বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে লন্ডনে পাঁচ বাঙালির নামে পাঁচটি নতুন ভবনের নাম

যুক্তরাজ্য ও ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনের ৩২টি বরোর একটি হলো টাওয়ার হ্যামলেটস। বরোগুলো আইনসভায় প্রতিনিধি পাঠানোর যোগ্যতা রাখে। মধ্যযুগের বরো মানে অনেকগুলো বাড়ির একটি সমষ্টি বা পাড়া যেটি বেড়া দিয়ে ঘেড়া।
মজার ব্যাপার হলো, লন্ডন বরো অব টাওয়ার হ্যামলেটসের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ৩২ ভাগ বাংলাদেশি, সংখ্যায় যা লাখ ছুঁইছুঁই। সেখানে শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশ মোটে ৩১ ভাগ। এর আয়তন ৭.৬৩ বর্গমাইল। প্রতি বর্গমাইলে জনঘনত্ব ৩৪ হাজার। টেমস নদীর উত্তরে অবস্থিত লন্ডনের ডকল্যান্ডগুলোর বেশিরভাগই টাওয়ার হ্যামলেটসে। এর বর্তমান মেয়রের নাম জন বিগস আর উপ-মেয়র আসমা বেগম।
ঘোষণা এলো
আসমা বেগমকে পাশে বসিয়ে টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র জন বিগস ঘোষণা দেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে ব্রিটেনে বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল পাঁচজন বিশিষ্ট বাঙালির নামে পাঁচটি নতুন ভবনের নাম রাখতে যাচ্ছে। বিশিষ্ট বাঙালিরা হলেন- কবি সুফিয়া কামাল, সমাজসেবক তাসাদ্দুক আহমেদ এমবিই, আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং লন্ডনের প্রয়াত সাংবাদিক শাহাবউদ্দিন আহমেদ বেলাল। এছাড়া আলতাব আলীর নামেও একটি ভবনের নামকরণ হচ্ছে। আলতাব আলী পূর্ব লন্ডনের বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের প্রতীক। উল্লেখ্য, এই বছরের মধ্যেই সবগুলো ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হবে।
বিগস জানান, কেবল শাহাবউদ্দিন হাউজের নির্মাণকাজ শুরু হতে কিছু সময় লাগবে। বিগস বিবিসিকে বলেছেন, পূর্ব লন্ডনের ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের গৌরবময় ইতিহাসের সাথে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
বিগস আরো জানান, ওয়াপিং এলাকায় হচ্ছে আলতাব আলী হাউজ, মাইলএন্ডে তাসাদ্দুক আহমদ হাউজ, শাহাবুদ্দিন আহমদ বেলাল হাউজ হবে স্টেপনি গ্রিনে, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম হাউজ হচ্ছে স্পিটালফিল্ড অ্যান্ড বাংলাটাউনে আর সুফিয়া কামাল হাউজ হচ্ছে বেথনাল গ্রিনে।
বিগস জানান, নাম নির্বাচনের ক্ষেত্রে কমিউনিটি এবং রাষ্ট্রে তাদের অবদানের কথা স্মরণ রাখা হয়েছে। আশা করা যায়, এ উদ্যোগ তরুণ সমাজকে অনুপ্রাণিত করবে।
পরিচিতি
তাসাদ্দুক আহমেদ: সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মী। তিনি ১৯৮৯ সালে 'এমবিই' খেতাব এবং ২০০০ সালে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের 'ফ্রিডম অব দ্য বরো' সম্মান পান। তিনি 'দেশের ডাক' ও 'ইস্টার্ন নিউজ' নামে দুটি সংবাদপত্র প্রকাশ করেন। বলা হয়ে থাকে, তার দেওয়া টাইপরাইটার দিয়েই যুক্তরাজ্যের পত্রিকা 'সাপ্তাহিক জনমত' ১৯৬৯ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। তিনি ২০০১ সালে মারা যান।
শাহাবুদ্দিন আহমদ বেলাল: বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় শাহাবুদ্দিন বেলাল আশি ও নব্বইয়ের দশকে কমিউনিটির সেবায় ভূমিকা রাখেন। স্টেপনি গ্রিন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিসেবে তার খ্যাতি রয়েছে। তিনি 'সাপ্তাহিক জনমত'সহ বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালেখি করতেন। ২০১৮ সালে তিনি মারা যান।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম: টাওয়ার হ্যামলেটসের শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন এবং মন্টিফিউরি সেন্টারের পরিচালক ছিলেন। আশি ও নব্বইয়ের দশকে সৈয়দ আশরাফ বাঙালি কমিউনিটির নানা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরে তিনি বাংলাদেশের সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রী হন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, মারা যান ২০১৯ সালে।
সুফিয়া কামাল: বেগম সুফিয়া কামাল বাংলাদেশের একজন কবি ও রাজনৈতিক কর্মী। ১৯৯৯ সালে তিনি মারা যান।
আলতাব আলী: ১৯৭৮ সালে লন্ডনে এক হামলায় নিহত হন আলতাব আলী। বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে পরিণত হন তিনি। তিনি যে পার্কে হামলায় নিহত হন সে পার্কটির নামকরণ করা হয় 'আলতাব আলী পার্ক', সেখানে নির্মিত হয় যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের প্রথম শহীদ মিনার।