বাজারে এখনও বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট, ৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি গুনছেন ক্রেতারা

বাজারে প্রায় একমাস ধরে চলা সয়াবিন তেলের সংকট এখনও কাটেনি। ক্রেতারা কয়েক দোকান ঘুরে ঘুরে তেল কিনতে পারছেন। সংকট থাকায় বাড়তি দামে তেল কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন আশ্বাস দিয়েছিলেন, পরবর্তী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ভোজ্যতেলের বাজার স্থিতিশীল হবে। তবে শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, কল্যাণপুর-সহ অন্তত ৫টি বাজারে খোঁজ নিয়ে ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ এখনও স্বাভাবিক হয়নি।
কল্যাণপুরে কথা হয় ক্রেতা আবু সুফিয়ান ফাহিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, "৫ লিটার তেল কিনতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ১০ দোকান ঘুরেও পাইনি। পরে ২ লিটার তেল কিনেছি ৪০০ টাকা দিয়ে, অথচ বোতলের গায়ে লেখা ৩৫০ টাকা। ৫০ টাকা বেশি রেখেছে, কিন্তু কিছুই করার ছিলনা আমার।"
তিনি বলেন, "বেশি দাম না দিলে তেল কিনতে পারবো না। আসলে আমরা পড়েছি উভয় সংকটে। একদিকে বেশি টাকা লাগছে, আরেক দিকে তেলও পাচ্ছি না।"
কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছে মুদি দোকানদার আনিসুর রহমান বলেন, "রমজানের এই সময় ক্রেতারা তেল চায়, কিন্তু দিতে পারি না। আমাদের কাছ থেকে যারা নিয়মিত বাজার করেন, তারা এখন যে দোকানে সয়াবিন তেল পান সেখান থেকে বাজার করছেন।"
"তেল কোম্পানির প্রতিনিধিরা গত এক সম্পাহ ধরে বলছেন, কালকে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাবেন। কিন্তু সেটা আর পাচ্ছি না। টাকা দিয়েও তেল পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে," বলেন তিনি।
ইয়াসিন জেনারেল স্টোরের বিক্রয় সহকারী আলী হোসেন টিবিএসকে বলেন, "তেলের দাম বাড়বে তাই বাজারে এখন সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন মিল মালিকরা। তারা বলছেন, তেল পাবেন রমজানে; তেলের সংকট হবে না।"
এদিকে, ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন গত রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, আসন্ন পবিত্র রমজান সামনে রেখে বাজারে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি ভোজ্যতেল সরবরাহ করা হচ্ছে। তাই রমজানে বাজারে ভোজ্যতেল সরবরাহে কোনো সংকটের আশঙ্কা নেই।
সংগঠনটি জানায়, সম্প্রতি বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ–ঘাটতির সংবাদে সাধারণ ভোক্তাদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় ভোক্তা ও ভোজ্যতেলের ব্যবসায়ীরা যেন আতঙ্কিত হয়ে প্রয়োজনের বেশি ভোজ্যতেল না কেনেন, সে অনুরোধ জানিয়েছে সংগঠনটি।
বাজারে অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম
রমজানের সময় পেঁয়াজের চাহিদা বেশি থাকে। এ বছর ভরা মৌসুম হওয়ার কারণে পেঁয়াজের দাম কমেছে বছর ব্যবধানে ৬৪.৫৪ শতাংশ।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুসারে, বছরের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম ৬৪.৫৪ শতাংশ কমে এখন ৪০-৪৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আর চিনি প্রতিকেজি ১৬.৯৫ শতাংশ দাম কমে ১২০-১২৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আলুর দাম ১৫.১৫ শতাংশ কমে বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকা কেজিতে।
সরু চাল (নাজির/মিনিকেট চাল) বছর ব্যবধানে ৯.০৯ শতাংশ বেড়ে দাম হয়েছে ৭০-৮৪ টাকা। মাঝারি চাল (পাইজার/আটাশ) ৬০-৬৫ টাকা; দাম বেড়েছে ৯.৮২ শতাংশ। খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৯.০৫ শতাংশ বেড়ে ১৫৫-১৬০ টাকা, আর বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটার ২.৯২ শতাংশ বেড়ে ১৭৪-১৭৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। দেশি মশুর ডাল বছরের ব্যবধানে ১.৮২ শতাংশ দাম কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৪০ টাকায়। ছোলা প্রতিকেজি ৪.৬৫ শতাংশ দাম বেড়ে ১০৫-১১০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, সবজির বাজার এখনও ক্রেতার নাগালের মধ্যে রয়েছে। বাজারে এখনও শীতকালীন সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় দামও অনেকটাই কম। প্রতিকেজি শিম মানভেদে ৩০-৫৫ টাকা, টমেটো ২০-৩০ টাকা, বেগুন ৩০-৫০ টাকা, কাঁচামরিচ ৪০-৫০ টাকা, শসা ৪০-৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া, বাজারে ফার্মের মুরগির ডিম প্রতি ডজন কেনা যাচ্ছে ১৩০-১৩৫ টাকায়। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১৯০-২০০ টাকায়। গত সপ্তাহেও এ দাম এমনই ছিল।