ছোট ইলিশ রক্ষায় মেঘনায় সব ধরনের মাছ শিকারে ৬০ দিনের নিষেধাজ্ঞা

ছোট ইলিশ রক্ষায় লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীসহ দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের কয়েকটি নদীতে সব ধরনের মাছ শিকারে ৬০ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আগামী ১ মার্চ মধ্যরাত থেকে ৩০ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত নদীতে ইলিশসহ যে কোন মাছ শিকার থেকে বিরত থাকতে হবে। একই সাথে ইলিশ মাছ ক্রয়, বিক্রয়, পরিবহণ এবং মজুদ নিষিদ্ধ থাকবে।
লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য অফিস জানায়, লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের মতলবের উত্তর উপজেলার ষাটনল ইউনিয়ন পর্যন্ত মেঘনা নদীর ১০০ কিলোমিটার এলাকাকে ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করেছে মৎস্য অধিদপ্তর।
মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ১০ ইঞ্চির ছোট ইলিশকে জাটকা ইলিশ বলা হয়। ১০ ইঞ্চি আকারের একটি ইলিশের বয়স ৮-৯ মাস হয়ে থাকে। মার্চ থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত অভয়াশ্রমে জাটকা ইলিশের বিচরণ থাকে। জাটকা ইলিশের আকার বৃদ্ধির লক্ষ্যেই অভয়াশ্রমে জেলেদেরকে মাছ শিকার থেকে বিরত রাখা হয়।
আইন অমান্যকারী জেলেদের জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল এবং জরিমানার বিধান রয়েছে। এছাড়াও ডিম ছাড়ার জন্য অক্টোবর মাসে ২২ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ থাকে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, 'জেলেরা যাতে মাছ শিকার করতে না পারে, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে ট্রাস্কফোর্স গঠন করা হয়। মৎস্য অধিদপ্তর, জেলা-উপজেলা প্রশাসন, নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ড এবং থানা পুলিশসহ সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নদী, মাছঘাট, আড়ত, হাটবাজার সহ বিভিন্নস্থানে অভিযান পরিচালনা করবে।'
নদীতে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা থাকার সময় জেলেদের ভিজিএফ-এর আওতায় প্রতি মাসে ৪০ কেজি হারে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়।
লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী, লক্ষ্মীপুর জেলায় তালিকাভুক্ত জেলের সংখ্যা ৩৮ হাজার ৮৭৫ জন। তাদের মধ্যে ২৮ হাজার ৩৪৪ জন জেলেসহ তাদের পরিবারকে ৪০ কেজি হারে দুই দফা ৮০ কেজি চাল সহায়তা দেওয়া হবে।
২০০০ সালে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) ১১টি ইলিশ উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশ বাদে ১০ দেশে অতিরিক্ত মাছ ধরা এবং দূষণের জন্য ইলিশ মাছ ধরার হার কমছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
এরপর ২০০২ সালে বাংলাদেশে ইলিশ রক্ষার জন্য মা মাছ ও জাটকা ধরায় নিষেধাজ্ঞা ও প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ২০০৩-২০০৪ সাল থেকেই জাটকা রক্ষার কর্মসূচি শুরু করা হয়, তখন থেকেই আস্তে আস্তে ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে বলে মনে করেন গবেষকেরা।
এর ফলে অন্যান্য দেশে ইলিশ কমলেও বাংলাদেশে তা প্রতিবছর ৮ থেকে ১০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
ওয়ার্ল্ড ফিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বের ৮৬ শতাংশ ইলিশ এখন বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়। ইলিশ উৎপাদনে ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম।