এক প্রতিষ্ঠানের অধীনে যাচ্ছে এনআইডি, জন্মনিবন্ধনসহ সব নিবন্ধন সেবা

সরকার জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন ও জন্মনিবন্ধনসহ নাগরিকদের সকল নিবন্ধন সেবা একটি পৃথক কমিশনের অধীনে নিতে যাচ্ছে। এজন্য 'সিভিল রেজিস্ট্রেশন কমিশন' নামক একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করা হবে।
বর্তমানে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে পরিচালিত হচ্ছে, আর জন্মনিবন্ধন সেবা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতায় রয়েছে।
নতুন নিবন্ধন ব্যবস্থা চালু করতে সরকার 'সিভিল রেজিস্ট্রেশন (কমিশন) অধ্যাদেশ, ২০২৫' নামে একটি খসড়া আইন প্রস্তুত করেছে। এই খসড়া পর্যালোচনার জন্য গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির প্রথম সভা ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (আইন অনুবিভাগ) এই সভার সভাপতিত্ব করেন।
খসড়া আইনে কমিশনের বিভিন্ন দায়িত্ব নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নাগরিকের জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে, বিয়ে বিচ্ছেদ ও দত্তক নিবন্ধন। পাশাপাশি মৃত্যুর কারণ নির্ণয়, স্থানান্তর, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার তথ্য অন্তর্ভুক্ত করে বিদ্যমান সিভিল রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থার সার্বিক সমন্বয় ও উন্নয়ন।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা, পরিচয়পত্র প্রস্তুত, বিতরণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও এই কমিশনের অধীনে থাকবে। ইউনিক আইডি, সিআরভিএস এন্টারপ্রাইজ আর্কিটেকচার, ইন্টারঅপারেবিলিটি স্ট্যান্ডার্ড এবং সিটিজেন কোর ডাটা স্ট্রাকচারের ভিত্তিতে সমন্বিত সেবা ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন করা হবে।
এছাড়া, সিভিল রেজিস্ট্রেশন তথ্য-উপাত্তের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী সহজ এবং দ্রুততম উপায়ে সিভিল রেজিস্ট্রেশন তথ্য সরবরাহ এবং জনসচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার কথাও খসড়া আইনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে, 'জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ, ২০২৫'-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন।
এই চিঠিতে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের আলোচনার বিষয় উল্লেখ করা হয়। বৈঠকে বলা হয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উদ্যোগে 'জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ, ২০২৫'-এর খসড়া প্রণয়ন সময়োপযোগী। তবে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের আওতায় না রেখে স্বাধীন, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালনা করা উচিত।
বৈঠকে আরও বলা হয়, প্রত্যেক নাগরিকের জন্মনিবন্ধন সনদ, তার ভিত্তিতে এনআইডি এবং এনআইডির ভিত্তিতে পাসপোর্ট প্রদানের প্রক্রিয়ায় জটিলতা দূর করতে হবে। এজন্য লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ খসড়া অধ্যাদেশ পরিমার্জন করে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করতে পারে।
বৈঠকের আলোচনার পর প্রধান উপদেষ্টা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশ দেন। সেই সিদ্ধান্তের আলোকে সরকার বর্তমানে পদক্ষেপ নিচ্ছে।
২০০৭ সাল থেকে নির্বাচন কমিশন এনআইডি সেবা প্রদান করে আসছে। এর আগে, ২০২৩ সালে সরকার এনআইডি কার্যক্রম নির্বাচন কমিশন থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তবে সরকার পরিবর্তনের কারণে সেই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়নি।
এনআইডি সেবা নির্বাচন কমিশনে থাকা উচিত: সিইসি
এদিকে, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন।
মঙ্গলবার (৪ মার্চ) আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, "এনআইডি সেবা নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকা উচিত। সংস্কার কমিশনের রিপোর্টের পর থেকেই বলছি। ভোটার নিবন্ধনের বাইপ্রোডাক্ট এটি, তাই এটি নির্বাচন কমিশনের অধীনেই থাকা দরকার।"
তিনি আরও বলেন, "বাস্তব দিক বিবেচনা করেই সরকার সিদ্ধান্ত নেবে বলে আমি মনে করি। ইতোমধ্যে প্রাথমিক সভায় প্রতিনিধির মাধ্যমে আমাদের মতামত জানানো হয়েছে। তবে সভার কার্যপত্র এখনো হাতে আসেনি। সেটি পাওয়ার পর সরকার কী ভাবছে, তা বোঝা যাবে। এ বিষয়ে আমরা সরকারকে লিখিত মতামতও জানাব। আমরা বিশ্বাস করি, সরকারের পক্ষ থেকে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত আসবে।"
আইনের খসড়া করার আগে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করা প্রয়োজন ছিল কি না, জানতে চাইলে সিইসি বলেন, "দেখুন, এনআইডি কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, এমনকি আইনও করা হয়েছিল, কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। আমরা সরকারকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি যে, এটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতায় যাওয়া ঠিক হবে না।"
তিনি বলেন, "এটি একটি বড় সিদ্ধান্ত। যেখানে মাঠপর্যায়ে ভোটার নিবন্ধন চলছে, হাজার হাজার লোক কাজ করছে, সামনে জাতীয় নির্বাচন আছে। এর মধ্যে তড়িঘড়ি করে কোনো সিদ্ধান্ত হবে বলে আমি মনে করি না।"