খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনের বাঙালি মনীষীদের নাম পরিবর্তনে ব্যাপক সমালোচনা, যা বললেন ভিসি

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ভবনের নাম পরিবর্তনে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। এসব ভবনের নাম জগদ্বিখ্যাত বাঙালি মনীষীদের নামে রাখা হয়েছিল। অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদও এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
যে নামগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছেন প্রখ্যাত রসায়নবিদ ও শিক্ষক আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, পদার্থবিজ্ঞানী ও শিক্ষক সত্যেন্দ্রনাথ বসু, কবি জীবনানন্দ দাশ এবং পদার্থবিদ ও জীববিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু। এসব মনীষীর নাম সরানোর ঘটনায় বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩০তম সিন্ডিকেট সভায় ওই নামগুলো পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে ১২ ফেব্রুয়ারি এ সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি করা হয়। তবে গত মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ঢাকায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের মন্তব্যের পর বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।
শিক্ষা উপদেষ্টা তার বক্তব্যে বলেন, 'আমরা ছোটবেলা থেকে জগদীশ বসুর গল্প শুনেছি। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে জগদীশচন্দ্র বসু, তার মতো বিজ্ঞানীদের নামে করা ভবন-স্থাপনা ছিল, সেগুলোর নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রের নামে স্থাপনা ছিল। আরও কয়েকজনের নামে করা স্থাপনার নাম বদলানো হয়েছে। এটি আমাকে মর্মাহত করেছে।'
তিনি বলেন, 'জগদীশচন্দ্র বসুর নামে করা ভবনের নাম পাল্টানো হবে, এটা কল্পনার বাইরে। আমি আশা করব, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষার্থীরা মিলে এর প্রতিকার করবে।'
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২২ অক্টোবর তৎকালীন উপাচার্য ফায়েক উজ জামানের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের এক সভায় ভবনগুলোর নাম পরিবর্তন বিষয়ে আলোচনা হয়। তখনকার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ওই সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯টি ভবন ও স্থাপনার নতুন নামকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তবে গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর ২৮ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার আদায়ে ৩৭ দফা দাবি উত্থাপন করে। এসব দাবির মধ্যে একটি ছিল ক্যাম্পাসের সকল স্থাপনা থেকে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নাম পরিবর্তন করা।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ৪ ডিসেম্বর 'হল ও বিভিন্ন ভবনের নতুন নামকরণ প্রস্তাবনা কমিটি' গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ৮ ডিসেম্বর নতুন নাম প্রস্তাবের জন্য শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
তবে ওই গণবিজ্ঞপ্তিতে শুধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা হল, জয় বাংলা ভবন, সুলতানা কামাল জিমনেশিয়াম, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ প্রশাসনিক ভবন এবং শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম ভবনের নাম পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছিল।
কিন্তু সিন্ডিকেটের সভায় অন্যান্য ভবনের নামও পরিবর্তন করা হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এ টি এম জহিরউদ্দিন বলেন, 'কমিটির যতটুকু কাজ ছিল, সেটুকু করা হয়েছে। বাকিগুলোর নাম পরিবর্তনের ব্যাপারে আমি জানি না।'
সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তে যে নামগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে, তার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসনিক ভবনের নাম পরিবর্তন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য গোলাম রহমানের নামে করা হয়।
এছাড়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিন হল রাখা হয়। পাশাপাশি বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নাম বিজয় ২৪ হল, সত্যেন্দ্রনাথ বসু একাডেমিক ভবনের নাম একাডেমিক ভবন ১, জগদীশচন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের নাম একাডেমিক ভবন ২, কবি জীবনানন্দ দাশ একাডেমিক ভবনের নাম একাডেমিক ভবন ৩, জয় বাংলা ভবনের নাম একাডেমিক ভবন ৪ করা হয়।
এ ছাড়া শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ প্রশাসনিক ভবনের নাম প্রশাসনিক ভবন, শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরী চিকিৎসাকেন্দ্রের নাম খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার, সুলতানা কামাল জিমনেসিয়ামের নাম খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় জিমনেসিয়াম এবং আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় কেন্দ্রীয় গবেষণাগারের নাম খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গবেষণাগার করা হয়।
এর পাশাপাশি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নামে শিক্ষকদের চারটি কোয়ার্টারের নামও পরিবর্তন করেছে কর্তৃপক্ষ।
এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. রেজাউল করিম বলেন, 'এ বিষয়টা নিয়ে আমরা ছাত্র ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলব। এরপর যেটা রাখা যায়, সেটা রাখব, এই আর কি। এটা বড় কিছু না। বিভিন্ন দিক থেকে কথা-বার্তা আসছে, এটা নিয়ে আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি। এটা নিয়ে বসব, আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার চেষ্টা করব আর কি।'