কক্সবাজারে বিমান বাহিনীর ঘাঁটিতে সংঘর্ষে যুবক নিহতের ঘটনায় মামলা

কক্সবাজারে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষে শিহাব কবির নাহিদ (৩০) নিহতের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (৪ মার্চ) কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইলিয়াস খান বলেছেন, 'এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদি হয়ে মামলা করেছেন।'
মামলার এজাহারে আসামি হিসেবে কারো নাম উল্লেখ না থাকলেও নাহিদ নিহতের জন্য বিমান বাহিনীর সদস্যদের দায়ী করা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বেলা ১২টায় স্থানীয় মহিউদ্দিন নামের এক যুবক বাদিকে জানান বিমান বাহিনীর এক সদস্যের গুলিতে তার একমাত্র ছেলে শিহাব কবির নাহিদ মারা গেছেন। তার মরদেহ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। তিনি হাসপাতালে গিয়ে মরদেহটি দেখেন এবং ময়নাতদন্ত শেষে ছেলের দাফন সম্পন্ন করেছেন।
বিমান বাহিনীর সদস্য বা অন্য কারো সঙ্গে শিহাব কবির নাহিদের কোনো ধরনের বিরোধ নেই উল্লেখ করে এজাহারে আরও বলা হয়েছে, ২৪ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় স্থানীয় জাহেদুল ইসলাম নামের এক যুবককে বিমান বাহিনীর সদস্যরা ঘাটিতে নিয়ে গিয়ে নির্যাতনের খবরে উত্তেজনা তৈরি হয় এবং জাহেদুলকে আনতে গিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সংর্ঘষ হয়। এক পর্যায়ে বিমান বাহিনীর সদস্য এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণ করে। সেসময় রাস্তায় কি হচ্ছে দেখতে বের হন নাহিদ। সমিতি পাড়ার নাঈমের বাসার সামনে গেলে নাহিদের মাথায় গুলি লাগে।এসময় আহত নাহিদকে বিমান বাহিনীর সদস্যরা তুলে ঘাঁটিতে নিয়ে যায়,সেখানে দীর্ঘক্ষণ রক্তরক্ষণে মারা যান নাহিদ।
এদিকে পুলিশ ও স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারে বিমান বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষে একজন নিহত ও অন্তত ছয়জন আহত হন। আহতদের মধ্যে বিমান বাহিনীর অন্তত তিনজন সদস্যও রয়েছেন।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)-এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, 'কক্সবাজারে অবস্থিত বিমান বাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজার সংলগ্ন সমিতিপাড়ার কিছু দুর্বৃত্ত সোমবার বিমান বাহিনী ঘাঁটির ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। বিয়াম স্কুলের পাশে বিমান বাহিনীর চেকপোস্ট হতে একজন স্থানীয় লোকের মোটর সাইকেলের কাগজপত্র না থাকায় বিমান বাহিনীর প্রভোস্ট জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঘাঁটির অভ্যন্তরে নিয়ে যান। এসময় সমিতি পাড়ার আনুমানিক দুইশ'রও বেশি স্থানীয় মানুষ বিমান বাহিনীর ঘাঁটির দিকে অগ্রসর হলে বিমান বাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে বাধা দেয়।'
আরও জানায়, 'পরবর্তীতে স্থানীয় লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে বিমান বাহিনীর চেকপোস্ট এলাকায় বিমান বাহিনীর সদস্য ও সমিতি পাড়ার কতিপয় দুষ্কৃতকারী লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এসময় দুর্বৃত্তদের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে কয়েকজন আহত হন, যার মধ্যে বিমান বাহিনীর ৪ জন সদস্য (১ জন অফিসার ও ৩ জন বিমানসেনা) আঘাতপ্রাপ্ত হন এবং শিহাব কবির নাহিদ নামের এক যুবককে গুরুতর আহত অবস্থায় বিমান বাহিনীর গাড়িতে করে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যুবরণ করেন।'
আইএসপিআর জানায়,'স্থানীয় জনসাধারণের ওপর কোনো প্রকার তাজা গুলি ছুড়েনি বিমান বাহিনীর সদস্যরা। আহত বিমান বাহিনীর সদস্যরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।'
অন্যদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, কক্সবাজার বিমানবন্দর ও বিমান বাহিনী ঘাঁটি সম্প্রসারণের জন্য কক্সবাজার পৌরসভার আওতাধীন সমিতি পাড়ার বাসিন্দাদের জমি অধিগ্রহণ ও স্থানান্তরের জন্য বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রচেষ্টা নিয়ে বিরোধের জেরে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
স্থানীয়রা আরও জানান, নিরাপত্তা বাহিনী গুলি ছোড়ায় এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।