রাতে অবরুদ্ধের পর মেডিকেলে ভর্তি কুয়েট ভিসি, পদত্যাগের দাবিতে অনড় শিক্ষার্থীরা

শিক্ষার্থীরা অবরুদ্ধ করে রাখার পর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ। বর্তমানে তিনি অবরুদ্ধ অবস্থায় কুয়েটের মেডিকেল সেন্টারের একটি কক্ষে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
আজ বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০ টার দিকে কুয়েটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, এখনো ভিসি অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন এবং রাতভর তারা মেডিকেল সেন্টারে পাহারায় ছিলেন।
তাদের মধ্যে একজন শিক্ষার্থী বলেন, "ভিসি স্যার পালিয়ে যেতে পারেন এই আশঙ্কায় শিক্ষার্থীরা সারারাত মেডিকেলের সামনে অবস্থান নেন। এখনো আছেন। তাকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। হামলার ঘটনায় ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার সঙ্গে উপাচার্য, উপ–উপাচার্য ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালককে পদত্যাগ করতে হবে।"
এর আগে মঙ্গলবার রাত ১০ টার দিকে ভিসি ড. মুহাম্মদ মাছুদকে অবরুদ্ধ করে তাকে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলেছিলেন শিক্ষার্থীরা। তখন তিনি বলেছিলেন, "আমার কোনো ব্যর্থতা নাই। আমি কেন পদত্যাগ করবো? এরকম মারামারি টুকটাক হয়েই থাকে"।
ওই সময়ে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা তাকে লক্ষ্যে করে জুতা নিক্ষেপ করে এবং তার ওপর সামান্য হামলার ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে কুয়েটের মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করা হয়।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তাদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানোর ঘটনায় তাদের ৫ দফা দাবি এখনো বহাল রয়েছে। দাবিগুলো হলো–
১. খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী, শিক্ষা, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অধীনস্থ সকলে কুয়েটের সাথে সংযুক্ত থাকা অবস্থায়, কুয়েটের ভিতরে ও বাইরে, কোন প্রকার রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত থাকতে পারবে না, উল্লেখ করে অধ্যাদেশ জারি করতে হবে এবং এর ব্যত্যয় ঘটলে শাস্তি হিসেবে অত্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য আজীবন বহিষ্কার এবং শিক্ষার্থীদের জন্য ছাত্রত্ব বাতিল বিষয়টি স্পষ্টভাবে উক্ত অধ্যাদেশে উল্লেখ করতে হবে।
২. কুয়েটে শিক্ষার্থীদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলার ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থী এবং এদেরকে প্রশ্রয়দাতা শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে কুয়েট প্রশাসন হতে হত্যার চেষ্টা ও নাশকতার মামলা করতে হবে এবং জড়িত সকলকে বহিষ্কার এবং ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে। জড়িতদের তালিকা শিক্ষার্থীরা প্রদান করবে।
৩. আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কুয়েট শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা প্রদানের লক্ষ্যে কুয়েট ক্যাম্পাসের বাহিরে পর্যাপ্ত সংখ্যক সামরিক বাহিনীর সদস্যের সহায়তায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. হামলার ঘটনায় আহত সকলের চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্যয়ভার কুয়েট প্রশাসন থেকে বহন করতে হবে। আহতদের তালিকা শিক্ষার্থীদের থেকে প্রদান করা হবে।
৫. উপরোক্ত সকল দাবি সমূহ পূরণ করে হামলার ঘটনায় ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে, নিঃশর্ত ক্ষমা 'প্রার্থনার সাথে সাথে ভিসি, প্রো-ভিসি এবং পরিচালক: ছাত্র কল্যাণ-কে পদত্যাগ করতে হবে।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, এই সকল দাবি-দাওয়া আজ দুপুর ১ টার মধ্যে পূরণ করতে হবে এবং না পূরণ করা পর্যন্ত কুয়েটের সকল প্রকার ক্লাস, পরীক্ষাসহ সকল অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
উল্লেখ্য, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিতে শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত দফায় দফায় এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সকালে ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা প্রচারণা কার্যক্রম চালায়। এর প্রতিবাদে একদল শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন। তারা 'ছাত্ররাজনীতির ঠিকানা, এই কুয়েটে হবে না', 'রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাস চাই' বলে স্লোগান দেন। বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে পৌঁছালে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। বিকেল ৫ টা পর্যন্ত সেই সংঘর্ষ চলমান ছিল। পরে যৌথ বাহিনীর উপস্থিতিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসতে থাকে।