কালো ঝড় মুছে দিলো ডলির মেহেদীর রঙ

কদিন আগেই মেহেদীর রঙে 'আই লাভ ইউ নাহিদ' লিখেছিলেন ডলি। মেহেদীর সেই রঙ এখনো ডলির হাতে উজ্জ্বল, তবে জীবন থেকে মুছে গিয়েছে নাহিদ। নাহিদ ও ডলির ভালোবাসা ছিলো আকাশছোঁয়া। সেটিকে তারা জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত রাঙিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন। সে ভাবনা থেকে এই ভালোবাসাকে ছয় মাস আগে বিবাহের বন্ধনে বেঁধেছিলেন। কিন্ত হারিয়ে গেছে ডলির প্রিয় মানুষটি।
মঙ্গলবার সকালে কামরাঙ্গীরচর দেওয়ান বাড়ি এলাকার বাসা থেকে বেরিয়ে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে যান নাহিদ। পরে নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজের ছাত্র ও ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের কবলে পড়েন তিনি। রাস্তায় আহত অবস্থায় পরে থাকা নাহিদকে পথচারীরা উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। এরপর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি রাত নয়টার দিকে মারা যান।
এরপর থেকে ডলির কান্না থামছেই না। স্বামীর স্মৃতি বারবার স্মরণ করছেন, আর কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। পরিবারের সদস্যরা তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে ডলি সাংবাদিকদের বলছিলেন, "আমি কিছুটা অসুস্থ ছিলাম। নাহিদকে তাই সেদিন কাজে যেতে মানা করেছিলাম। কিন্তু সে মানেনি। বলে, করোনায় কাজ বন্ধ ছিল অনেকদিন। এই রোজার মাসে আর কাজ বন্ধ রাখা যাবে না। বস ফোন দিয়েছে। কাজে যেতে হবে। এই বলে সে সকাল ১০টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। এরপর শুনি সে মারামারির মধ্যে পড়ে আহত হয়েছে। বসকে ফোন করে জানিয়েছে, আমি গোলাগুলির মধ্যে পড়ে গেছি, বের হতে পারছি না।"
আহাজারি করে ডলি বলেন, "আমি এ ঘটনার বিচার চাই। সরকারের কাছে বিচার চাই। সরকার কি আমাদের ক্ষতিপূরণ দেবে?"
নিহত নাহিদের বাবা মো. নাদিম বলেন, "এই দুঃখ কষ্ট কারে বলুম আমি, কী বলবো, আর কিছু বলার নাই। নাহিদ বিবাহিত, ৬ মাসের মাথায় তার স্ত্রী ডলি বিধবা হলেন। আমার ছেলে কাজের জন্য গেছে, ওতো কারো পক্ষে মারামারি করতে যায় নাই। ওরে কেন মারলো? এখন আমি কার নামে মামলা করুম, কার কাছে বিচার চামু।"
নাহিদের মা নারগিস বেগম ভারাক্রান্ত কণ্ঠে বলেন, "আমার ছেলের মতো ভালো ছেলে আর হয় না। সে কোনোদিন কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ করেনি, মারপিট করেনি। সে সুস্থ দেহে কাজে বের হয়েছিল। এখন লাশ হয়ে ফিরেছে। আমি এ শোক সইবো কেমন করে?"