Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Sunday
June 22, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
SUNDAY, JUNE 22, 2025
আসন্ন জাতীয় বাজেটে আমাদের নীতিগত প্রস্তাব

মতামত

অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত
12 April, 2021, 09:30 pm
Last modified: 12 April, 2021, 09:32 pm

Related News

  • অর্থনীতি সমিতি নিয়ে দু’পক্ষের বিরোধ, কার্যালয়ে তালা 
  • কালো, পাচারকৃত অর্থের ১% পুনরুদ্ধারে রাষ্ট্রের কোষাগারে বাড়বে ১৫,০০০ কোটি টাকা
  • ১৪ লাখ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির 

আসন্ন জাতীয় বাজেটে আমাদের নীতিগত প্রস্তাব

আমাদের বাজেটকে কাঠামোগতভাবে এমন হতে হবে, যার মৌলিক নীতিগত বিষয়াদি আগামীতে এমন একশিলা-দৃঢ়বদ্ধ হবে (মনলিথিক অর্থে), যা প্রকৃতির প্রতি পূর্ণ আনুগত্যভিত্তিক আমাদের জীবনব্যবস্থাকে নিরন্তর শোভনকরণ প্রক্রিয়াভুক্ত করবে।
অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত
12 April, 2021, 09:30 pm
Last modified: 12 April, 2021, 09:32 pm

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির কার্যনির্বাহক কমিটি তার প্রায় পাঁচ হাজার সদস্যের পক্ষে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে শোভন সমাজ-শোভন অর্থনীতি-শোভন জীবনব্যবস্থা ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত পর পর মোট ছয়টি অর্থবছরে জাতির সামনে বিকল্প বাজেট (অল্টারনেটিভ বাজেট) পেশ করেছে। করোনা মহামারির এ বছরেও আমরা ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির পক্ষে জাতীয় বিকল্প বাজেট উত্থাপন করবো। 

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে সঠিক প্রশ্নটি হতে পারে এমন‒ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার 'শোভন সমাজ' (ডিসেন্ট সোসাইটি) নির্মাণে দেশের বার্ষিক বাজেট কাঠামো কেমন হবে? কেমন হওয়া উচিত? বার্ষিক বাজেট হতে হবে এমন যা আমাদের দেশে 'শোভন সমাজব্যবস্থা' বা 'শোভন জীবনব্যবস্থা' প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে এবং একই সাথে ওই বাজেট কাঠামো দিয়েই বিচার হবে যে দেশ শোভন সমাজমুখী কিনা? 

আমাদের বাজেটকে কাঠামোগতভাবে এমন হতে হবে, যার মৌলিক নীতিগত বিষয়াদি আগামীতে এমন একশিলা-দৃঢ়বদ্ধ হবে (মনলিথিক অর্থে), যা প্রকৃতির প্রতি পূর্ণ আনুগত্যভিত্তিক আমাদের জীবনব্যবস্থাকে নিরন্তর শোভনকরণ প্রক্রিয়াভুক্ত করবে। একই সাথে সামনের বাজেটটি কাঠামোগত বিন্যাসের নিরিখে নীতিগতভাবে হতে হবে সর্বজনীন (ইউনিভার্সাল অর্থে), অর্থাৎ একই সাথে আমাদের মত অনেক দেশের জন্য প্রযোজ্য‒ বিশ্বজনীন। সর্বজনীন এই বাজেটের অভীষ্ট হতে হবে‒ সবুজ বিশ্বে জ্ঞানসমৃদ্ধ আলোকিত মানুষের বৈষম্যহীন সমাজ সৃষ্টি।

বাজেট প্রণয়নে ভিত্তি-নীতির ভিত্তিকথা

বিশ্ব এখন একই সাথে দুই মহা বিপর্যয়ের সম্মুখীন। প্রথম মহাবিপর্যয় হলো‒ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মহামন্দা। আর দ্বিতীয় মহাবিপর্যয় হলো‒ কোভিড-১৯ উদ্ভূত মহামারী। এ ধরনের অবস্থায় সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন হলো‒ একই সাথে সংঘটিত অর্থনীতির কাঠামোগত বিপর্যয়‒ মহামন্দা এবং কোভিড-১৯-এর মহাবিপর্যয় থেকে মুক্ত হয়ে আলোকিত মানুষসমৃদ্ধ বৈষম্যহীন 'শোভন সমাজ-অর্থনীতি-রাষ্ট্র' বিনির্মাণে একটি ধারণাত্মক তত্ত্বকাঠামো (কনসেপচুয়াল থিউরিটিক্যাল কন্সট্রাক্ট) কেমন হবে এবং তার ভিত্তিতে তা বিনির্মাণে জাতীয় বাজেট কেমন হবে বা হওয়া উচিত? 

উত্থাপিত এ প্রশ্নের উত্তরে যুক্তিক্রমানুসারে অপেক্ষাকৃত বড় মাপের যেসব সংশ্লিষ্ট বিষয় ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করতেই হবে তা হলো: (১) পুঁজিবাদী শোষণভিত্তিক কাঠামোতে অনিবার্য বৈশ্বিক মহামন্দাসহ কোভিড-১৯ ও মহামারী উদ্ভূত পরিবর্তন বিশ্লেষণসহ উত্তরণের পথনির্দেশে প্রচলিত অর্থনীতিশাস্ত্রের পারগতা বা অপারগতা এবং 'নতুন একীভূত অর্থনীতিশাস্ত্রের' যৌক্তিকতা; (২) ভাইরাস মহামারী প্রকৃতি-উদ্ভূত হলেও কি তা হতে পারে না প্রকৃতিকে অতিশোষণমূলক ব্যবস্থা পুঁজিবাদী সিস্টেম-উদ্ভূত; (৩) হতে কি পারে না যে ভাইরাস-মহামারী আসলে প্রকৃতিকে নির্বিচার অত্যাচার-উদ্ভূত, পুঁজিবাদী অন্যায্য-অন্যায় বিশ্বায়ন-উদ্ভূত? এসব নিয়ে আমাদের মূল কথা চার-মাত্রিক (তবে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত)। 

আমাদের প্রথম কথা/প্রথম মাত্রা: সব দোষ কোভিড-১৯ ভাইরাসের‒ এটাই বলা হচ্ছে।  আসলে এটা সত্য নয়। আসল কথাও নয়। মূল কথা হলো এরকম: রেন্টসিকার-পরজীবী-লুটেরা-জোম্বি কর্পোরেশন-স্বজনতুষ্টিবাদী মুক্তবাজার পুঁজিবাদ এমনই এক সিস্টেম যেখানে দীর্ঘমেয়াদী বাণিজ্য চক্রের (লং টার্ম বিজনেস সাইকেল) বিধান অনুযায়ী প্রতি ৩০-৪০ বছর পরপর পুঁজিবাদী অর্থনীতি সিস্টেমে মহামন্দা (গ্রেট ডিপ্রেশন, গ্রেট স্লোডাউন, ক্রাইসিস)‒ অবশ্যম্ভাবী। 

আর এ সূত্রানুয়ায়ী সেটা ঘটার কথা ২০১৯-২০ সালের দিকে। এবং তাই-ই ঘটেছে‒ বিশ্বব্যপী। কিন্তু যে ঘটনা ইতিহাসে কখনও একই সাথে ঘটেনি- তা ঘটেছে এবার। তা হলো একদিকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মহামন্দা আর অন্যদিকে একই সময়ে বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ সংক্রমণজনিত মহামারী (যার শেষ জানা নেই;  যার শেষ অভিঘাত কারো জানা নেই)। অর্থাৎ বিশ্বের দেশ নির্বিশেষে সব দেশই এখন 'অর্থনৈতিক-সামাজিক-শিক্ষাগত-স্বাস্থ্যগত-রাজনৈতিক'‒ এই বহুমুখী মহাবিপর্যয়কর অবস্থায়‒ 'মহামন্দা রোগে' (ডিজিজ অব গ্রেট ডিপ্রেশন বা হরর ডিজিজ) আক্রান্ত‒ যা পৃথিবীর ইতিহাসে এই-ই প্রথম। 

রোগী এখন আইসিইউতে (যেখানে স্থান সংকুলান হচ্ছে না‒ কোথাও না, কোনো দেশেই না)। সুতরাং এ রোগীকে বাঁচাতে হলে প্রথমে তাকে সুস্থ করতে হবে।  অর্থাৎ দেশের কথা বললে বলতে হয়‒ দেশের অর্থনীতি-সমাজ-সংস্কৃতি-রাষ্ট্র-সরকার সবকিছুকেই সর্বপ্রথম প্রাক-অসুস্থ অবস্থায় অর্থাৎ অসুস্থ হবার আগের অবস্থায় নিতে হবে। এক্ষেত্রে বাজেট প্রণেতাদের প্রথমেই স্বীকার করে নিতে হবে যে ২০২১ সালের এই এপ্রিল মাসে আমরা ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চের অবস্থায় নেই। যথেষ্ট মাত্রায় পরিবর্তন হয়েছে‒ অর্থনীতিতে, সমাজে, মানুষের সাহস-হতাশায়, রাষ্ট্রে, সরকারে‒ সর্বত্র। অবশ্য এ স্বীকৃতিতেও যে খুব বেশি-কিছু যায় আসে তা নয়।  তবে এটা হবে নির্মোহ সত্য স্বীকার করা‒ 'ডিনায়েল সিনড্রোম' থেকে মুক্তি। এ স্বীকৃতিতেও খুব যায় আসে না, কারণ কোভিড-১৯ এর পূর্বাবস্থাও সুখকর ছিল না‒ তা ছিল রেন্টসিকার-দুর্বৃত্ত-লুটেরা-পরজীবী নিয়ন্ত্রিত মুক্তবাজার পুঁজিবাদের অর্থনীতি যা মুক্তও নয় দরিদ্রবান্ধবও নয়; যেখানে আয় বৈষম্য-ধন সম্পদ বৈষম্য-শিক্ষা বৈষম্য ও স্বাস্থ্য বৈষম্য ছিল ক্রমবর্ধমান। 

সুতরাং মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তীর বাজেট বৈষম্যহীন আলোকিত মানুষ সমৃদ্ধ সমাজ গঠনের উদ্দেশ্যে করবেন নাকি মুক্তবাজার আর কর্পোরেট-স্বার্থীয় সাম্রাজ্যবাদী নিয়ন্ত্রকদের বিশ্বায়নের হাতে ছেড়ে দেবেন‒ এ সিদ্ধান্তটা নিতে হবে। অন্যথায় আমরা গতানুগতিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যাব‒ জিডিপি বাড়লেও বাড়তে পারে; মাথপিছু আয় বাড়লেও বাড়তে পারে, কিন্তু বৈষম্য-অসমতা নিরসন হবে না‒ হবে না মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা অভীষ্ট বাস্তবায়ন। 

আমাদের দ্বিতীয় কথা/দ্বিতীয় মাত্রা: আমাদের দ্বিতীয় কথা এদেশে ধনী-দরিদ্রের প্রবণতা নিয়ে বিত্তের গতি-প্রকৃতির পরিবর্তন নিয়ে। আর একই সাথে এই প্রবণতায় মহামারীকালীন অভিঘাত এবং সম্ভাব্য ভবিষ্যত নিয়ে। সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি এরকম:

(১) দেশের অধিকাংশ মানুষই বহুমাত্রিক দরিদ্র। আর ধনী (অথবা সুপার ধনী) হলেন জনসংখ্যার সর্বোচ্চ ১ শতাংশ। একথা অনস্বীকার্য এবং গবেষণায় প্রমাণিত যে লকডাউনের প্রভাবে 'নিরঙ্কুশ দরিদ্র' (অ্যাবসোলিউট পুওর) মানুষ 'হত দরিদ্র-চরম দরিদ্র' (আলট্রা পুওর) হয়েছেন; আর নিম্নবিত্ত মানুষের ব্যাপকাংশ দরিদ্র হয়েছেন এবং মধ্য-মধ্যবিত্তদের একাংশ বিত্তের মানদণ্ডে নিম্নগামি হয়েছেন। ফলে এখন একদিকে দরিদ্র মানুষের মোট সংখ্যা মহামারীকালীন সময়ের আগের তুলনায় কমপক্ষে দ্বিগুণ বেড়েছে, আর অন্যদিকে সৃষ্টি হয়েছে নতুন এক দরিদ্রগোষ্ঠী যারা আগে দরিদ্র ছিলেন না যাদের বলা যায় 'নব দরিদ্র' (নিউ পুওর)। 

ব্যাপক জনগোষ্ঠীর বিত্তের এই অধোগতি আগে কখনও হয়নি এ এক নতুন প্রবণতা। দারিদ্র্যের আরও একটা বিষয় এর আগে কখনও ঘটেনি‒ তা হলো দরিদ্র, নিম্নবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষের ব্যাপক হারে শহর থেকে গ্রামমুখী হওয়া (আরবান টু রুরাল মাইগ্রেশন)। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় এসব মানুষের অনেকেই গ্রামে স্থায়ীভাবে থেকে যেতে বাধ্য হবেন। 

(২) আর অন্যদিকে লকডাউনের কারণেই অফ-লাইনের ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প কারখানা, সেবাখাতে অধোগতি হয়েছে‒ হয়েছে তা নিম্নগামী। আর ফুলে-ফেঁপে উঠেছে অন-লাইন ব্যবসা-বাণিজ্য (এটা বিশ্বব্যাপি ঘটনা, তা না হলে আমাজনের বোজোস কী করে মাত্র একদিনে তার সম্পদের ১২ বিলিয়ন ডলার যোগ করতে পারলেন?)। অন-লাইনের রেন্ট সিকার-দুর্বৃত্ত-লুটেরা-পরজীবীরা মুক্তবাজারে মুক্তবিহঙ্গ হয়ে তাদের আয়-সম্পদ-সম্পত্তি বিপুল বাড়িয়েছে। এসবের ফলে আয় বৈষম্য (ইনকাম ইনইকুয়ালিটি), সম্পদ বৈষম্য (ওয়েলথ ইনইকুয়ালিটি), স্বাস্থ্য বৈষম্য (হেলথ ইনইকুয়ালিটি) ও শিক্ষা বৈষম্য (এডুকেশন ইনইকুয়ালিটি) সহ বৈষম্যের সব ধরনই বেড়েছে। 

আমাদের হিসেবে আমাদের দেশে আয় বৈষম্যের মাপকাঠি গিনি সহগের মান লকডাউনের আগে ছিল ০.৪৮২, যা লকডাউনের পর মাত্র ৬৬ দিনের মধ্যেই (৩১ মে ২০২০ নাগাদ) বেড়ে দাঁড়িয়েছে ০.৬৩৫-এ। আর পালমা অনুপাত (যা দেখায় একটি দেশের সর্বোচ্চ আয়ের মালিক ১০ শতাংশ মানুষের মোট আয় সর্বনিম্ন আয়ের মালিক ৪০ শতাংশ মানুষের মোট আয়ের কতগুণ বেশি) একই সময়ে ২.৯২ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭.৫৩ (যা বিপদসীমার দ্বিগুণেরও বেশি)। সুতরাং কোভিড-১৯ বাংলাদেশকে উচ্চ আয় বৈষম্যের দেশ এবং 'বিপজ্জনক আয় বৈষম্যের' দেশে রূপান্তরিত করে ছেড়েছে। এমতাবস্থায় বাজেট প্রণেতাদের উদ্দেশ্যে সুস্পষ্ট প্রস্তাব হলো আয়-সম্পদ-স্বাস্থ্য-শিক্ষা বৈষম্য হ্রাসের যত পথ-পদ্ধতি আছে তার সবই যত দ্রুত সম্ভব সমাধানের চেষ্ট করা।

আমাদের তৃতীয় কথা/তৃতীয় মাত্রা: মানুষের ক্ষুধার দারিদ্র্যসহ বহুমাত্রিক দারিদ্র্য বেড়েছে। আরো বাড়ছে-বাড়বে। সবচে শোচনীয় অবস্থা‒ মানুষের কর্মসংস্থানের। দেশে মোট শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা ৬ কোটি ৮২ লক্ষ ৬ হাজার, যাদের ৮৫% অর্থাৎ ৫ কোটি শ্রমজীবী মানুষ অনানুষ্ঠানিক খাতে (ইনফর্মাল সেক্টর) কর্মরত, যার মধ্যে আছে বিভিন্ন ধরনের অণু ও ক্ষুদ্র ব্যবসা ও শিল্প কুটির শিল্প; কৃষিখাত শস্য ও শাকসবজি- প্রাণিসম্পদ- মৎস্যসম্পদ-জলজসম্পদ কোভিড-উদ্ভূত লকডাউনে এসব মানুষের অধিকাংশই হয় কর্মহীন অথবা স্বল্প মজুরিতে স্বল্প সময়ের জন্য সাময়িককালীন কর্মজীবী। কারণ কর্মবাজার সংকুচিত হয়েছে, সামনে আরো হবে। পরিবার-পরিজনসহ এসব মানুষের পক্ষে জীবন পরিচালন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এদের হাতে টাকা-পয়সা নেই; অনেকেই যা কিছু ছিল তাও বেচতে বাধ্য হয়েছেন (দুর্দশাগ্রস্ততার কারণে বিক্রি বা ডিস্ট্রেস সেইল)। এরা এখন নিঃস্ব, সর্বস্বহারা, হতাশাগ্রস্ত, ভাগ্যনির্ভর। জীবন এদের অনিশ্চিত। এসব মানুষকে সরকারি উদ্যোগে ১৯২৯-৩৩ এর মহামন্দার সময়ে নিউ-ডিল কর্মসূচির মত ব্যাপক এবং শোভন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই।

আমাদের চতুর্থ কথা/চতুর্থ মাত্রা: অর্থনীতিবিদদের প্রায় সবাই বলে থাকেন জিনিসপত্তরের দাম বাড়া বা মূল্যস্ফীতি (ইনফ্লেশন) হলো গরিবের শত্রু। একথা মিথ্যা নয়। তবে যে কথা তারা বলেন না তা হলো মূল্যহ্রাস বা মূল্য সংকোচন (ডিফ্লেশন) হলো গরিবের মহাশত্রু। উল্লেখ্য যে ১৯২৯-৩৩-এর মহামন্দাকালে মূল্যস্ফীতি ঘটেনি, ঘটেছিল মূল্যহ্রাস বা মূল্যসংকোচন; আর ওই মহামন্দার পরপরই 'মূল্যহ্রাস বা মূল্যসংকোচনের' সুযোগে নির্বাচনের মাধ্যমেই ফ্যাসিস্ট হিটলার জার্মানিতে ক্ষমতায় বসে পড়েন। এসব গুঢ় বিষয় নিয়ে দূরদর্শী বাজেট প্রণেতারা ভাববেন এ প্রত্যাশা অমূলক হবে না।

আসন্ন বাজেটের ভিত্তিনীতির ভিত্তি কথা নিয়ে যে চারটি বাস্তব বিষয়-প্রবণতা উল্লেখ করলাম তা থেকে আমরা মনে করি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আলোকিত মানুষের বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে এবং দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে বাঁচাবার লক্ষ্যে বাজেট প্রণেতারা এ বারের বাজেটে নিদেনপক্ষে দু'টো বড় মাপের বিষয় নিয়ে ভাববেন:

প্রথম যা ভাবা প্রয়োজন: আয়-ধন-সম্পদের বণ্টন হতে হবে ন্যায্য তা ধনীদের কাছ থেকে প্রবাহিত হতে হবে দরিদ্র, বিত্তহীন, নিম্নবিত্ত মানুষের হাতে। এ লক্ষ্যে বাজেট যা পারে তা হলো (১) ধনী-বিত্তশালীদের উপর সম্পদ কর আরোপ করা, (২) সুপার-ডুপার ধনীদের উপর কর হার বাড়ানো, (৩) শেয়ার বাজার ও বন্ড বাজারে বড় বিনিয়োগের উপর সম্পদ কর আরোপ করা (আসলে খুব কম সংখ্যক মানুষই ৮০ শতাংশ শেয়ার-বন্ডের মালিক), (৪) অতিরিক্ত মুনাফার উপর কর আরোপ করা (ট্যাক্স অন এক্সসেস প্রফিট), (৫) কালো টাকা উদ্ধার করা, (৬) পাচারকৃত অর্থ (মানি লন্ডারিং) উদ্ধার করা। 

দ্বিতীয় যা ভাবা প্রয়োজন: সরকারিভাবেই শোভন মজুরির ব্যাপক কর্মসংস্থান-সুযোগ সৃষ্টি করা। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনে অতিরিক্ত টাকা ছাপালেও কোনো অসুবিধা হবে না (তবে 'ভারসাম্য' বিষয়টি নজরে রাখতে হবে, যেন অপ্রয়োজনে টাকা ছাপানো না হয়)। অবশ্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আর বিশ্বব্যাংকের নব্য-উদারবাদী অর্থনৈতিক উন্নয়ন নীতি মতাদর্শে বিশ্বস করলে এসব করা সম্ভব হবে না। কিন্তু ১৯২৯-৩৩ এর মহামন্দা থেকে উত্তরণে সরকারি উদ্যোগে 'নিউ ডিল' নীতির আওতায় ব্যাপক কর্মসংস্থান-এর যেমন কোনো বিকল্প ছিলো না এখনও তেমনিই দ্বিতীয় কোনো বিকল্প নেই (এখনকারটা হতে পারে 'গ্রিন নিউ ডিল'; প্রকৃতির প্রতি সম্মান ও আনুগত্যভিত্তিক 'নিউ ডিল')।

বিকল্প বাজেট ২০২০-২১: ভাবনা-ভিত্তি

করোনাভাইরাস বিপর্যয়ের সামগ্রিক ও বহুমাত্রিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণভিত্তিক বাজেটের প্রধান লক্ষ্য হতে হবে‒ আলোকিত মানুষসমৃদ্ধ বৈষম্যহীন 'শোভন বাংলাদেশ' বিনির্মাণ‒ যা ছিল '৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা। এ বিশ্বাসও অমূলক হবে না যে করোনাভাইরাস বিপর্যয় মানুষের (আমাদের) অন্তর্নিহিত শক্তিকে দুর্বল করবে না, উল্টো এ বিপর্যয় কাঙ্ক্ষিত মানবিক উন্নয়ন-প্রগতির গতি বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি করবে। আমাদের লক্ষ্য হতে হবে সে সুযোগ উদঘাটন-অনুসন্ধান করা এবং তা দেশের মানুষের জন্য কাজে লাগানো। আমরা জানি এসব এক বাজেটের কাজ নয়।

বাজেটসহ আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে ধার করা নয় অথবা (আমাদের ওপর) বহিঃশক্তির চাপিয়ে দেয়া নয় "প্রকৃতির প্রতি পূর্ণ সম্মান ও আস্থাভিত্তিক বৈষম্য হ্রাস-উদ্দিষ্ট উন্নয়নদর্শন"ই সঠিক পথ বলে আমরা বিবেচনা করি। কারণ তাই-ই ছিল ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-ভিত্তি। আমরা বিশ্বাস করি‒ মুক্তিযুদ্ধের শুভ চেতনায় বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব‒ যৌক্তিক, নৈতিক, মানবিক সব বিচারেই তা সম্ভব; সম্ভব এ দেশের দ্রুত কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন; সম্ভব উন্নত বাংলাদেশ গড়া; সম্ভব বৈষম্যহীন সমাজ গড়া; সম্ভব অসাম্প্রদায়িক মানবসমাজ সৃষ্টি। আমরা এটিও বিশ্বাস করি যে করোনা-১৯-এর মহামারী-বিপর্যয় সেই সুযোগ সৃষ্টি করেছে, যা 'শোভন সমাজব্যবস্থা' বিনির্মাণের শ্রেষ্ঠ সময়। এই সুযোগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে সমগ্র দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার শ্রেষ্ঠ সুযোগ।
এতক্ষণ নীতি-দর্শনগত যে মৌলকথন হলো সেসবের ভিত্তিতে আসন্ন বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে পদ্ধতিগতভাবে যেসব বিষয় বা 'অনুসিদ্ধান্তের' ওপর জোর দেবার ও অগ্রাধিকার প্রদানের কথা ভাবা প্রয়োজন তা হলো নিম্নরূপ: 

(১) সাংবিধানিক ভিত্তি: বাজেট প্রণয়নে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন‒ সংবিধানের বিধানসমূহকে ভিত্তি হিসেবে ধরে নিতে হবে। সংবিধানের সাথে সাযুজ্যহীন অথবা অসঙ্গতিপূর্ণ অথবা বিরোধাত্মক এ ধরনের সবকিছু বাজেট প্রণয়নে বর্জন করতেই হবে। 'সচেতনবর্জিত' বিষয়াদি হতে হবে সংবিধানের ৭ (১) ও ৭ (২) অনুচ্ছেদে "সংবিধানের প্রাধান্য"র সাথে সম্পূর্ণ সঙ্গতিপূর্ণ। যা নিম্নরূপ:
             "(১) প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ; এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীনে ও কর্তৃত্বে কার্যকর হইবে।
            (২) জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোন আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসমঞ্জস হয়, তাহা হইলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইবে।" [গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান, অনুচ্ছেদ ৭ (১), (২)]

(২)    রাষ্ট্রের অধিকতর সক্রিয় ও ফলপ্রদ ভূমিকা: অর্থনৈতিক উন্নয়নে নয়া-উদারবাদী দর্শনের বিপরীতে রাষ্ট্রের অধিকতর সক্রিয় ও ফলপ্রদ ভূমিকার প্রয়োজনীয়তা সম্পূর্ণ স্বীকার করে (যা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ) রাষ্ট্রের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে ব্যয় বরাদ্দ নির্ণয় করা প্রয়োজন। আমরা মনে করি যে কোভিড-১৯-এর মহাবিপর্যয়কর আঘাতসহ অর্থনৈতিক-সামাজিক সংকট মোকাবেলা এবং একই সাথে প্রাকৃতিক যুক্তির বৈষম্যহীন সমাজ-অর্থনীতি-রাষ্ট্র বিনির্মাণে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে বাজেট হতে হবে সম্প্রসারণমূলক। আমরা সম্পূর্ণ অবগত যে নব্য-উদারবাদীরা রাষ্ট্র-সরকারের নিয়ন্ত্রণ উঠিয়ে নেবার কথা এখন আরো জোর দিয়ে বলবেন। তাদের অনেকেই এখন বলছেন যে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ বেশি হবার ফলেই বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ মহামন্দামুখী; বলছেন বাজারকে তার কাজ করতে বাধা দেওয়া হয়েছে বলেই মহাবিপর্যয় হচ্ছে এবং হবে; বলছেন যে সরকারের এখন উচিত হবে যেখানে যত অর্থকড়ি আছে, তার সবই ব্যক্তিমালিকদের দিয়ে দেওয়া হোক‒ সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

(৩)    দারিদ্র্য-বৈষম্য-অসমতা দূরীকরণে প্রত্যক্ষ ভূমিকা প্রদানকারী খাত: বাজেট বরাদ্দে সেসব খাত-ক্ষেত্রকে অগ্রাধিকার দেয়া জরুরি, যেসব খাত দ্রুতগতিতে দারিদ্র্য-বৈষম্য-অসমতা দূরীকরণে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে, যেসব খাতের বরাদ্দে দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক অভিঘাত হয় ধনাত্মক, যেসব খাতের বরাদ্দ কৃষির বিকাশ, দেশজ শিল্পায়ন, অভ্যন্তরীণ বাজার, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ মানবসম্পদের বিকাশকে ত্বরান্বিত করে, যেসব খাতের বরাদ্দ প্রকৃতি-পরিবেশ-প্রতিবেশের সম্মান-সহায়ক, যেসব খাতের বরাদ্দ মানবসত্তার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা-সহায়ক।

(৪) কোভিড-১৯-এর অভিঘাত মোকাবেলায় উন্নয়ন-ভবিষ্যৎ নিয়ে সুনির্দিষ্ট ভাবনা: কোভিড-১৯-এর সম্ভাব্য অভিঘাত নিয়ে গবেষণা-উদ্ভূত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণসহ সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব বাজেটে থাকতে হবে। 
(৫)    আয় ও ব্যয়ের কাঠামোগত রূপান্তর: সঙ্গত কারণেই বাজেটের আয় ও ব্যয় খাতে কাঠামোগত রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা জরুরি। এ বিবেচনার ভিত্তি হবে সংবিধানের ভিত্তিতে 'শোভন সমাজ-শোভন অর্থনীতি বিনির্মাণ'।

(৬)    বৈদেশিক ঋণ নির্ভরতাবিহীন: কোনো ধরনের বৈদেশিক ঋণের প্রয়োজনীয়তা ছাড়াই বাজেট প্রণয়ন করা সম্ভব। এ অনুসিদ্ধান্তের মূল কারণ দ্বিবিধ‒ আমরা অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক-সামাজিক সার্বভৌমত্ব গুরুত্বপূর্ণ মনে করি এবং বৈদেশিক ঋণ নব্য-উদারবাদী মুক্তবাজার মতবাদতাড়িত যা স্বাধীন বিকাশের প্রতিবন্ধক। তবে বিদ্যমান রেন্টসিকার-লুটেরা-দুর্বৃত্ত ডাকিনীবিদ্যক পুঁজি ও কর্পোরেশনবেষ্টিত (যাকে বলে জম্বি কর্পোরেশন) রাজনীতি-অর্থনীতি ব্যবস্থায় রাষ্ট্র-সরকার তুলনামূলক কম বিষাক্ত (লেস টক্সিক) বৈদেশিক ঋণ নিলেও নিতে পারেন (বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এটা হতে পারে প্রয়োজনীয় আপোসমূলক অবস্থান)।

(৭)    রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে বিত্তবান-ধনীদের ওপর যুক্তিসঙ্গত চাপ প্রয়োগ: করোনাভাইরাস-উদ্ভূত বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে বাজেটের জন্য সম্পদ আহরণ ও বৈষম্য হ্রাসের অন্যতম পদ্ধতি হিসেবে সরকারের রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে ব্যাপক জনগোষ্ঠীর ওপর‒ দরিদ্র, নিম্নবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত, মধ্য-মধ্যবিত্ত আমরা কোনো ধরনের চাপ প্রয়োগ সমীচীন মনে করি না। আমরা মনে করি চাপ প্রয়োগ দরকার ধনিকশ্রেণি-সম্পদশালীদের ওপর। ধনী ও বিত্ত-সম্পদশালী ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান, যারা সঠিক কর প্রদান করেন না তারা যেন সঠিক পরিমাণ কর প্রদান করেন তা বিবেচনা জরুরি। একই সাথে প্রয়োজনানুযায়ী বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন কর হার নির্ধারণ জরুরি। 
(৮)    পরোক্ষ করের তুলনায় প্রত্যক্ষ করের অনুপাত: পরোক্ষ করের বোঝা মূলত দরিদ্র-প্রান্তিক-নিম্নবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্য মধ্যবিত্তদের ওপর তাদের আয়ের তুলনায় অধিক হারে চাপ প্রয়োগ করে; ফলে তা দারিদ্র্য-বৈষম্য হ্রাস করে না। উল্টো তা বৈষম্য বাড়ায়। সে কারণে আমরা মনে করি পরোক্ষ করের তুলনায় প্রত্যক্ষ করের অনুপাত বেশি নির্ধারণ করা প্রয়োজন।

(৯)    কোনো আয়ই আসে না অথচ সম্ভাবনা অনেক: কর-রাজস্ব ও করবহির্ভূত রাজস্ব আয়ের সেসব খাত অনুসন্ধান করা প্রয়োজন, যেসব খাত থেকে আয়করের কথা কখনও ভাবা হয় না (যেমন সম্পদ কর, অতিরিক্ত মুনাফার ওপর কর, কালোটাকা উদ্ধার, পাচারকৃত অর্থ উদ্ধার ইত্যাদি) এবং যেসব খাত থেকে কোনো আয়ই আসে না অথচ সম্ভাবনা অনেক। একই সাথে সেসব খাত চিহ্নিত করা প্রয়োজন যেসব খাত থেকে স্বল্প আয় আসে, অথচ প্রাপ্তির সম্ভাবনা অনেক যদি একটু সাহসী ও উদ্যমী হওয়া যায় এবং কর-রাজস্ব ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করা যায়।  

(১০)    উন্নয়নদর্শন ও কোভিড-১৯-এর অভিঘাত মোকাবেলার কারণে বাজেট বরাদ্দে অগ্রাধিকার: 'শোভন জীবনব্যবস্থা' নিশ্চিতকরণে যে উন্নয়নদর্শন সঠিক বলে আমরা মনে করি, সে কারণেই বাজেট বরাদ্দে আমাদের অগ্রাধিকারক্রম হওয়া উচিত হবে নিম্নরূপ: শিক্ষা ও প্রযুক্তি ('শিক্ষা'কে আমরা প্রযুক্তি থেকে ভিন্ন করে শিক্ষা খাতে "শিক্ষা ও গবেষণা" নাম দিয়ে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দিয়েছি), সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ, পরিবহণ ও যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, জনপ্রশাসন, কৃষি, স্বাস্থ্য (কৃষির সমান), স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন, জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা, গৃহায়ণ (জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার সমান), সুদ, প্রতিরক্ষা, বিনোদন, সংস্কৃতি ও ধর্ম (সংস্কৃতি ও ধর্মকে আমরা একবন্ধনী খাত থেকে দুটি ভিন্ন খাত হিসেবে প্রস্তাব করেছি), শিল্প ও অর্থনৈতিক সার্ভিস, বিবিধ ব্যয় (খাদ্য হিসাবসহ)।

(১১)    দুটি নতুন বিভাগ সংযোজন: জাতীয় স্বার্থে বাজেটের সম্পদ ব্যবহারে আমরা দুটি নতুন বিভাগ প্রস্তাব করেছি। প্রথমটি, স্বাস্থ্য খাতের অধীনে 'জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা (সিস্টেম) বিভাগ' (কোভিড-১৯-এর শিক্ষা থেকে); আর দ্বিতীয়টি, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে 'প্রবীণ হিতৈষী বিভাগ' (জনসংখ্যায় প্রবীণ মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং দুর্দশা বৃদ্ধির কারণে)।

(১২)    মানব উন্নয়ন ও মানবসম্পদ-উন্নয়ন: মানব উন্নয়ন ও মানবসম্পদ-উন্নয়নসহ উৎপাদনশীল বিনিয়োগে দারিদ্র্য-বৈষম্য-অসমতা দূরসহ সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী (কৃষকের শস্য-বীমা ও ভূমি সংস্কারসংশ্লিষ্ট কার্যক্রম), কৃষি, স্বাস্থ্য, খাদ্য মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, গৃহায়ণ, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ-এর বরাদ্দে আমরা যুক্তিসঙ্গত অগ্রাধিকার দেবার প্রস্তাব করছি। 

(১৩)    আমদানি শুল্ক হার নির্ধারণে দেশজ শিল্পায়ন ও দেশজ কৃষি: আমদানি শুল্ক হার নির্ধারণে দেশজ শিল্পায়ন ও দেশজ কৃষির স্বার্থ বিবেচনায় কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ খাত-উপখাতসমূহের ক্ষেত্রে আমরা মুক্তবাজার দর্শনের বিপরীতে সংরক্ষণবাদ নীতি-দর্শন প্রয়োজনের সুপারিশ করছি।
(১৪)    প্রকৃত মানবিক উন্নয়নের অন্যতম পথনির্দেশক দলিল: আসন্ন বাজেটে আয়-ব্যয় বিন্যাসসহ বিভিন্ন নীতি-কৌশলসংশ্লিষ্ট নিদের্শনা মেনে নিম্নবর্ণিত বিষয়াদির সম্ভাব্য অর্জন মাত্রা নিরূপণ করা প্রয়োজন: (ক) প্রকৃতির প্রতি পূর্ণ আস্থা ও সম্মান বজায় রেখে প্রস্তাবিত আয় ও ব্যয় যেন বৈষম্য হ্রাসকারী মানবিক উন্নয়ন নিশ্চিত করে, (খ) সমাজের সকল দরিদ্র-প্রান্তিক পিছিয়ে পড়া মানুষের সম্ভাব্য দ্রুতগতিতে জীবনমান বৃদ্ধির নিশ্চয়তা, (গ) বণ্টন ন্যায্যতা নিশ্চিতসহ উচ্চতর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, (ঘ) অধিকতর কার্যকরী, বৈচিত্র্যপূর্ণ উৎপাদনশীল কৃষি, (ঙ) অধিক হারে কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ ন্যায্য মজুরির নিশ্চয়তা, (চ) শিল্পায়ন: অণু, ক্ষুদ্র, মাঝারি, বৃহৎ (আত্মকর্মসংস্থানসহ) এবং শিল্পে শ্রমিকের মালিকানাভিত্তিক অংশীদারিত্ব, (ছ) অনানুষ্ঠানিক সেক্টরে শ্রমজীবী মানুষের উন্নত জীবনমান এবং শোভন কাজ, (জ) কৃষি-ভূমি-জলা সংস্কার, (ঝ) নারীর অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক ক্ষমতায়ন, (ঞ) বাণিজ্য ও পণ্য বাজারজাতকরণে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য হ্রাস এবং কৃষকের পণ্যের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি, (ট) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সর্বোত্তম জনকল্যাণকর ব্যবহার, (ঠ) সরকারি খাতে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা, দক্ষতা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ইত্যাদির মাধ্যমে জনসংখ্যাকে মানবসম্পদে রূপান্তর, (ড) প্রাথমিক ও উচ্চতর স্বাস্থ্যসেবা (জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা সেবাসহ) নিশ্চিতকরণে শক্তিশালী সরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাত, এবং (ড়) সব ধরনের সামাজিক সুরক্ষার বিস্তৃতিসহ সুসংগঠিত সামাজিক বীমা পদ্ধতি। 

কোভিড-১৯-এর মহামারির মহাবিপর্যয় থেকে মুক্তি এবং একই সাথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে উল্লেখিত পদ্ধতিগত ভিত্তি-ভাবনা প্রয়োগে আমরা মনে করি আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের  মোট আকার (পরিচালন ও উন্নয়ন মিলে) হওয়া উচিত কমপক্ষে ১৫ লক্ষ কোটি টাকা। আমাদের প্রস্তাব বৃহদাকার-সম্প্রসারণশীল বাজেট। আমরা আশা করি যুক্তি থাকলে সরকার আমাদের এই প্রস্তাব গ্রহণ করবেন। কারণ অর্থনৈতিক মহামন্দা ও কোভিড-১৯-এর বিপর্যয়কর অভিঘাত মোকাবেলা করে আমরা আলোকিত মানুষসমৃদ্ধ বৈষম্যহীন 'শোভন সমাজব্যবস্থা' বিনির্মাণের পক্ষে। 

*বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি কর্তৃক প্রস্তাবিত এই দলিল প্রণয়নে যেসব সূত্র ব্যবহার করা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম: বিভিন্ন সময়ের সংশ্লিষ্ট সরকারি পরিসংখ্যান, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি প্রস্তাবিত বিকল্প বাজেট (২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে), এবং বারকাত, আবুল (২০২০), "বড় পর্দায় সমাজ-অর্থনীতি-রাষ্ট্র: ভাইরাসের মহাবিপর্যয় থেকে শোভন বাংলাদেশের সন্ধানে" (বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি ও মুক্তবুদ্ধি প্রকাশনা)। 


  • লেখক: অধ্যাপক, জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগ, সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি।

Related Topics

টপ নিউজ

আবুল বারাকাত / বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ইরানের ৩ পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা, ফোরদো ‘ধ্বংস’
  • ইরানে মার্কিন হামলায় যেভাবে বি-২ বোমারু বিমান অংশ নিল
  • মার্কিন হামলায় ‘একরকম নিশ্চিত’ হয়ে গেল এক দশকের মধ্যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ হবে: বিশ্লেষক
  • যুক্তরাষ্ট্রের ‘বাংকার-বাস্টার’-এ 'ধ্বংস' ইরানের ফোরদো, কতটা ভয়ানক এই বোমা?
  • ফোরদো আগেই খালি করে ফেলা হয়েছে, আশপাশের বাসিন্দাদের কোনো ‘বিপদ নেই’: ইরান
  • সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে তিনজনের নাম জানিয়েছেন খামেনি: নিউইয়র্ক টাইমস

Related News

  • অর্থনীতি সমিতি নিয়ে দু’পক্ষের বিরোধ, কার্যালয়ে তালা 
  • কালো, পাচারকৃত অর্থের ১% পুনরুদ্ধারে রাষ্ট্রের কোষাগারে বাড়বে ১৫,০০০ কোটি টাকা
  • ১৪ লাখ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির 

Most Read

1
আন্তর্জাতিক

ইরানের ৩ পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা, ফোরদো ‘ধ্বংস’

2
আন্তর্জাতিক

ইরানে মার্কিন হামলায় যেভাবে বি-২ বোমারু বিমান অংশ নিল

3
আন্তর্জাতিক

মার্কিন হামলায় ‘একরকম নিশ্চিত’ হয়ে গেল এক দশকের মধ্যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ হবে: বিশ্লেষক

4
আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রের ‘বাংকার-বাস্টার’-এ 'ধ্বংস' ইরানের ফোরদো, কতটা ভয়ানক এই বোমা?

5
আন্তর্জাতিক

ফোরদো আগেই খালি করে ফেলা হয়েছে, আশপাশের বাসিন্দাদের কোনো ‘বিপদ নেই’: ইরান

6
আন্তর্জাতিক

সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে তিনজনের নাম জানিয়েছেন খামেনি: নিউইয়র্ক টাইমস

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net