‘কবজি কাটা’ গ্যাংয়ের প্রধান আনোয়ারসহ গ্রেপ্তার ৩: র্যাব

সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকা থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। তারা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল বলে জানা গেছে।
র্যাবের তথ্য অনুযায়ী, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের মধ্যে আনোয়ার হোসেন (৩৬) রাজধানীর মোহাম্মদপুর-আদাবর এলাকায় সক্রিয় কুখ্যাত 'কবজি কাটা' গ্যাংয়ের প্রধান।
অন্য দুই গ্রেপ্তারকৃত হলেন— মো. ইমন (২০) ও মো. ফারিদ (২৭)। তারা দুজনই আনোয়ার হোসেনের সহযোগী।
গতকাল (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য প্রকাশ করে র্যাব।
প্রধানত কিশোর সদস্যদের নিয়ে গঠিত এই গ্যাং মোহাম্মদপুর, বসিলা ও নবীনগর হাউজিং এলাকায় চাঁদাবাজি ও ডাকাতির সঙ্গে জড়িত ছিল।
যেসব ভুক্তভোগী বাধা দেওয়ার চেষ্টা করতেন, তাদের নৃশংসভাবে আক্রমণ করা হতো। কেউ কেউ হাতের কবজি হারিয়েছেন। আতঙ্ক ছড়াতে এসব ভয়াবহ ঘটনা মোবাইল ফোনে ধারণ করে গ্রুপটি টিকটকের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড করত।
গ্যাংটির একাধিক সদস্য গ্রেপ্তার হলেও 'শুটার আনোয়ার' বা 'কবজি কাটা আনোয়ার' নামে পরিচিত আনোয়ার হোসেন দীর্ঘদিন ধরেই ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যাচেষ্টা, ডাকাতি ও চাঁদাবাজিসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
আনোয়ারের অপরাধ জগতে যাত্রা
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-২-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক মো. খালিদুল হক হাওলাদার বলেন, "আনোয়ার জীবিকার সন্ধানে ২০০৫ সালে বাগেরহাট থেকে ঢাকায় আসে। প্রথমে বিশুদ্ধ পানির সরবরাহের কাজ করলেও পরবর্তীতে ছিনতাই ও বাসস্ট্যান্ডে চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়ে। ২০২৪ সালে সে ভয়ংকর 'কবজি কাটা গ্যাং' গড়ে তোলে।"
তিনি আরও বলেন, "তার কাজে কেউ বাধা দিলে কিশোর গ্যাং সদস্যদের দিয়ে তাকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হতো। এরপর কবজি কেটে সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে আতঙ্ক তৈরি করা হতো।"
গ্যাংয়ের বিস্তার
গ্রেপ্তার এড়াতে আনোয়ার প্রায়ই গা-ঢাকা দিতেন এবং ছদ্মবেশ ব্যবহার করতেন। পরে তিনি আরও কিশোর সদস্য নিয়ে নতুন একটি গ্যাং গঠন করেন।
এই গ্যাং ঢাকা উদ্যান, চাঁদ উদ্যান, নবীনগর হাউজিং, আদাবর, শেখেরটেক ও নবোদয় হাউজিং এলাকায় সক্রিয় ছিল। তারা হত্যা, মাদক ও অস্ত্র পাচার, চাঁদাবাজি এবং ডাকাতির মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল।
র্যাবের অধিনায়ক বলেন, "আনোয়ারের বাহিনী অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে হামলা চালাত। তারা প্রথমে যানজট তৈরি করত, সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙত, রাস্তা ব্লক করত। এরপর নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে ফিল্মি স্টাইলে কুপিয়ে গুরুতর আহত করত এবং কবজি কেটে তা জনসমক্ষে প্রদর্শন করত। ভুক্তভোগীদের অনেকেই গুরুতর আহত হতেন, কেউ কেউ হাত-পা হারিয়েছেন।"
গত কয়েক হাতে অন্তত ৭-৮ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। কেউ হাত হারিয়েছেন, কেউ পা, কেউ আজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেছেন। ভয় ও হুমকির কারণে অনেকেই এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন এবং মামলা করতেও সাহস পাননি।
২০১৯ সালে আদাবর থানায় প্রথম আনোয়ারের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এরপর হত্যা, হত্যাচেষ্টা, চাঁদাবাজি, ভূমি দখলসহ বিভিন্ন অপরাধে অসংখ্য মামলা হলেও জামিনে বেরিয়ে আগের চেয়ে আরও ভয়ংকর হয়ে ওঠেন তিনি।
র্যাব-২ জানিয়েছে, আনোয়ারের কাছ থেকে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যাচাই করা হচ্ছে এবং তার দলের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত থাকবে। গ্রেপ্তারকৃত আনোয়ারের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।