খুচরা বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট, দাম বাড়ানোর প্রস্তাব মিল মালিকদের

ঢাকার দোকানগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে না এক লিটার ও দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল। খুচরা বিক্রেতারা অভিযোগ করছেন, মিল মালিকরা দাম বাড়ানোর জন্য বাজারে তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন।
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) কল্যাণপুর, হাতিরপুল ও মগবাজার এলাকার প্রায় ১৫টি দোকান দোকান ঘুরে দেখা গেছে, সর্বত্রই সয়াবিন তেলের ভয়াবহ সংকট।
কারওয়ান বাজারের সব দোকানেও ছিল না তেল। আর যে দোকানে আছে, সেটাও প্রয়োজনের তুলনায় কম বলে জানান বিক্রেতারা।
বোতলজান তেল না পাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ ক্রেতারা। কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছে তিনটি মুদি দোকান ঘুরেও বোতলজাত সয়াবিন তেল পাননি জ্যোতি । বিআরটিসি মার্কেটে গিয়ে জানতে পারলেন, সেখানেও তেল নেই। জ্যোতি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন , 'কিছু দোকানে ৫ লিটারের বোতলে তেল আছে, কিন্তু আমার প্রয়োজন ২ লিটার। সেটা পাচ্ছি না।'
জ্যোতি দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় দোকানদার আলমগীর হোসেন বলেন, 'আমরা তিন দিন ধরে কোনো বোতলজাত সয়াবিন তেল পাচ্ছি না। পাইকারি বিক্রেতারা বলছে, তেল সংকট। আমরা ক্রেতাদের কাছে তেল বিক্রি করতে পারছি না। যারা নিয়মিত ক্রেতা, তারা রাগ করছেন তেল কেন রাখি না আমরা।'
বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৬৭ টাকা লিটার। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, মূলত ভোজ্য তেল পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলো বোতলজাত সয়াবিন তেল বাজারে কম ছাড়ছে। তাই কোম্পানি ও ডিলার তেল সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। আর উৎপাদনকারীরা বলছে, বিশ্ববাজারে দর বাড়ার কারণে তারাও সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। তারা সরকারের কাছে তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন ।
কারওয়ান বাজারের বিক্রেতা মোহম্মদ বাবু বলেন, 'আমাদের প্রতিদিন ৪০০ লিটার তেল প্রয়োজন, কিন্তু আমরা পাচ্ছি মাত্র ৪০ লিটার।'
একটি দোকানের বিক্রয় সহকর্মী আলী হোসেন বলেন, 'আমরা দুই সপ্তাহ ধরে বোতলজাত তেল চাহিদার তুলনায় কম পেতাম। কিন্তু এখন একেবারেই সরবরাহ বন্ধ। তেলে দাম বাড়বে, তাই বাজারে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে মিল মালিকরা।'
সিটি গ্রুপের কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স ডিরেক্টর বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম ৪০ শতাংশ বেড়েছে।
'গতকাল (৫ ডিসেম্বর) ট্যারিফ কমিশন আমাদের ডেকেছিল। সেখানে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছি,' বলেন তিনি।
বিশ্বজিৎ আরও বলেন, সরকার ১০ শতাংশ শুল্ক কমালেও উৎপাদন ব্যয় বেশি। এছাড়া বর্তমান পরিস্থিতিতে লাভ হওয়ার নিশ্চয়তা না থাকায় ব্যাংকগুলো ঋণপত্র (এলসি) খুলতে ইতস্তত করছে।
তিনি বলেন, 'আমরা সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছি আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে সয়াবিন তেলের দাম বাড়াতে। আমরা এ বিষয়টির সমাধানের জন্য বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে বসব।'
গতকাল রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত শিকাগো বোর্ড অভ ট্রেডে (সিবিওটি) প্রতি পাউন্ড সয়াবিন তেলের দাম ০.৮৩ ডলারে পৌঁছেছে, যা ২ দিসেম্বরের চেয়ে ৪ শতাংশ বেশি। ২ ডিসেম্বরের সিবিওটিতে প্রতি পাউন্ড সয়াবিন তেলের দাম ছিল ০.৪১ পাউন্ড।
ভোজ্য তেলের সরবরাহ বৃদ্ধি ও দাম স্বাভাবিক রাখতে সরকার অক্টোবরে অপরিশোধিত সয়াবিন তেল, পরিশোধিত পাম অয়েল ও সয়াবিন বীজ আমদানিতে ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করে। এরপর নভেম্বরে স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে আরও ৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতি দিয়ে শুধু আমদানিতে ৫ শতাংশ রাখা হয়েছে।
ট্যারিফ কমিশনের তথ্যমতে, দেশে ভোজ্য তেলের চাহিদা বছরে ২২ লাখ টন। স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয় মাত্র ২ লাখ টন।
এদিকে কল্যাণপুরে এক কেজি খোলা সয়াবিন তেল ২০০ টাকা ও কারওয়ানা বাজারে ১৯৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
মাছের দাম সামান্য কমেছে
মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের তুলনায় দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা কমেছে।
মাঝারি আকারের চিংড়ি ৬০০-৬৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে পাবদা মাছ ৩৫০-৪০০ টাকায় বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে ৩০০-৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কাঁচামরিচ ৮০-১০০ টাকা কেজি দামে বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকা কেজি এবং লাল ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়।