Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

সাড়ে চারশ বছরে পহেলা বৈশাখ: গরম ভাত থেকে পান্তা ভাত 

সাড়ে চারশ বছরে পহেলা বৈশাখ: গরম ভাত থেকে পান্তা ভাত 

ফিচার

সালেহ শফিক
14 April, 2025, 08:30 am
Last modified: 14 April, 2025, 09:27 am

Related News

  • বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় সারাদেশে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপিত
  • পয়লা বৈশাখের সন্ধ্যায় ঢাকার আকাশে ‘ড্রোন শো’
  • ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করলেন সেনাপ্রধান, জানালেন নববর্ষের শুভেচ্ছা
  • নববর্ষে জাতির আকাঙ্ক্ষা মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া: রিজভী
  • রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে গাজায় নিহতদের স্মরণ

সাড়ে চারশ বছরে পহেলা বৈশাখ: গরম ভাত থেকে পান্তা ভাত 

সালেহ শফিক
14 April, 2025, 08:30 am
Last modified: 14 April, 2025, 09:27 am

বাদশাহ আকবর ডেকে পাঠালেন জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফতেহউল্লাহ শিরাজীকে। আদেশ করলেন নতুন একটি বর্ষপঞ্জি (ক্যালেন্ডার ) তৈরি করতে। কারণ প্রচলিত হিজরি চান্দ্রবর্ষ অনুযায়ী কৃষদের খাজনা দেওয়া কঠিন হয়ে উঠেছে। শিরাজী হিসাব করতে বসলেন। শেষে চান্দ্র ও সৌরবর্ষ দুয়ের সমন্বয়ে নতুন বর্ষপঞ্জি প্রণয়ন করেন, যার প্রচলন ঘটে ১৫৮৪ সালে। তবে গণনা শুরু হয় ১৫৫৬ সাল থেকে যেটি আকবরের সিংহাসনে আরোহণের বছর। সে বছর মহররম (হিজরি প্রথম মাস) ছিল বৈশাখ মাসে। তাই বৈশাখকেই প্রথম মাস ধরা হয় এবং চৈত্র গিয়ে দাঁড়ায় বছরের শেষ মাসে। এই নতুন বর্ষপঞ্জি প্রথম পরিচিতি পায় ফসলি সন হিসাবে, তারপর হয় বঙ্গাব্দ। 

নতুন পঞ্জি অনুসারে চৈত্র মাসের শেষ দিনে বর্ষবিদায় আর বৈশাখের প্রথম দিনে বর্ষশুরু। বিদায় দিনে কৃষকরা খাজনা দেয় আর শুরুর দিনে ভূস্বামীরা তাদের মিষ্টিমুখ করায়। শুরুর দিনে মেলাও বসে। মেলায় বাসন-কোসন, মুড়ি-মুড়কি, খেলনা-দোলনা অনেক কিছুই পাওয়া যায়। সারা বছর এই দিনটির অপেক্ষায় থাকে কৃষক, কিষাণি ও তাদের ছেলেমেয়েরা। ঘুড়ি আর পায়রা ওড়ানোর খেলাও হয়। 

অশুভের বিতাড়ন, শুভের আগমন 

একসময় বর্ষ বিদায়ের মানে দাঁড়াল অশুভের বিতাড়ন, আর বর্ষ শুরু মানে শুভের আগমন প্রত্যাশা। কালে কালে আরো নতুন নতুন আচার-প্রথা যুক্ত হয় বর্ষশুরুর দিনে। এদিনে ভালো খাওয়া, ভালো থাকা ও ভালো পরতে পারাকে মঙ্গলজনক মনে করা হয়। নববর্ষে তাই ঘর ও আঙিনা ঝেড়েমুছে সাফ করেন কিষাণি, ভালো খাবার তৈরি করেন, নতুন পোশাক পরান ছেলেমেয়েদের। সেকালে ভালো খাবার বলতে গরম ভাত বোঝাত। কারণ পান্তা খেয়েই তাদের বছরের বেশিরভাগ দিন কাটত। তাই বর্ষশুরুর দিনে গরম ভাতই যে ভালো খাবার! হাল আমলে পান্তা খাওয়ার যে চল, তার কার্যকরণ খুঁজতে গলদঘর্ম হচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এটাকে নগর জীবনের নতুন ফ্যাশন হিসাবেই দেখা হচ্ছে।

ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ মোটিফ। ছবি: টিবিএস

অতীত দিনের আরেকটি প্রথারও উল্লেখ পাওয়া যায়, গৃহিণী বর্ষ বিদায়ের দিন একটি পাত্রে আতপ চাল ভিজিয়ে রাখতেন, শুরুর দিনে একটি কচি আমের ডাল পাত্রে রাখা পানিতে চুবিয়ে ছিটিয়ে দিতেন ঘরের লোকদের গায়ে, সেসঙ্গে আতপ চাল খেতেও দিতেন। বাড়ির সবার শুভকামনায় এর আয়োজন করা হতো। ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় এদিন বোনেরা ভাইছাতু অনুষ্ঠানও পালন করে। 

নতুন খাতা হালখাতা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. মীজানুর রহমানের এক লেখায় পাওয়া যাচ্ছে, আগ্রার অনুকরণে বাংলার সুবেদার ইসলাম খাঁ চিশতীও তার বাসভবনের সামনে প্রজাদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ ও বৈশাখী উৎসব পালন করতেন। এই উপলক্ষে খাজনা আদায় ও হিসাবনিকাশের পাশাপাশি গান-বাজনা, গরু-মোষের লড়াই, কাবাডি খেলা হতো। 

ছবি: টিবিএস

বাংলাদেশের জাতীয় জ্ঞানকোষ বাংলাপিডিয়ায় বলা হচ্ছে, নববর্ষ বাঙালির সর্বজনীন লোকউৎসব। এদিন আনন্দঘন পরিবেশে বরণ করে নেওয়া হয় নতুন বছরকে। কল্যাণ ও নতুন জীবনের প্রতীক হলো নববর্ষ। আরো বলা হচ্ছে, অতীতে বাংলা নববর্ষের মূল উৎসব ছিল হালখাতা। এটি পুরেপুরিই একটি অর্থনৈতিক ব্যাপার। নববর্ষের প্রারম্ভে ব্যবসায়ীরা হিসাব নিকাশ সম্পন্ন করে পুরানো খাতা বন্ধ করতেন এবং হিসাবের নতুন খাতা খুলতেন যাকে বলা হয় হালখাতা। এ উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা নতুন-পুরাতন খদ্দেরদের আমন্ত্রণ জানিয়ে মিষ্টি বিতরণ করতেন। দোকানগুলো সাজানো হতো লাল-নীল-বেগুনি কাগজ দিয়ে। ধুপধুনা জ্বালানো হতো। হাসি-ঠাট্রা হতো দোকানি আর খদ্দেরদের মধ্যে। মধ্যযুগে চালু হওয়া এ অনুষ্ঠান ব্যাপকভাবে না হলেও পালিত হচ্ছে আজো ।

লাইলী-মজনু, নাগরদোলা 

নববর্ষকে বস্তুত উৎসবমুখর করে তোলে বৈশাখী মেলা। মেলায় বিনোদনের ব্যবস্থাও থাকে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকগায়ক ও নর্তকরা উপস্থিত হন মেলায়। তারা যাত্রা, পালাগান, কবিগান, জারিগান, গাজীর গানসহ বিভিন্ন লোকসঙ্গীত পরিবেশন করেন। লাইলী- মজনু, ইউসুফ-জুলেখা, রাধা-কৃষ্ন আখ্যানও উপস্থাপিত হয়। নাটক, পুতুলনাচ, নাগরদোলা, সার্কাস থাকে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে।

পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে চারুকলার আনন্দ শোভাযাত্রার প্রস্তুতি। ছবি: টিবিএস

আকবরের পর থেকে পুরো মুঘল আমলজুড়ে পহেলা বৈশাখে নববর্ষ উদযাপনের চল বহাল ছিল। ব্রিটিশ আসার পর তারা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের প্রচলন ঘটায় ও ইংরেজী নববর্ষ ঘটা করে আয়োজন করতে থাকে। এরই প্রতিক্রিয়ায় ভারতবর্ষের জাতিগোষ্ঠীগুলো নিজেদের বর্ষ উদযাপন শুরু করে। তখন এটি হয়ে উঠেছিল সাংস্কৃতিক প্রতিবাদের হাতিয়ার আর দিনে দিনে তাতে যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা, এখনকার বাংলায় নববর্ষ উদযাপনের যে সাড়ম্বর আয়োজন তার শুরু ইংরেজ আমলে। 

পহেলা বৈশাখ ও জাতীয়তাবাদ

জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে প্রথম নববর্ষ উদযাপিত হয় ১৮৬৪ সালে। ঠাকুরবাড়ির মেয়েরা এদিন লালপেড়ে সাদাশাড়ি পরেছিল, ব্লাউজও ছিল বিশেষ নকশার। ১৩০৯ বঙ্গাব্দে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম নববর্ষ উৎসবের আয়োজন করেন নৃত্য গীতের মাধ্যমে। তখন বৈশাখবরণ নিয়ে কয়েকটি গান তিনি রচনা করেন যার একটি 'এসো হে বৈশাখ এসো এসো'। একসময় গানটি পহেলা বৈশাখের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যায়। ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে বৈশাখ মাসের প্রথম দিনে নববর্ষ উদযাপিত হয়; তবে তা ভিন্ন ভিন্ন নামে ,যেমন কেরালায় বলা হয় ভিষু, আসামে বিহু, তামিলনাড়ুতে পুথান্দু ইত্যাদি। 

ছবি: টিবিএস

১৯১৭ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে পহেলা বৈশাখ পালিত হয় ব্রিটিশ রাজের বিজয় কামনা করে। ১৯৩৮ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালেও পহেলা বৈশাখ একই উদ্দেশ্যে পালন করা হয়। ধারণা করা যায়, সংখ্যাগরিষ্ঠের অংশগ্রহণ এতে ছিল না। শাসকগোষ্ঠীকে খুশি করতে চেয়ে সুবিধাবাদী কেউ কেউ এর আয়োজন করেছিল। তারপর দেশভাগ হলো, আমরা পাকিস্তানের ভাগে পড়লাম। 

ছুটি ঘোষণার দাবি

১৯৫১ সালে নবগঠিত পাকিস্তানে সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে গঠিত লেখক-শিল্পী মজলিস পহেলা বৈশাখ উদযাপন করে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন সংগঠনে যা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পাকিস্তান আমলে পহেলা বৈশাখ আক্ষরিক অর্থেই হয়ে উঠেছিল সাংস্কৃতিক হাতিয়ার। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকশ্রেণী বলতে শুরু করে, এটা পাকিস্তান আদর্শের পরিপন্থী। বাঙালি সংস্কৃতির ওপর এটি ছিল চরম আঘাত। বাঙালি তা সহ্য করেনি, রুখে দাঁড়িয়েছে। সব শ্রেণি-পেশা-ধর্মের মানুষ দিনটিকে জাতীয় ছুটির দিন ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। শাসকগোষ্ঠী তা অগ্রাহ্য করায় বাঙালি ক্ষুব্ধ হয়েছে। মুখর হয়েছে প্রতিবাদে । 'এভাবেই পূর্ববাংলায় বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং বাঙালি জাতিসত্তা গঠনের প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায় বাংলা নববর্ষ এবং তার উদযাপনের আয়োজন', লিখেছেন প্রয়াত লোকসংস্কৃতি গবেষক শামসুজ্জামান খান। 

ছবি: টিবিএস

১৯৫৪ সালের পূর্ববাংলার সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম লীগ সরকারকে পরাজিত করে যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠিত হলে মুখমন্ত্রী ও বাঙালির জনপ্রিয় নেতা শেরে বাংলা ফজলুল হকের সরকার বাংলা নববর্ষে ছুটি ঘোষণা করে এবং দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানায়। সেটি ছিল বাঙালির এক তাৎপর্যপূর্ণ বিজয়ের দিন। কিন্তু সে বিজয় স্থায়ী হয়নি। যুক্তফ্রন্ট সরকার স্থগিত এবং সামরিক শাসন জারি করে পাকিস্তান সরকার তা রুখে দিয়েছিল। 

আন্দোলনের প্রতীক 

সরকারিভাবে না হলেও বেসরকারিভাবে প্রবল আগ্রহ ও উদ্দীপনায় পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হতে থাকে সামরিক শাসন জারি হওয়ার পর থেকে। এর মধ্যে সুসংগঠিত ও সুপরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট। রবীন্দ্রসঙ্গীতের ওপর নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে রমনা বটমূলে পহেলা বৈশাখের আয়োজন শুরু করে রবীন্দ্র সংগীত গেয়ে। এটাকে ওই সময়ে বাঙালির আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। সেই থেকে এখনো পর্যন্ত ছায়ানটের পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান শুরু হয় রবীন্দ্রনাথের গান দিয়েই। 

বৈশাখী মেলা প্রসঙ্গে শামসুজ্জামান খান লিখেছেন, হালখাতার পরে বাংলা নববর্ষের একটি প্রধান অনুষ্ঠান হলো বৈশাখী মেলা। এসব মেলার অনেকগুলোই বেশ পুরানো। খুব প্রাচীন ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার নেকমরদের মেলা এবং চট্টগ্রামের মহামুনির বুদ্ধপূর্নিমা মেলা। মেলাগুলোর আগের জৌলুস নেই তবে ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। আগে মেলাগুলোর গুরুত্ব ছিল কারণ দেশে বিস্তৃত যোগাযোগ ও যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। এসব আঞ্চলিক মেলা থেকেই মানুষ সারা বছরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে রাখত। মেলাগুলো মিলনমেলায়ও পরিণত হয়েছিল। সংবাদ আদান-প্রদান এবং মতবিনিময়ের মাধ্যমও ছিল এসব মেলা। 

ছবি: টিবিএস

এখন পুরানো মেলাগুলোর মধ্যে জব্বারের বলী খেলা উপলক্ষে চট্টগ্রামে যে বৈশাখী মেলার আয়োজন হয় তার শোভা বরং আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। বাঙালি যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্রিটিশ বিরোধী মনোভাব গড়ে তোলা এবং শক্তিমত্তা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রামের বদরপাতি এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বার সওদাগর বলী কুস্তি প্রতিযোগিতার প্রবর্তন করেন ১৯০৭ সালে। এখন কুস্তিগীর বা বলির অভাবে খেলার আকর্ষণ তেমন না থাকলেও বৈশাখী মেলার আকর্ষনে অগণিত সংখ্যক লোক জড়ো হন। 

স্বাধীন দেশে নববর্ষ 

মুক্তিযুদ্ধের বছর ১৯৭১ সালে রমনার বটমূলে পহেলা বৈশাখের আয়োজন হয়নি। পরের বছর সদ্য স্বাধীন দেশে প্রথম নববর্ষে মানুষের উচ্ছাস ছিল বাঁধভাঙা। তেরো এপ্রিল রাত ১২টায় ঢাকার কিছু এলাকায় বাজি ফুটিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয়। সকাল সাতটায় সন্‌জীদা খাতুনের নেতৃত্বে ছায়ানটের শিল্পীরা রমনা বটমূলে সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে নতুন বছরকে স্বাগত জানান। ওইদিন দৈনিক বাংলার শিরোনাম ছিল, 'রক্তস্নাত বাংলায় নববর্ষ এসেছে'।

ছবি: টিবিএস

 দৈনিক ইত্তেফাক লিখেছিল: 'আজ ১লা বৈশাখ। স্বাধীন বাংলাদেশের বিমুক্ত বিশাল শ্যামল অঙ্গনে আজ স্বাধীনতা তথা মুক্তিযুদ্ধ-উত্তর বাংলাদেশের প্রথম নববর্ষ পালিত হইতেছে। বাঙ্গালী জাতীয় জীবনে আজিকার এই নববর্ষ উৎসব একটি জাতীয় উৎসব হিসাবে পরিগণিত হইয়াছে। আজ তাই সরকারী ছুটি।'

সেদিন নববর্ষ উপলক্ষে দেশের প্রধান সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচারিত হয় বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে । নববর্ষের প্রথম দিনে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে অগণিত মানুষ পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতাযুদ্ধের বীর শহীদদেও প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

 এবার স্বৈরাচার বিতাড়ন ও গণতন্ত্র আবাহন

আশির দশকে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের আমলে বর্ষবরণ উৎসবে একটি তাৎপর্যপূর্ণ সংযোজন ঘটে। আর সেটিও ছিল স্বৈরাচার বিতাড়ন ও গণতন্ত্রের আবাহন নিমিত্তে। মঙ্গল শোভাযাত্রা যুক্ত হয় বর্ষবরণ উৎসবে। বাংলাপিডিয়া থেকে জানা যায়, ঢাকা ফাইন আর্টস ইনস্টিটিউটের (এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ) তিন ছাত্র মাহবুব জামাল শামীম, মোকলেসুর রহমান ও হিরন্ময় চন্দ সর্বপ্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রার ধারণা নিয়ে আসেন। পরে ১৯৮৯ সালে তারা ও তাদের বন্ধুরা মিলে আনন্দ শোভাযাত্রা নামে শোভাযাত্রার সূচনা করেন। তবে এর অনুপ্রেরণা তারা পেয়েছিলেন ১৯৮৫ সালে যশোরে অনুষ্ঠিত একটি শোভাযাত্রা থেকে। ছাত্ররা অগণতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে একটি সাংস্কৃতিক লড়াই চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, চেয়েছিল সাধারণ মানুষের মনে উজ্জ্বল এক ভবিষ্যতের আশা জাগাতে, সেটি ছিল এমন এক সময় যখন সর্বগ্রাসী বন্যা ও সামরিক শাসনের অত্যাচারের অজস্র বেদনার্ত ঘটনায় মানুষের হৃদয় ছিল ভারাক্রান্ত।

ছবি: টিবিএস

১৯৯০ সালে শোভাযাত্রার স্লোগান ছিল, 'এসো গাহি মঙ্গলের জয়গান'। ১৯৯৩ সাল বা বাংলা ১৪০০ সনে এর নামকরণ হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। শিল্পী ইমদাদ হোসেন এবং তার বন্ধু ওয়াহিদুল হক শোভাযাত্রার নাম মঙ্গল শোভাযাত্রা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। 

বাংলাপিডিয়া থেকে আরো জানা যাচ্ছে, চারুকলা অনুষদ কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে শোভাযাত্রায় যুক্ত হতে দেয়নি, সাবেক ও বর্তমান ছাত্র-শিক্ষকেরা অর্থের জোগান নিশ্চিত করতে নিজেদের বানানো চিত্রকর্ম, সানকি, মুখোশ ও শিল্পকর্ম বিক্রি করেন। দেশের ঐতিহ্যবাহী লোকাচারের প্রসারের লক্ষ্যে মঙ্গল শোভাযাত্রায় বিভিন্ন প্রাণীর আকৃতি, হরেক রঙের মুখোশ, পুতুল ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করা হয়; যেমন ঘোড়া, পাখি, বাঘ, হাতি, পেঁচা, কুমির, টেপা পুতুল, গরুর গাড়ি, পালকি ইত্যাদি। এর মধ্যে কমপক্ষে একটি হয় দুষ্টশক্তির প্রতিরূপে, একটি লড়াই-সংগ্রামের প্রতীক, আরেকটি হয় মঙ্গলের প্রতিমূর্তি। শোভাযাত্রা প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে সঙ্গীত, নৃত্য, নাট্য প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে। অংশগ্রহণকারীদের প্রায় সবাই ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিধান করে।

ইউনেস্কোর স্বীকৃতি

২০০০ সালের পর একবার চারুকলার বর্ষবরণ উদযাপন ক্ষেত্র বাণিজ্যিক হয়ে উঠেছিল। সেবার শিক্ষার্থীদের পরিবর্তে বাইরের লোক দিয়ে এই উৎসব করা হয়। কিন্তু সাধারণ মানুষ তা প্রত্যাখ্যান করেছিল। শিল্পী ও শিল্প-লেখক সিলভিয়া নাজনীন লিখেছেন, আমাদের দেশের বিভিন্ন দেশীয় মেলা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল প্রায়, তা আবার মঙ্গল শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে উজ্জীবিত হয়েছে। শোভাযাত্রায় পেঁচা আসে লক্ষ্মীপেঁচা হয়ে, যা আমাদের কৃষিভিত্তিক সমাজের একটি ইতিবাচক প্রতীক, রাজা-রানি আসে 'আমরা সবাই রাজা'র ভাব ও অনুভব নিয়ে। সবমিলিয়ে বাঙালি চেতনার একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব এটি। ২০১৬ সালে মঙ্গল শোভাযাত্রাকে ইউনেস্কো ইনট্যানজিবল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। ইউনেস্কোর স্বীকৃতিপত্রে বলা হয়, মঙ্গল শোভাযাত্রা সমাজের সব অশুভকে দূর করে সত্য, সুন্দর ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার প্রতীক হয়ে ওঠে। 

ছবি: টিবিএস

২০০১ সালে ছায়ানটের বর্ষবরণ আয়োজনে রমনার বটমূলে একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। দুটি বোমার বিস্ফোরণে ১০ জন নিহত হয় এবং ৫০ জন আহত হয়। এত বড় দুর্ঘটনা সত্ত্বেও পরের বছর আরো সাহসিকতা ও সংঘবদ্ধতায় বটমূলে বর্ষবরণ আয়োজিত হয়।  

 এবার মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজিত হচ্ছে 'বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা' নাম নিয়ে। বিষয়টি ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেছেন, 'আমরা নাম পরিবর্তন করছি না। আমরা পুরোনো নাম এবং ঐতিহ্যে ফেরত যাচ্ছি, যেটা দিয়ে চারুকলার এই কার্যক্রম শুরু হয়েছিল।'

অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রথম শোভাযাত্রার অন্যতম সংগঠক নাজিব তারেক নাম পরিবর্তন প্রসঙ্গে বিবিসিকে বলেছেন, 'অমঙ্গল বলতে আমরা স্বাধীনতাবিরোধী বা সাম্প্রদায়িক শক্তিকে বুঝিয়েছিলাম। তাদের বিরুদ্ধে মঙ্গলের বার্তা দেওয়াকে কোনো অবস্থায়ই খারিজ করার সুযোগ নেই।' 

Related Topics

টপ নিউজ

পহেলা বৈশাখ / নববর্ষ / বাংলা নববর্ষ / পান্তাভাত / পান্তা / উৎসব

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ল উত্তরার বিমান বিধ্বস্তের দৃশ্য
  • মাইলস্টোনে আহত ছোট বোনকে একাই ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে এল কলেজপড়ুয়া রোহান
  • জামিন দিলে সব টাকা শোধ করে দেব, পালিয়ে যাব না: এক্সিম ব্যাংকের নজরুল ইসলাম
  • ৬ দফা দাবিতে মাইলস্টোন কলেজ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন
  • মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করা সেই শিক্ষক ১০০% দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন
  • সাবেক আইজিপি বেনজীরের ব্যবহৃত জিনিসপত্র নিলামে তোলা হচ্ছে

Related News

  • বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় সারাদেশে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপিত
  • পয়লা বৈশাখের সন্ধ্যায় ঢাকার আকাশে ‘ড্রোন শো’
  • ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করলেন সেনাপ্রধান, জানালেন নববর্ষের শুভেচ্ছা
  • নববর্ষে জাতির আকাঙ্ক্ষা মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া: রিজভী
  • রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে গাজায় নিহতদের স্মরণ

Most Read

1
বাংলাদেশ

সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ল উত্তরার বিমান বিধ্বস্তের দৃশ্য

2
বাংলাদেশ

মাইলস্টোনে আহত ছোট বোনকে একাই ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে এল কলেজপড়ুয়া রোহান

3
বাংলাদেশ

জামিন দিলে সব টাকা শোধ করে দেব, পালিয়ে যাব না: এক্সিম ব্যাংকের নজরুল ইসলাম

4
বাংলাদেশ

৬ দফা দাবিতে মাইলস্টোন কলেজ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন

5
বাংলাদেশ

মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করা সেই শিক্ষক ১০০% দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন

6
বাংলাদেশ

সাবেক আইজিপি বেনজীরের ব্যবহৃত জিনিসপত্র নিলামে তোলা হচ্ছে

The Business Standard
Top

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net

Copyright © 2022 THE BUSINESS STANDARD All rights reserved. Technical Partner: RSI Lab