প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার পরিবর্তে নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতির সুপারিশ

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও অনুরূপ পরীক্ষার পরিবর্তে একটি নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতির সুপারিশ করেছে প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মান উন্নয়ন সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটি।
এই কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ জানিয়েছেন, ধারাবাহিক ও বার্ষিক মূল্যায়ন দ্বারা প্রত্যেক শিশুর শিখন-অগ্রগতি যাচাই করতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বা এ ধরনের পরীক্ষার পরিবর্তে এন.এস.এ. (ন্যাশনাল স্টুডেন্ট অ্যাসেসমেন্ট)- এর আদলে (তবে সহজে বাস্তবায়নযোগ্য) মৌলিক দক্ষতা জরিপের মাধ্যমে প্রত্যেক বিদ্যালয়কে মান অনুযায়ী সবুজ-হলুদ-লালে চিহ্নিত করা হবে।
আর প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব হবে প্রতি বিদ্যালয়কে সবুজে রূপান্তরিত করা।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত 'প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার সার্বিক মানোন্নয়নের উদ্দেশ্যে গঠিত কনসালটেশন কমিটির প্রতিবেদন দাখিল' শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
এর আগে, বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার সার্বিক মানোন্নয়নের লক্ষ্যে গঠিত কনসালটেশন কমিটির প্রতিবেদন প্রদান করা হয়।
মনজুর আহমেদ জানান, "পরামর্শক কমিটির প্রতিবেদনে প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা সংক্রান্ত ৮টি বিষয়ে শতাধিক প্রধান ও আনুষঙ্গিক সুপারিশ প্রদান করা হয়েছে। বিভিন্ন অংশীগোষ্ঠীর সঙ্গে মতবিনিময় এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ দেশের ১১টি জেলার ১২টি উপজেলায় সরেজমিনে পরিদর্শন করে কমিটি সুপারিশমালা তৈরি করেছে। এগুলোকে আশু, মধ্যমেয়াদে ও দীর্ঘমেয়াদে করণীয় হিসেবে ভাগ করা হয়েছে।"
তিনি আরো জানান, "পর্যালোচনায় ও সুপারিশ তৈরিতে দুটি বিষয় বিশেষ বিবেচনায় রাখা হয়েছে- ১. নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও শিখন-মানের ক্ষেত্রে যে স্থবিরতা বিরাজ করছে তা দূর করা এবং ২. শিশুর শিখন, কল্যাণ ও নিরাপত্তাকে সব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রে স্থাপন করা।"
যে প্রধান আটটি বিষয় চিহ্নিত করে সুপারিশ প্রণীত হয়েছে সেগুলো হচ্ছে- শিক্ষণ-শিখন ও শিক্ষার্থী মূল্যায়ন; শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী; অভিগম্যতা, অন্তর্ভুক্তি ও বৈষম্য নিরসন; প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ও শিশুর বিকাশ; উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ও বিদ্যালয়-বহির্ভূত শিশু; শিক্ষা শাসন ও ব্যবস্থাপনা; ক্ষেত্রনির্বিশেষে ক্রস-কাটিং বিষয়; সংস্কার বাস্তবায়ন, অর্থায়ন ও পরবর্তী পদক্ষেপ।
সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখযোগ্য ১৫টি সুপারিশ তুলে ধরেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ।
এসবের মধ্যে আছে সমগ্র শিক্ষাখাতের জন্য পরামর্শক পরিষদ গঠন করা, স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠন করা, সহকারী শিক্ষক পদ বিলুপ্ত করে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান ও সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া, শিক্ষকদের বেতনকাঠামোর গ্রেড উন্নয়ন করা, বিকেন্দ্রায়নের লক্ষ্যে পাইলট প্রকল্প হাতে নেওয়া, বিদ্যালয় বহির্ভূত শিশুদের জন্য কর্মসূচি হাতে নেওয়া ইত্যাদি।
সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, "প্রধান উপদেষ্টা অত্যন্ত আগ্রহের সাথে আমাদের কথা শুনেছেন। উনি বলেছেন, এটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কিন্তু কম আলোচিত হয়।"
বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার আরো বলেন, "কমিটি যে সুপারিশ করেছে তা মানার নৈতিক দায় আমাদের আছে, কিন্তু আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। এজন্য সরকারেরও নীতিগত সিদ্ধান্তের দরকার। শিক্ষকগণের মানোন্নয়নের বিষয়ে কমিটির সুপারিশ শিক্ষকরা মেনে নিলে সেটি বাস্তবায়ন করা হবে।"
গত ২৩ সেপ্টেম্বর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদকে আহ্বায়ক করে ৯ সদস্যের এই কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- সরকারের প্রাক্তন সচিব এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক খোন্দকার মো. আসাদুজ্জামান, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলোজির রেজিস্ট্রার এবং উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর প্রাক্তন মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. রফিকুজ্জামান, প্রাক্তন অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাদ আহমেদ, গণসাহায্য সংস্থার পরিচালক (শিক্ষা) সামসি হাসান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক শিক্ষা উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ইরাম মারিয়াম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুব মোরশেদ, শিবরাম আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মো. নূরুল আলম।
কমিটিতে সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (বিদ্যালয়) মো. আসাদুজ্জামান।