রমজানের আগে বাজারে ফের সয়াবিন তেলের সংকট

রমজান শুরু হওয়ার আগে, রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে আবারও বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট দেখা দিয়েছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, আসন্ন রমজানকে কেন্দ্র করে দাম বাড়ানোর জন্যই ব্যবসায়ীরা বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে এ সংকট তৈরি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার রাজধানীর মগবাজার, কারওয়ানবাজার, শাহজাদপুরের অন্তত ১৫টি দোকান ঘুরেও বোতলজাত সয়াবিনতেল পাওয়া যায়নি।
কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী মামুন হোসেন টিবিএসকে বলেন, "সকালের দিকে কিছু তেল আসে। তবে চাহিদার তুলনায় তা খুবই কম। একদিন এক কোম্পানির ডিলার তেল দিয়ে যান। সবাই একসাথে আসেন না।"
কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছে ইয়াসিন জেনারেল স্টোরের সেলসম্যান আলী হোসেন বলেন, "বোতলজাত সয়াবিন তেল লিখে দেন নিখোঁজ। চাহিদা মতো পাচ্ছি না। আমাদের চাহিদা প্রতিদিন ১০০ লিটার, কিন্তু পাচ্ছি মাত্র ২০ লিটার তেল। গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে আমরা বোতলজাত তেল চাহিদার তুলনায় কম পাচ্ছিলাম। কিন্তু এখন সরবরাহ একেবারে বন্ধ। আমার দোকানে এখন কোনো সয়াবিন তেল নেই।"
"তেলে দাম বাড়াবে, তাই বাজারে এখন সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন মিল মালিকরা," অভিযোগ করেন তিনি।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন, "ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন, যেন সরকারের সাথে দর কষাকষি করে দাম বাড়াতে পারেন।"
"কিছুদিন আগেও দাম বাড়ানোর পূর্বে তারা বাজার থেকে তেল উধাও করে দিয়েছিলেন। গত বছরের রমজানের আগেও একই চিত্র আমরা দেখেছি। এক্ষেত্রে তাদের সর্বমোট যে ডিস্ট্রিবিউটর আছেন, তাদের মধ্যে অল্প কিছু তেল সরবরাহ করেন। এভাতে তারা সরকারকে দেখান যে, তারা ডিস্ট্রিবিউট করছেন, কিন্তু কতটুকু করছেন, তা তারা বলেন না। এর মাধ্যমেই তারা বাজারে সাপ্লাই চেইনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন," যোগ করেন তিনি।
বর্তমানে খোলা সয়াবিন তেল প্রতিকেজি ১৮৫ টাকা, খোলা পামতেল ও সুপার প্রতিকেজি ১৭৫ টাকা, বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন ৮৪০ থেকে ৮৫০ টাকা, বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন ১৭৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
তবে রোজাকে সামনে রেখে আবারও তেলের সংকটে ভুগছেন রাজধানীর মানুষ। গত নভেম্বর মাসেই বাজার থেকে উধাও হয়ে যায় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেল। এরপর ৯ ডিসেম্বর সয়াবিন তেলের দাম লিটারে বাড়ানো হয় ৮ টাকা।
এদিকে, গত জানুয়ারি মাসে সয়াবিন তেলের দাম বাড়াতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দিয়েছে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সংগঠন। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এখনও দাম বাড়ানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দাম বাড়ানোর জন্যই এখন বাজার থেকে তেল উধাও করে দেওয়া হয়েছে।
তেল কেনায় শর্ত
কারওয়ান বাজারের আনোয়ার ট্রেডার্সের বিক্রেতা মোহম্মদ জসিম উদ্দিন টিবিএসকে বলেন, "তেল নিতে চাইলে সঙ্গে পোলাও চাল, হলুদ-মরিচের গুঁড়াসহ বিভিন্ন পণ্য কেনার শর্তজুড়ে দেওয়া হচ্ছে। তবুও পাওয়া যাচ্ছে না তেল।"
তিনি আরও বলেন, "ক্রেতা যখন দুই লিটার তেল কিনতে চান, তাকে যদি বলি আপনি তেলের সঙ্গে এক কেজি পোলাও চাল কিনেন। ক্রেতা তখন আমাকে ধমক দিয়ে বলেন, তেল কিনলে কেন আমাকে বাধ্যতামূলক চাল কিনতে হবে?"
"এ কারণে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর আমাদের জরিমানা করছে, আমরা পড়ছি উভয় সংকটে," যোগ করেন তিনি।
হাতিলপুল এলাকা থেকে কারওয়ান বাজারে এসেছেন মোহম্মদ মোশারফ। তিনি বলেন, "এলাকায় যেই দোকান থেকে তেল কিনতাম সেখানে না পেয়ে কারওয়ান বাজার থেকে তেল কিনেছি। বোতলজাত ৩ লিটার সয়াবিন তেল এর দাম ৫২৫ টাকা।"
শেওড়াপাড়ার জাহানারা আশরাফি বলেন, "প্রায় ১০ দোকান ঘুরেও ১ লিটার বা ২ লিটারের বোতলজাত তেল পেলাম না। ক্রেতাদের জিম্মি করে আবার তেলের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে প্রতিষ্ঠানগুলো।"
কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছে মুদি দোকানদার আলমগীর হোসেন বলেন, "প্রতি ৩ দিন পর পর তেলের অর্ডার নিয়ে যেতেন কোম্পানি প্রতিধিনিরা। কিন্তু এখন তারা আসছে না ৭ দিন হলো।"
সবজির বাজার স্থিতিশীল
এদিকে, সবজির বাজার এখনো নাগালের মধ্যে রয়েছে। বাজারে এখনও শীতকালীন সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় দামও অনেকটাই কম। ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজিতে মিলছে নতুন আলু। পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকার মধ্যে।
কারওয়ানা বাজারের বিক্রেতা মোহম্মদ আলি বলেন, "ফুলকপি ২০ টাকা, সালগাম ২০ টাকা কেজি, সিম ২৫ টাকা কেজি।"
তবে ব্রয়লার মুরগির দাম এখনও বাড়তি। আনোয়ার ট্রেডার্সের জসিম উদ্দিন বলেন, "গতসপ্তাহের মতো প্রতিটি এককেজির মুরগি ২০০ টাকা ও দেড় কেজির উপরে ওজনের মুরগির কেজি বিক্রি করছি ১৯০ টাকা করে।"