্যে বিশাল দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতা সংশোধন করা।  আর সে জন্যই চীনের প্রতি তাদের বিদেশনীতি পরিবর্তন। তবে প্রকৃত ঘটনাটি এখনও পরিষ্কার করে প্রকাশ করেনি ট্রাম্প প্রশাসন।

এই শুল্কারোপ শুধু চীনের ওপরই না, বরং তা দুই দেশের অর্থনীতিকেই গুরুতর ক্ষতি সাধন করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।  কেননা, চার দশক ধরে দেশ দুটি একটি খোলামেলা অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল।

এখানে উল্লেখ্য যে, চীনকে এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় জিডিপির দেশ হিসেবে ধরা হয়।  ২০ শতকে যুক্তরাষ্ট্র যেমন সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল, তেমনি একুশ শতকে চীন হবে সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ। লন্ডন ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান  Centre for Economics and Business Research এর ২০১৯ সালের প্রকাশিত এক টেবিল (World Economic League Table 2019) থেকে জানা যায় , চীন ২০৩৩ সালের মধ্যে বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দেশ হওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই প্রস্তুত।

কেউ কেউ এও বলছে, বাণিজ্য সংঘাতের কারণেই চীনের অর্থনীতির চাকা  শ্লথ হচ্ছে— এখনই এমনটা ভাবা ঠিক হবে না। তবে এই সংঘাত দেশটির সামগ্রিক অর্থনীতিতে অবশ্যই নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, তাতে কোন সন্দেহ নেই।

চলতি বছরের শুরুতে যে প্রবৃদ্ধির তথ্য প্রকাশ করেছে চীন, তাতে দেখা যায়, ১৯৯০ সালের পর দেশটির অর্থনীতি সবচেয়ে ধীরগতিতে চলছে এখন।  ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পগুলো সংকটে পড়েছে।

চীনের ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকস (এনবিএস) এর তথ্যমতে, বাণিজ্য সংঘাত শুরু হওয়ার পর ২০১৮ সালে দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ, যা ২৮ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।  তবে এ হার দেশটির সরকারি লক্ষ্য সাড়ে ৬ শতাংশের তুলনায় একটু বেশি। এর আগে ২০১৭ সালে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল চীনের। এ কারণে চলতি বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হারও কমবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তবে আইএমএফ এর দেয়া ২০১৮ সালের তথ্য অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র ২০.৪ ট্রিলিয়ন ডলারের মালিক যা কিনা ২০১৭ সালের চেয়ে ১ ট্রিলিয়ন বেশি।  অন্যদিকে চীন ১৪ ট্রিলিয়ন ডলারের মালিক যা ২০১৭ সালের তুলনায় ২ ট্রিলিয়ন বেশি। 

এতে স্পষ্ট যে, চীনের দ্রুত উত্থানে যুক্তরাষ্ট্রের সিংহাসনে চিড় ধরেছে।  মার্কিনিদের সেই ইতিহাস নিশ্চয়ই জানা আছে যে, পূর্ববর্তী বাণিজ্য যুদ্ধ, যেমন- ১৯৮০ সালের রাশিয়ার শস্য নিষেধাজ্ঞা এবং ২০০৯ সালে চীনের সাথে ‘টায়ার বনাম মুরগী’র বিরোধ থেকে দেখা গেছে, একবার বাণিজ্যিক বাজার হারালে তা ফিরে পাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য, যা হয়তো আর কখনোই পুরোপুরি ফেরত পাওয়া যায় না। 

তাই চীনের এই উত্থান অবশ্যম্ভাবী বা সময়ের দাবী, এটা জেনেই হয়তো চীনকে ‘শত্রু’ হিসেবে গণ্য না করার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন খোদ মার্কিন বিশেষজ্ঞরাই।  তাদের মধ্যে রিপাবলিকান, ডেমোক্র্যাটস এবং চীনের নীতি ও আচরণের সমালোচকেরাও রয়েছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক জনমত জরিপ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান, পিউ রিসার্চ সেন্টারের ২০১৮ সালে আগষ্টে পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, বেশিরভাগ আমেরিকান মনে করেন, চীনের সঙ্গে সম্পর্কের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হওয়া উচিত তাদের জীবিকা রক্ষা করার জন্য , ভূরাজনৈতিক সংঘাত শুরু করার জন্য নয়।  এই ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্ব অনেক মার্কিনের জীবন ও জীবিকার ওপর আঘাত হানতে পারে। এতে স্পষ্ট যে, জনগণের মতামত ছাড়াই এবং কোনো ধরনের বিতর্ক ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রের চীন নীতি পরিবর্তিত হয়েছে। 

বেশির ভাগ মার্কিন জনগণ চীনের প্রতি মার্কিন নীতি পরিবর্তনের সীমা সম্পর্কে অবগত নন। আমেরিকার মত একটি গণতান্ত্রিক দেশে, সরকার  জনসাধারণের কাছ থেকে টেকসই রাজনৈতিক সমর্থন ছাড়া শক্তিশালী ভূরাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সংগ্রাম চালিয়ে যেতে পারে না।

চীনের প্রতি নীতি পরিবর্তনের ব্যাপারে কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর ট্রাম্প প্রশাসনের সামনে এখন। 

এই নীতি পরিবর্তনের মূল উদ্দেশ্য কী, আর কিভাবেই বা তারা এই উদ্দেশ্য অর্জন করবে? যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহ্যবাহী মিত্রদেশসহ অন্যান্য দেশগুলো  কি এই চেষ্টাকে সমর্থন করবে? নাকি যুক্তরাষ্ট্র এ ব্যাপারে ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে’ নীতি মেনে চলবে?

বিশেষজ্ঞদের মতে,  বিশ্ব অর্থনীতি থেকে চীনকে বিচ্ছিন্ন করার যে চেষ্টা মার্কিনিরা করে যাচ্ছে তা যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ভূমিকা ও সুনাম ক্ষুন্ন করবে।  শুধু তাই না, পরিবর্তিত এই নীতি বিশ্বের সব দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আর এ নিয়ে খোদ আমেরিকার ভেতরেই রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। 

যুক্তরাষ্ট্রের চীন নীতির পরিবর্তনের  প্রভাব বিস্তার ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। যেটা বোঝা যায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) কর্তৃক ২৩ জুলাই ২০১৯ এ প্রকাশিত বিশ্ব অর্থনীতির হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে।

এতে বলা হয়েছে,  চলতি বছরে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ২ শতাংশ আর আগামী ২০২০ সালে হবে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ।  আর আগামী বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবৃদ্ধির হার কমে হবে ১ দশমিক ৯ শতাংশ।

আইএমএফের এই হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশের আগেই এ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল প্রভাবশালী পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমস।  ৯ জুলাই প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, “বিশ্বমন্দার ঝুঁকি বাড়ছে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক মোটেই এ জন্য প্রস্তুত নয়”।  সেখানে বলা হয়েছে, অনেকের আশঙ্কা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা ঢুকবে আগামী বছরেই। আর এর প্রধান কারণ বাণিজ্যসংঘাত। 

চীন-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিশ্ববাজারে তাদের অবস্থানের কিছু সমীক্ষা

চীন  দুটি ক্ষেত্রে আমেরিকার উপর বেশ নির্ভরশীল।  প্রথমত, কৃষিক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট সামগ্রীর জন্য তারা পুরোপুরি আমেরিকার উপর নির্ভর করে।  দ্বিতীয়ত, চীনের রপ্তানির মূল বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ২০১৩ সালে ৫০ হাজার কোটি ডলার পর্যন্ত বাণিজ্য হয়েছে।  ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশ (আইসিসিবি) বুলেটিনের সম্পাদকীয় হতে আরও জানা যায় , ২০১৭ সালে দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য ৫৮ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছায়।  যুক্তরাষ্ট্রও বর্তমানে গাড়ি, বিমান, সয়াবিনসহ ১০৬ টি পণ্য রফতানী বাবদ চীনের কাছ থেকে বছরে ৫০ বিলিয়ন ডলার আয় করে।

U.S. News & World Report এর তথ্যমতে, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর চীনের স্থান তৃতীয়।

সামরিক ব্যয়ে শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক ব্যয় ৬৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।  অন্য দিকে দ্বিতীয় স্থানে থাকা চীনের বার্ষিক ব্যয় ২৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

চীনের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় শি জিনপিং এর আগমনের আগেই বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনৈতিক শক্তি চীন এখন অস্ত্রের বাজারেও যুক্তরাষ্ট্রকে পাল্লা দিচ্ছে।  ১৯৮৬ থেকে ১৯৯০ সালের স্নায়ুযুদ্ধের পর অস্ত্র রফতানির দিক দিয়ে চীন প্রথমবারের মতো যুক্তরাজ্যকে সরিয়ে পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে। অস্ত্র রপ্তানীতে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে প্রথম স্থান দখল করে আছে।  ওদিকে অস্ত্র আমদানীতে চীনের স্থান ষষ্ঠ। 

অস্ত্রের চাহিদা রয়েছে- এমন গ্রাহক দেশগুলোর কাছে চীন নিজেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থ হয়েছে।  তবে বেইজিং কী পরিমাণ অস্ত্র বিক্রি করছে, তার আনুষ্ঠানিক কোনো হিসাব জানা না গেলেও, বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করেন, চীনের তৈরি কিছু অস্ত্র এখন রাশিয়া বা পশ্চিমা বিশ্বের তৈরি অস্ত্রের সঙ্গে তুলনা করা যায়।

আবার ১৯৭৮ সালে চীনের মোট দেশজ উৎপাদন(জিডিপি) ছিল মাত্র ১৫০০০ কোটি ডলার। ৪০ বছর পরে অর্থাৎ ২০১৮ সালে এসে তা দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ কোটি ডলারে। বর্তমান বিশ্বের মোট সম্পদের ১০% চীনের দখলে। দেশটিতে এখন ১% এরও কম মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে।  

২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম ব্লুমবার্গে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়,  নতুন বিলিয়নিয়র বা শতকোটিপতি তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে এগিয়ে চীন। দেশটিতে প্রতি দুইদিনে একজন করে শতকোটিপতি তৈরি হয়।  এতে আরও বলা হয়, আগামী পাঁচ বছরে সারাবিশ্বে মিলিয়নারদের সংখ্যার তালিকায় শীর্ষ থাকবে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে তিনগুণ বেশি মিলিয়নার তৈরি করবে চীন। 

চায়না ডেইলির ২০১৮ সালের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, পৃথিবীতে মোট বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা ২১৫৮ জন ( উইকিপিডিয়াঃ ২২০৮ জন)।  আমেরিকাতে মোট বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা ৫৬৩ জন (উইকিপিডিয়াঃ ৫৮৫ জন)। উইকিপিডিয়া অনুযায়ী বর্তমানে চীনে বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা ৪৭৬।  তবে বর্তমানে বেশিরভাগ বিলিয়নিয়ারের বসবাস আমেরিকাতে। নতুন মিলিয়নার তৈরির ক্ষেত্রেও শীর্ষে অবস্থান করছে যুক্তরাষ্ট্র। 

২০১৮ সালে শীর্ষ বিনিয়োগকারী দেশ চীন।  যার বিনিয়োগকৃত অর্থ ১,২৯,৮৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।  যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান দ্বিতীয়।

৩০ জুলাই ২০১৮ তে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO) এর তথ্যমতে EU ছাড়া বিশ্বের শীর্ষ রপ্তানীকারক দেশ চীন।  দ্বিতীয় স্থানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আর শীর্ষ আমদানীকারক দেশ যুক্তরাষ্ট্র , আর সেক্ষেত্রে চীনের অবস্থান দ্বিতীয়। এছাড়াও লোহা ও ইস্পাত, টেলি সরঞ্জাম, বস্ত্রশিল্প, পোষাক শিল্প ইত্যাদি রপ্তানীতে চীন শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে।  আর কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানীতে মার্কিনিরা শীর্ষস্থানে আছে।  

২০১৮ সালে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা  FAO (Food and Agriculture Organization) এর রিপোর্ট অনুসারে, চাষকৃত মাছ উৎপাদনে শীর্ষে আছে চীন আর মাছ রপ্তানীতেও তারা শীর্ষস্থানে।  

আবার স্বর্ণ ও রৌপ্য উৎপাদনে শীর্ষে চীন, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয়।  কিন্তু স্বর্ণ রিজার্ভে মার্কিনিরা শীর্ষে থাকলেও চীন দ্বিতীয় স্থানে ।  

উল্লেখ্য, বাংলাদেশেও বিনিয়োগে চীন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে এগিয়ে।  ১০৩ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে চীন।

বাণিজ্য সংঘাত কি ক্ষমতা পালাবদলের ইঙ্গিত দেয়?

এথেন্সের ঐতিহাসিক দার্শনিক থুকিডাইডিস  তার বিখ্যাত বই “হিস্ট্রি অব পেলোপনেশিয়ান ওয়ার” বইতে ক্ষমতার ভারসাম্য ও পরাশক্তির মধ্যে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন, যা আধুনিক কালেও  প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। অন্তত চীন-মার্কিন বা রাশিয়া-মার্কিন দ্বন্দ্ব থেকে তাই প্রমাণিত হচ্ছে।

একটি উঠতি শক্তির প্রতিষ্ঠিত কোনো শক্তির জন্য হুমকি হয়ে ওঠার বিষয়টিকে বলা হয় ‘থুকিডাইডিসের ফাঁদ’। দীর্ঘ ৫০০ বছরের ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, অন্তত ১৬ বার এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে উঠতি শক্তি ও প্রতিষ্ঠিত শক্তি মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে ১২ বারই তাদের দ্বন্দ্ব যুদ্ধ পর্যন্ত গড়িয়েছে। 

তাই কালে কালে ‘থুকিডাইডিসের তত্ত্ব’ হয়েছে সমাদৃত। চলুন জেনে নেয়া যাক কিভাবে বর্তমানের বাণিজ্য সংঘাত সেই ইতিহাসেরই ধারাবাহিকতা  হতে পারে।  

থুকিডাইডিস ছিলেন এথেন্স ও স্পার্টার মধ্যে হওয়া পেলোপনেসিয়ান যুদ্ধের সময়কার একজন ইতিহাসবিদ।  তিনি লক্ষ্য করেছিলেন, ৪৩১ খৃস্টপূর্ব থেকে শুরু করে ৪০৪ খৃস্টপূর্ব পর্যন্ত এক দীর্ঘ যুদ্ধ হয় ততকালীন পরাশক্তি স্পার্টা ও উদিয়মান শক্তি এথেন্সের মধ্যে।

থুকিডাইডিস ছিলেন একজন এথেনিয়ান জেনারেল, যাকে তদানিন্তন থ্রেস রাজ্যের দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছিল।  কিন্তু যুদ্ধের অষ্টম বছরে তিনি স্পার্টানদের আক্রমণের হাত থেকে থ্রেস রক্ষা করতে পারেন না। ফলে তাকে নির্বাসনে পাঠানো হয়।  নির্বাসিত জীবনেই তিনি এই বইটি লিখেন।

বইটিতে দেখানো হয়েছে, কিভাবে এথেন্সের উদীয়মান ক্ষমতার প্রতি আশঙ্কাগ্রস্থ হয়ে স্পার্টা যুদ্ধের দিকে ধাবিত হয়। অন্যদিকে উদীয়মান স্পার্টাও নিজের শক্তি সম্পর্কে কিছুটা অহংকারী ও দাম্ভিক হয়ে ওঠে। তাই দুই পক্ষই যুদ্ধ মঞ্চে মুখোমুখি হয়ে উদগ্রীব  হয়ে ওঠে। স্পার্টা বন্ধুপ্রতিমদের নিয়ে রাতারাতি গড়ে তোলে পেলোপনেশিয়ান লীগ। অপরদিকে এথেন্স থেকে মোকাবেলা করতে বন্ধুরাষ্ট্র ও পার্শ্ববর্তী ছোট দ্বীপগুলো মিলিয়ে তৈরি করেন দানিয়েল লীগ। 

ইতিহাসের আরেকটু পেছনে গেলে দেখা যায়, এই পেলোপনেশিয়ান লীগ আর দানিয়েল লীগ একত্র হয়ে কয়েক বছর আগেই পার্সিয়ানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। এতে এই প্রমাণিত হয় যে, বিশ্ব রাজনীতিতে  গতকালের বন্ধু বলে কিছু নেই। আবার শত্রু হওয়াটাও আপেক্ষিক।  

আজ থেকে ২৫ শত বছর আগের সেই আন্তর্জাতিক রাজনীতির ধারার মূলত কোন পরিবর্তন নেই।  চীন-মার্কিন দ্বন্দ্ব যেন তারই ধারাবাহিক রূপ। ইতিহাসে এরকম আরও ঘটনা আছে যার পুনরাবৃত্তি লক্ষ্যনীয়।   

যেমন, অষ্টাবিংশ শতাব্দির কথাই ধরা যাক, যখন ফ্রান্স আর ব্রিটেন ছিল দুই পরাশক্তি।  সেই সময় সম্রাজ্য বিস্তার নিয়ে এই দুই দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব তুঙ্গে উঠে। সপ্তবর্ষী যুদ্ধের ইতিহাস থেকে জানা যায়, এই দুই মোড়লের মধ্যে একই সময়ে তিন মহাদেশে যুদ্ধ চলেছে।  ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে মীর কাসিমের বক্সারের যুদ্ধ ছিল এরই অংশবিশেষ। 

তবে এই সংঘাতের পারদ সর্বোচ্চ উচ্চতায় ওঠে নেপোলিয়নের আমলে।  বছরের পর বছর যুদ্ধ বেধে ছিল। আর শেষ পর্যন্ত নেপোলিয়নকে থামাতে বিভিন্ন শক্তির সমন্বয়ে  তৈরি হয় কোয়ালিশন। 

এরই মধ্যে ব্রিটিশদের কাছ থেকে প্রথম স্বাধীন হওয়া কলোনি যুক্তরাষ্ট্র উদীয়মান পরাশক্তি হিসাবে আবির্ভূত হয়। ভয়াবহ প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ জয়ের মধ্য দিয়ে দেশটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি হিসাবে বিশ্ব নেতৃত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করে।  ধীরে ধীরে গড়ে তোলে জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক আর আইএমএফ এর মত সংস্থা যা নিজের স্থায়ী মোড়লের পদটা পাকাপোক্ত করতে সাহায্য করেছে। 

পরবর্তীতে দেখা যায়, মার্কিনিদের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানাতে সোভিয়েত ইউনিয়ন সম্মুখে চলে আসে তার সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শ দিয়ে।  শুরু হয় স্নায়ু যুদ্ধ। তবে এ যুদ্ধ দুদেশের বেশি নাগরিকের প্রাণ না কাড়লেও, তথাকথিত তৃতীয় বিশ্বের দেশ, কোরিয়া, ভিয়েতনাম, আফগানিস্তান এই পরাশক্তির লরাইয়ের যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করে। এর পরের ইতিহাস তো সবারই জানা। 

প্রাচীন গ্রিক সাম্রাজ্যে এথেন্স যেমন স্পার্টার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল, অষ্টাবিংশ শতাব্দিতে  ফ্রান্স আর ব্রিটেন, দুই পরাশক্তির সম্রাজ্য বিস্তার নিয়ে যেমন দ্বন্দ্ব তুঙ্গে উঠেছিল, ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে জার্মানি যেমন ব্রিটেনকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল, বিংশ শতাব্দীতে মার্কিন-সোভিয়েত স্নায়ুযুদ্ধ যেমন তুঙ্গে উঠেছিল; ঠিক তেমনি চীনও এখন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।  ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যকার এই দ্বন্দ্ব বর্তমানে ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সবচেয়ে বড় নির্ণায়ক উপাদান।'

অনেকের আশঙ্কা,চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিতীয় স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হতে পারে।  তবে মার্কিন-সোভিয়েত স্নায়ুযুদ্ধের সঙ্গে এই স্নায়ুযুদ্ধের একটি বড় তফাত হলো, আমেরিকা ও চীনের অর্থনীতি একে-অন্যের সঙ্গে বেশ গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত।  ফলে এই দ্বন্দ্ব নতুন এক মাত্রা পেয়েছে। এ যুদ্ধ বরং রূপ নিতে পারে প্রযুক্তিগত কর্তৃত্ব বিস্তারের যুদ্ধে। হুয়াওয়েকে নিয়ে দ্বন্দ্ব তারই ইঙ্গিত বহন করে। এছাড়াও এটাও তো অনস্বীকার্য, ভবিষ্যতে প্রযুক্তিগত বিষয়ে প্রাধান্য বিস্তার করতে চলেছে চীনই।  আর প্রযুক্তিগত উন্নতির ওপরই নির্ভর করছে ভবিষ্যৎ সভ্যতা। 

অপরদিকে, অর্থনৈতিক শক্তি বা পাওয়ার এমন বড় এক নিয়ামক যার জন্য দুই দেশের মধ্যে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মত পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে, এমন আশঙ্কাও করছেন অনেকে।  কারণ যুদ্ধ মেশিন চালাতে বা প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনে দরকার টাকা-পয়সার। আবার অর্থনৈতিক আগ্রাসন একটা সময় গিয়ে সামরিক আগ্রাসনের দিকে পরিণত হয়।

চীন-মার্কিনের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা আলাদা নয়।  বিশেষ করে চীন যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে মুক্তবাজার অর্থনীতির সুবিধা নিয়ে ব্যাপক আয় করে নিয়েছে এবং সেই আয় করা অর্থই দেশটিকে সরাসরি মার্কিনিদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে সাহায্য করছে এখন। 

দক্ষিণ চীন সাগর এর উদাহরণ টানলে ব্যাপারটা আরও পরিষ্কার হয়ে যায়। চীন এখন দক্ষিণ –চীন সাগরের মালিকানা দাবি করছে। কয়েক বছর আগেও চীনের এমন অযৌক্তিক দাবি করার কথা শোনা যায়নি। কিন্তু বুঝতে হবে, চীনের হাতে এখন অনেক টাকা।  আর তাইতো তারা সেখানে কৃত্রিম দ্বীপ বানানোর মত উচ্চাভিলাষী প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা পর্যন্ত হাতে নিয়েছে। মার্কিনিদের হুমকি ধামকিকে কোন কর্ণপাত না করে সেখানে প্রতিনিয়ত সামরিকীকরণ করে যাচ্ছে দেশটি। স্বাভাবিকভাবেই চীনের এমন কর্মকাণ্ডে নাখোশ হয়ে যুক্তরাষ্ট্রও বারবার বিভিন্নভাবে হস্তক্ষেপ করতে চাইছে।  তবে শি জি পিং এর আজীবনের জন্য ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়াটা মার্কিনিদের জন্য গভীর ভাবনার কারণ। 

বিশ্বযুদ্ধের মত বাণিজ্য সংঘাতে কোন জয়-পরাজয় হয়তো নাই, তবু দুই পক্ষই তাদের কর্তৃত্ব বা পরাশক্তির তকমা  ধরে রাখার জন্য হলেও এই সংঘাতের ঝুঁকি নিয়েছে এবং তা আপাতত থামবার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। 

এখন শুধু অপেক্ষার পালা এটা দেখার জন্য যে, ‘থুকিডাইডিসের ফাঁদ’ বা ‘থুকিডাইডিসের তত্ত্ব’ সত্য প্রমাণিত হবে নাকি দ্বিতীয় স্নায়ুযুদ্ধ নতুন মাত্রা নিয়ে রূপ নেবে প্রযুক্তিগত কর্তৃত্ব বিস্তারের যুদ্ধে।  

তথ্যসূত্রঃ

এএফপি, রয়টার্স, বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা

Articles from  Project Syndicate and Centre for Economics and Business Research

‘খ্যাতিমান রাষ্ট্রনায়কেরা’, শামসুজ্জামান শামস

‘হিস্ট্রি অব পেলোপনেশিয়ান ওয়ার’, থুকিডাইডিস 

 

Related Topics

বাংলাদেশ

বাণিজ্য সংঘাত / চীন বনাম যুক্তরাষ্ট্র / চীন / মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • উগান্ডায় বিলাসবহুল বাড়িতে তিন দিনব্যাপী বিবাহ উৎসবের আয়োজন মামদানির
  • ২০২৫ সালে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিরা যে দেশে বাস করছেন
  • ছাত্রলীগ কর্মী থেকে ‘সমন্বয়ক’, রিয়াদের বাড়িতে পাকা ভবন দেখে বিস্মিত এলাকাবাসী
  • বিনিয়োগ ও ভোগব্যয় কমায় জুনে এলসি খোলার পরিমাণ ৫ বছরে সর্বনিম্ন
  • ভোটের সময় মাঠে থাকবে ৬০ হাজার সেনা; দেড় লাখ পুলিশকে দেওয়া হবে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক সংকট নিরসনে ২,৮৪০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন; হবে ৩১টি ভবন

Related News

  • বাংলাদেশে ‘সুশৃঙ্খল, সফল ও অংশগ্রহণমূলক’ নির্বাচন চায় চীন
  • চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কি সত্যিই বিশ্বের সেরা?
  • মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনায় দগ্ধদের সহায়তায় ২৪ জুলাই ঢাকায় আসছে চীনের চিকিৎসক দল
  • চীনের বিশাল বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে প্রতিবেশী ভারত ও বাংলাদেশের উদ্বেগ কেন?
  • মস্তিষ্কপ্রযুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে চীন, মাস্কের নিউরালিংকের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে

Most Read

1
আন্তর্জাতিক

উগান্ডায় বিলাসবহুল বাড়িতে তিন দিনব্যাপী বিবাহ উৎসবের আয়োজন মামদানির

2
আন্তর্জাতিক

২০২৫ সালে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিরা যে দেশে বাস করছেন

3
বাংলাদেশ

ছাত্রলীগ কর্মী থেকে ‘সমন্বয়ক’, রিয়াদের বাড়িতে পাকা ভবন দেখে বিস্মিত এলাকাবাসী

4
অর্থনীতি

বিনিয়োগ ও ভোগব্যয় কমায় জুনে এলসি খোলার পরিমাণ ৫ বছরে সর্বনিম্ন

5
বাংলাদেশ

ভোটের সময় মাঠে থাকবে ৬০ হাজার সেনা; দেড় লাখ পুলিশকে দেওয়া হবে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ

6
বাংলাদেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক সংকট নিরসনে ২,৮৪০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন; হবে ৩১টি ভবন

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net