পরীমনি কেন আমাদের শবনমের কাছে নিয়ে যান?

সম্প্রতি ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে এক ব্যবসায়ী ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ঢালিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী পরীমনি। এ ঘটনা 'টক অব দ্য কান্ট্রি'তে পরিণত হয়েছে।
পরীমনির মতো সুপরিচিত ও হাইপ্রোফাইল তারকার এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া সমাজে নারীর নিরাপত্তার প্রসঙ্গটি আবারও জোরালভাবে সামনে নিয়ে এসেছে।
অভিনয় জগতের কোনো বড় তারকার এমন পরিস্থিতির শিকার হওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম নয়। এর আগে, এক সময়ের তারকা অভিনেত্রী শবনমও মর্মান্তিক নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন। তবে সেটি ঘটেছিল পাকিস্তানে।
১৯৬০-এর দশকে ক্যারিয়ার শুরু করা বাংলাদেশি এ অভিনেত্রী তার ক্যারিয়ারের স্বর্ণযুগের বেশির ভাগ সময়ই কাটিয়েছেন পাকিস্তানে, উর্দু চলচ্চিত্রে। সে দেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে অন্যতম শীর্ষ অভিনেত্রী হিসেবে কাজ করেছেন প্রায় ২৮ বছর। শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে মর্যাদাপূর্ণ নিগার অ্যাওয়ার্ড জয় করে নিয়েছেন রেকর্ড ১৩ বার।
তবে ১৯৭৮ সালের ১৩ মে রাতে বিভীষিকা নেমে এসেছিল ওই প্রখ্যাত অভিনেত্রীর জীবনে। সে রাতে পাকিস্তানের পাঞ্জাবের প্রভাবশালী রাজনীতিক ফারুক বানদিয়াল ও তার চার বন্ধু লাহোরের গুলবার্গে, শবনমের বাসায় অস্ত্রসহ হানা দেন। তারা শবনমের স্বামী প্রখ্যাত সংগীত পরিচালক রবিন ঘোষ এবং তাদের একমাত্র সন্তানকে বেঁধে সারা রাত অভিনেত্রীর ওপর নির্যাতন চালান।
সেই ঘটনা পাকিস্তানসহ গোটা উপমহাদেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। নির্যাতনকারীরা প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও উচ্চবিত্ত পরিবারের সদস্য হওয়ায় মামলা না করার ব্যাপারে প্রবল চাপে ফেলা হয় অভিনেত্রী পরিবারকে।

অবশ্য অভিনয় জগতের সহকর্মীরা শবনমের পাশে দাঁড়ানোয় মামলা নিতে বাধ্য হয় পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউল হকের সরকার। গঠন করা হয় বিশেষ সামরিক ট্রাইবুনাল। আর সেখানে ৫ অভিযুক্তের সবাইকে দেওয়া হয় মৃত্যুদণ্ড।
তবে সেই রায় কার্যকর করা হয়নি। মূল আসামির পরিবারের দাপটে একসময় ঠুনকো অজুহাত দেখিয়ে নিপীড়নের মামলাকে সাধারণ ডাকাতির মামলায় রূপান্তরের মাধ্যমে বাঁচিয়ে দেওয়া হয় অপরাধীদের। পরবর্তীকালে পাকিস্তান ছেড়ে সপরিবারে স্বদেশ বাংলাদেশে ফিরে আসেন 'আম্মাজান'খ্যাত শবনম।
সেই মূল অপরাধী ফারুক বানদিয়াল পরবর্তীকালে নিজেকে রাজনীতিতে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। এমনকি ২০১৮ সালে ইমরান খানের রাজনৈতিক দল পিটিআই'তেও যোগ দেন। অবশ্য এ সময়ে শবনম নিপীড়নের ঘটনা আবারও আলোচনায় উঠে এলে ফারুককে দল থেকে বহিষ্কার করতে বাধ্য হন ইমরান।

পরীমনির ক্ষেত্রে শবনম কাণ্ডের পুনরাবৃত্তি ঘটবে না, বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদবে না, এমন প্রত্যাশা 'স্বপ্নজাল'খ্যাত অভিনেত্রীর অসংখ্য অনুরাগীর।