মিস ইউএসএ’র প্রথম ট্রান্সজেন্ডার প্রতিযোগী হতে যাচ্ছেন কাতালুনা এনরিকেজ

প্রাইড মান্থের সম্মানে নিজের নকশা করা রঙধনুরঙা সিকুইন গাউন পরে গত সপ্তাহে 'মিস নেভাডা' নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে আমেরিকার ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায় যুক্ত করেছেন কাতালুনা এনরিকেজ। কারণ তিনিই প্রথম ট্রান্সজেন্ডার প্রতিযোগী হিসেবে আগামী শরতে অনুষ্ঠিতব্য সৌন্দর্য্য প্রতিযোগিতা 'মিস ইউএসএ'তে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
মিস নেভাডা বিজয়ী হওয়ার পরপরই এলজিবিটিকিউ কমিউনিটির উদ্দেশ্যে তিনি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেন, 'আমার জয় আসলে আমাদের জয়। আমরা এই মুহূর্তে একটা ইতিহাস গড়লাম। হ্যাপি প্রাইড।'
এনরিকেজ মিস নেভাডা ইউএসএ'রও প্রথম ট্রান্সজেন্ডার প্রতিযোগী ছিলেন। আরও ২১ জন নারী প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে নিজের বিজয় নিশ্চিত করেন তিনি। ২০২১ মিস ইউএসএ প্রতিযোগিতায় তিনি সিলভার স্টেটের প্রতিনিধিত্ব করবেন। এর গ্র্যান্ড ফিনালে আগামী ২৯ নভেম্বর ওকলাহোমা রাজ্যের টুলসা শহরে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে, যেখানে মিস ইউএসএ বিজয়ী হতে পারলে তার সামনে মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি হবে।
এনরিকেজ যদি মিস ইউএসএ'র মুকুট নিজের করে নিতে পারেন, তাহলে তিনি হবেন মিস ইউনিভার্সে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাওয়া দ্বিতীয় ট্রান্সজেন্ডার প্রতিযোগী। এর আগে ২০১৮ মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় স্পেনের প্রতিনিধিত্ব করেন ট্রান্সজেন্ডার অ্যাঙ্গেলা পোন্স। ২০১২ সাল থেকে এই প্রতিযোগিতায় ট্রান্সজেন্ডারদের অংশগ্রহণ করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।
এনরিকেজ ২০১৫ সাল থেকে বিভিন্ন সৌন্দর্য্য প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে শুরু করেন। সে সময় নিজের শরীরের মাপমতো কাস্টম ডিজাইনার গাউন কেনা বা বানাতে দেওয়ার সামর্থ্য না থাকায় তিনি নিজেই বিভিন্ন প্রতিযোগিতার জন্য নিজের পোশাকের নকশা করতে শুরু করেন। এরই পথ ধরে তিনি 'কাতালুনা কোচিওর' নামে নিজের একটি ফ্যাশন ব্র্যান্ডও চালু করেন।
গত মার্চ মাসে এনরিকেজ প্রথম ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে মিস নেভাডা'র প্রাথমিক ধাপ, মিস সিলভার স্টেট ইউএসএ বিজয়ী হন।
বলাই বাহুল্য, কাতালুনা এনরিকেজের এই যাত্রা সহজ ছিল না এবং তিনি বিভিন্ন জায়গায় বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। নেভাডার বাইরে এক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সময় যখন আয়োজকরা জানতে পারেন, তিনি একজন ট্রান্স, তখন তাকে কোনো রুমমেট দেওয়া হয়নি। তিনি যে আগে একজন নারীই, তা যাচাই করার জন্য প্রতিযোগিতা শুরুর আগে একজন ডাক্তারও পাঠানো হয়।
কিন্তু এনরিকেজ এনপিআরের আয়োজন, 'উইকেন্ড অল থিংস কনসিডারড'কে জানান, নতুন এক ইতিহাস গড়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষাই তাকে এগিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা দিয়েছে।

"আমার একটা উদ্দেশ্য ছিল, একটা স্বপ্ন ছিল। আমি মিস ইউএসএ'র মঞ্চে প্রতিযোগিতা করতে চেয়েছিলাম। যখন কিশোরী ছিলাম, আমি সবসময় আমার মতো একজন মানুষকে মিস ইউএসএ'র মঞ্চে দেখতে চাইতাম। আর ইতিহাস তৈরি করার সেই মানুষটা যে আমিই হব, তা ঠিক করাই ছিল।'
মিস ইউএসএ সৌন্দর্য্য প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকা এনরিকেজ জানালেন, সমতা ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে তার।
তিনি বলেন, 'আমার এ বিজয় শুধু ট্রান্সজেন্ডার কমিউনিটির বিজয় না; এটা সকল নারী, যাদের তুলে ধরা উচিত, তাদের সবার বিজয়।'
-
সূত্র: এনপিআর