১২২ বছরে চেরাপুঞ্জির রেকর্ড বৃষ্টিপাতে বন্যা বাংলাদেশে

লাগাতার মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে মেঘালয়ের পূর্ব খাসি পাহাড়ের চেরাপুঞ্জিতে। পরিসংখ্যান বলছে, গত ১২২ বছরে এ নিয়ে তৃতীয়বার এই ধরনের বৃষ্টি হলো। গত পরশু ২৪ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে ৯৭ সেন্টিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ গত ১২২ বছরের মধ্যে এক দিনে তৃতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে সেখানে।
১৯৯৫ সালের ১৬ জুন চেরাপুঞ্জিতে সর্বোচ্চ ১৫৬.৩ সেন্টিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। এ বছরের ১৫ জুন মৌসিনরামে গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি ৭১ সেন্টিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ১৯৬৬ সালের ৭ জুন মৌসিনরামে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছিল ৯৪.৫ সেন্টিমিটার।
আবহাওয়াবিদদের মতে, বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগর থেকে আসা প্রচুর জলীয় বাষ্প পূর্ব হিমালয়ে ধাক্কা খেয়ে বৃষ্টি তৈরি করেছে। আবহাওয়াবিদ আর. জেনামানি জানিয়েছেন, আরবসাগর ও বঙ্গোপসাগর থেকে প্রচুর জলীয় বাষ্প ওই এলাকায় চলে এসেছে। তার জেরেই এত বৃষ্টি।
গত তিন দিন (১৫-১৭ জুন) বাংলাদেশের উজানে আসাম ও মেঘালয়ে প্রায় ২৫০ সেন্টিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
গত তিন দিনে হওয়া ওই বৃষ্টির পানিই ঢল হয়ে বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের সবগুলো জেলায় প্রবেশ করেছে। আর তাতেই ডুবে গেছে সিলেটের প্রায় ৮০ শতাংশ ও সুনামগঞ্জের ৯০ শতাংশের বেশি এলাকা।
বাংলাদেশ সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী ৩ দিন উজানে ভারতীয় ও বাংলাদেশ অংশে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে আরও খারাপের দিকে যেতে পারে বন্যা পরিস্থিতি।
ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, চেরাপুঞ্জিতে আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে। আর ব্রহ্মপুত্রের উজানে আসামের গুয়াহাটিতে হতে পারে ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি ।
চেরাপুঞ্জি ও আসামের ভাটি এলাকা হিসেবে বাংলাদেশের সিলেট ও কুড়িগ্রামে ওই বৃষ্টিপাতের পানি ঢল হয়ে নামতে শুরু করবে। এসব এলাকায় আগে থেকেই বেশি বৃষ্টি ছিল। বাংলাদেশের ভেতরে হওয়া বৃষ্টিপাতের সঙ্গে সঙ্গে ভারতের বৃষ্টিপাত থেকে আসা নতুন পানি যোগ হয়ে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
উজান-ভাটি দুদিকেই বৃষ্টিপাতের কারণে সিলেট বিভাগের বন্যা পরিস্থিতিও আরও দুই-তিন দিন অবনতি হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। দ্রুত খারাপের দিকে যেতে পারে উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতিও।
গত তিন দিন মিলিয়ে ভারতের চেরাপুঞ্জি ও আসামে মোট আড়াই হাজার মিলিমিটারের কাছাকাছি বৃষ্টি হয়েছে। আর সেই পানি ঢল হয়ে সীমানা পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশে।
মেঘালয় বা আসাম থেকে আসা বৃষ্টির অতিরিক্ত পানি নদীপথে হাওর থেকে বেরিয়ে মেঘনা বা যমুনা হয়ে বঙ্গোপসাগরে চলে যায়। কিন্তু হঠাৎ উজান থেকে আসা অতিরিক্ত পানি বের হতে না পারাকে এবারের বন্যার প্রধান কারণ বলছেন গবেষকরা।