মৃত স্বামীর ঋণের দায়ে স্ত্রী কারাগারে: ফরিদপুর আদালতের দুই বিচারককে হাইকোর্টে তলব

মৃত স্বামীর ঋণের দায়ে স্ত্রীকে কারাগারে পাঠানোর এবং নাবালক তিন শিশুকে আসামি করে মামলার বিচারকাজ পরিচালনা বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে ফরিদপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) এমএ সাঈদ এবং অর্থঋণ আদালতের বিচারক একেএম রফিকুল হাসানকে সশরীরে তলব করেছেন হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে, এই মামলার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে ব্র্যাক ব্যাংক ফরিদপুরের বোয়ালমারী শাখার ব্যবস্থাপককেও তলব করা হয়েছে। আগামী ৬ মার্চ তাদের সশরীরে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি কাজী ওয়ালিউল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। তিন শিশু সন্তানের মা পপি খাতুনকে জামিন দিয়ে আদালত এ আদেশ দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জামিউল হক ফয়সাল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
হাইকোর্ট সূত্রে জানা যায়, ফরিদপুরের বোয়ালমারী পৌর সদরের পোল্ট্রি মুরগি ব্যবসায়ী আমিন শেখ-পপি খাতুন দম্পতির নাবালক তিন শিশু আইরিন (১০), আহমাদুল্লাহ (৫) আর জান্নাতুল নাঈমা (৪)। তাদের বাবা ঋণের দায়ে ব্র্যাক ব্যাংকের দায়ের করা অর্থঋণ মামলার আসামি ছিলেন।
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে মারা যান আমিন শেখ। স্বামীর মৃত্যুর দুই বছর পর ওই মামলায় পপি খাতুনের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। মামলায় তিনি আড়াই মাস ধরে জেলহাজতে আছেন।
আমিন শেখ ২০২২ সালের ২৫ অক্টোবর ৩০ লাখ টাকা ঋণ নেন। তিনি জীবিত থাকা অবস্থায় কিস্তিতে সুদে-আসলে ছয় লাখ ২১ হাজার ৩৭৮ টাকা ঋণ পরিশোধ করেন। তার মৃত্যুর পর ২০২৩ সালের ২৫ অক্টোবর ফরিদপুর জেলা জজ ১ম অর্থঋণ আদালতে মৃত আমিন শেখের স্ত্রী পপি খাতুন, তিন নাবালক শিশুসন্তানসহ ছয়জনের নামে মামলা করে ব্যাংক।
আড়াইমাস আগে এই মামলায় পপি খাতুন জামিন নিতে আদালতে গেলে কারাগারে পাঠান ফরিদপুরের আদালত।
আইনজীবীরা জানান, এই মামলায় অসহায় এতিম তিনটি শিশু, যারা এখনও ঠিকমতো টাকা, ঋণ, লেনদেনের অর্থই বোঝে না, বয়স লুকিয়ে তাদেরও করা হয়েছে আসামি। এরা ঋণের জামিনদার হয়েছিল, এরা ঋণের কি বোঝে। খেলাপী ঋণের ঘটনায় স্ত্রী ও তিন নাবালক সন্তানকে আসামী করার বেধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে পপি খাতুনের পক্ষে রিট আবেদন করা হয়।
হাইকোর্ট সূত্রে জানা যায়, পপি খাতুনকে জামিন দেওয়ার পাশাপাশি তিন নাবালক শিশুকে আসামি করা এবং স্ত্রীকে জেলে পাঠানো কেন অবৈধ হবে না, সে বিষয়ে জানতে চেয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রতি রুল জারি করেছেন আদালত।
এ বিষয়ে ফরিদপুর আদালতে পপি খাতুনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মেহেদী হাসান সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেন, 'ঋণ গ্রহীতা আমিন শেখের অবুঝ শিশুদের এ মামলায় ওয়ারিশ সূত্রে আসামি করা ঠিক হয়নি। তারা ওয়ারিশ হলেও প্রাপ্ত বয়সের আগে তারা বাবার সম্পত্তির অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। শিশুদের বিরুদ্ধে মামলা করে নিঃসন্দেহে তারা প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। আদালতকে ভুল তথ্য দিয়েছেন। এটা নিঃসন্দেহে আদালত অবমাননার শামিল।'
ব্র্যাক ব্যাংক বোয়ালমারী শাখার ব্যবস্থাপক রাসেল আহমেদ সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেন, 'ঋণগ্রহীতা মৃত আমিন শেখ ত্রিশ লাখ টাকা ঋণ নেন। ব্যাংকের শর্ত ও নিয়মের মধ্যে থেকেই চলমান ব্যবসার অনুকূলে ঋণ দেওয়া হয়েছে। শর্তাবলি মেনেই ঋণের টাকা অনাদায়ে জামিনদার ও ওয়ারিশগণের নামে মামলা হয়েছে। এতিম নাবালক শিশুদের নামে মামলার বিষয়ে আমাদের আইনজীবী ভালো বলতে পারবেন।'