গুদাম থেকে বেরিয়ে আসছে মজুতকৃত হাজার হাজার লিটার তেল!

পাম তেলের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তে বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের বড় ধরনের সরবরাহ সংকট তৈরির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ঈদের আগে থেকেই দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের এ সংকট চলছে। সরকার কর্তৃক তেলের বাড়তি দাম নির্ধারণের পরেও রাজধানীর অধিকাংশ বাজারই ভোজ্যতেল শূন্য।
অথচ জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও পুলিশের অভিযানে দেশের বিভিন্ন জেলায় গুদাম থেকে বেরিয়ে আসছে মজুতকৃত হাজার হাজার লিটার তেল।
দৈনিক প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত দুই দিনে দেশের সাত জেলায় অভিযান চালিয়ে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬৬ লিটার ভোজ্যতেল জব্দ করা হয়েছে; অবৈধভাবে এসব তেল মজুতের দায়ে আট জেলার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা।
রাজশাহী
রাজশাহীতে ভোজ্যতেলের অবৈধ মজুদদারদের ধরতে অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ। মঙ্গলবার বিকেলে রাজশাহীর পুঠিয়ার বানেশ্বর বাজারে জেলা পুলিশ ও পুঠিয়া থানা পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে ইতিমধ্যে ৯৩ হাজার ভোজ্যতেল জব্দ করেছে। এর মধ্যে সয়াবিন রয়েছে ২৪ হাজার ৬৮৪ লিটার ও পামওয়েল ৬৭ হাজার ৯৩২ লিটার।
রাজশাহীর পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন জানান, অভিযানে পুঠিয়ার বানেশ্বরে সরকার অ্যান্ড সন্সের গোডাউন থেকে ৭৪ ড্রাম, এজাজ স্টোর থেকে ১৪২ ড্রাম, মেসার্স পাল অ্যান্ড ব্রাদার্স ১০৩ ড্রাম ও রিমা স্টোর থেকে ৭৫ ড্রাম ভোজ্যতেল জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া বানেশ্বর ট্রাক থেকে ৬০ ড্রাম ভোজ্যতেল জব্দ করা হয়েছে। একটি ড্রামে ২০৪ লিটার রাখা যায়। সেহিসেবে মোট ৯২ হাজার ৬১৬ লিটার ভোজ্যতেল জব্দ করা হয়েছে। বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অধিক মুনাফা লাভের আশায় তারা গোডাউনে তেল অবৈধভাবে মজুদ করে রেখেছিলো। অবৈধ মজুদদারদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান তিনি।
এছাড়া মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয় ১৬০ টাকা লিটারের বোতলজাত তেল ড্রামে ঢেলে খোলা তেল হিসেবে ১৮৫ টাকায় বিক্রি করার অভিযোগে নগরীর বহরমপুর এলাকায় মেসার্স নুরুন্নবী ট্রেডার্সে অভিযান চালিয়ে দোকানমালিক মো. নুরুন্নবীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে।
বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. হাসান-আল-মারুফ জানান, দুপুরে তারা নগরের বহরমপুর এলাকায় মেসার্স নুরুন্নবী ট্রেডার্সে যান। সেখানে এর আগেও বেশি দামে সয়াবিন তেল বিক্রির দায়ে একবার সতর্ক করা হয়েছিল। এবার ভোক্তা অধিকারের গাড়ি চালককে দিয়ে সেখান থেকে এক লিটার খোলা সয়াবিন তেল কেনেন। এতে দোকানের মালিক মো. নুরুন্নবী দাম রাখেন ১৮৫ টাকা। যদিও বাজারে খোলা তেল ১৮০ টাকায় বিক্রির কথা। পরে খোঁজ নিয়ে দেখেন, ১৬০ টাকা লিটারের বোতল খুলে সেই তেলকে ১৮৫ টাকায় খোলা তেল হিসেবে বিক্রি করছিলেন ব্যবসায়ী নুরুন্নবী।
এছাড়া দোকানের গুদামে ১৩২ লিটার সয়াবিন তেল মজুত রেখে কৃত্রিম সংকট তৈরির অভিযোগে এক দোকানদারকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তা হাসান-আল-মারুফ।
তিনি জানান, নগরের সাহেববাজার এলাকায় মেসার্স হুমায়ুন স্টোরে বিপুল পরিমাণ সয়াবিন তেল মজুত আছে বলে তাদের কাছে গোপন খবর ছিল। পরে বেলা ১১টায় সেখানে গিয়ে অভিযান চালানো হয়। দোকানের গুদামে ১৬০ টাকা বোতলের দামের ১৩২ লিটার সয়াবিন তেল পাওয়া যায়। পরে দোকানের মালিক হুমায়ুন কবীরকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ৪৫ ধারা অনুযায়ী ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জব্দ তেলের বোতলগুলোর বেশিরভাগ সেখানেই জনতার মধ্যে বিক্রি করা হয়।
অভিযান শেষ করার পর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা হাসান-আল-মারুফ দেখতে পান, শোভন দাস নামের এক ব্যক্তি পাঁচ লিটারের এক বোতল সয়াবিন তেল নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন। কৌতূহলবশত তিনি দাম জানতে চান। শোভন দাস পাঁচ লিটারের বোতল ৯৮৫ টাকা দিয়ে কিনেছেন বলে জানান। তবে সে বোতলের গায়ে পুরোনো দাম ৭৬০ টাকা লেখা ছিল। পরে মেসার্স পাপ্পু অ্যান্ড ব্রাদার্সের দোকানে গিয়ে এর সত্যতা মেলে। এজন্য দোকানের মালিক নজরুল ইসলামকে ভোক্তা অধিকার আইনের ৪০ ধারা অনুযায়ী ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
হাসান-আল-মারুফ বলেন, তারা অভিযানকালে ভোক্তাদের সতর্কও করছেন। যাতে তারা বাজারদরের চেয়ে বেশি দামে পণ্য না কেনেন এবং জোর করলে যেন তাদের খবর দেওয়া হয়। এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
এর আগে গতকাল সোমবার রাতে জেলা পুলিশের অভিযানে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুরের দুটি তেলগুদাম থেকে মোট ২৬ হাজার ৭২৪ লিটার ভোজ্যতেল জব্দ করা হয়। এর মধ্যে খোলা সয়াবিন ছিল ১৯ হাজার ২২৪ লিটার, আর সরিষার তেল ছিল ৭ হাজার ৫০০ লিটার। এ ঘটনায় পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
পাবনা
পাবনার ঈশ্বরদী বাজারের শ্যামল স্টোরের গোডাউনে অভিযান চালিয়ে ১০ হাজার লিটার খোলা সয়াবিন তেল, ১২৪৪ লিটার বোতলজাত তেল ও ৭ হাজার লিটার সরিষার মজুত তেল উদ্ধার করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
ঈদের আগে এসব ভোজ্যতেল সংগ্রহ করে নিজের গুদামে অবৈধভাবে মজুত করেছিলেন শ্যামল স্টোরের মালিক শ্যামল দত্ত পাল।
মঙ্গলবার (১০ মে) সকাল ১১টায় শহরের নূরমহল্লা মাতৃমন্দিরের সামনে শ্যামল পালের গোডাউনে অভিযান পরিচালনা করেন পাবনা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক জহিরুল ইসলাম। এসময় তিনি ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও ভোজ্যতেল জনসম্মুখে ঈদের পূর্বের দামে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করার নির্দেশ দেন। অভিযানে প্রসিকিউটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ঈশ্বরদীর নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক সানোয়ার রহমান।
বিপুল পরিমাণ ভোজ্যতেল আটকের পর মাত্র ২০ হাজার টাকা জরিমানা করায় উপস্থিত ক্রেতা ও সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
স্বপন হোসেন নামে এক ক্রেতা জানান, শ্যামল পালের গোডাউনে মালামাল জব্দ ও সিলগালা করা উচিত ছিল। শ্যামল পালের মতো আরো বেশ কয়েকজন তেল মজুদদার ব্যবসায়ী রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও অভিযান পরিচালনার দাবি জানান উপস্থিত ক্রেতারা।
কুষ্টিয়া
কুষ্টিয়া শহরের একটি গোডাউনেই মজুত ছিল ৪০ হাজার লিটার সয়াবিন তেল।
মঙ্গলবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কুষ্টিয়া জেলা কার্যালয় পরিচালিত অভিযানে তিন দোকানী ও মজুদদারকে জরিমানা করা হয়েছে।
সহকারী পরিচালক সুচন্দন মন্ডলের নেতৃত্বে শহরের বিভিন্ন বাজারে এই অভিযান চালানো হয়। অভিযানে অতিরিক্ত মজুদ ও মূল্যের বিপরীতে বিভিন্ন পরিমাণে জরিমানা করা হয়।
এছাড়াও বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, গাজীপুর, সিলেট, পটুয়াখালী, বরিশাল ইত্যাদি জেলায় অভিযান চালিয়েও বিপুল পরিমাণ তেল জব্দ করা হয়েছে।